মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ | Mathbaria Momin Mosque 04/05/2021


PC:


PC : Mohammad shahidullah | CC BY-SA 4.0

 

পিরোজপুর  জেলার মঠবাড়িয়ার উত্তরে বুড়িরচর গ্রামের আকন বাড়িতে কাঠের কারুকার্যমণ্ডিত মমিন মসজিদ  অন্যতম এক স্থাপত্য নিদর্শন। বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলোর মধ্যে শতবর্ষের প্রাচীন মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদের অবস্থান ২৩তম এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মুসলিম স্থাপত্যশিল্প। ১৯১৩ সালে ফরায়েজী আন্দোলনের সময় অন্যতম শীর্ঘ নেতা মৌলভী মমিন উদ্দিন আকন তৎকালীন বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠি থেকে নিয়ে আসা ২২ জন কারিগরের সাহায্যে নিজ বাড়িতে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রায় ৭ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ১৯২০ সালে ইন্দো-পারসিক আর ইউরোপীয় স্থাপত্যের মিশ্রণে তৈরি মমিন মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

 

মায়ানমার, আসাম এবং ত্রিপুরা থেকে সমস্ত মোটা দানাযুক্ত সাল, তুষার সেগুন এবং শক্তিশালী লোহা কাঠ দিয়ে মসজিদটি তৈরির জন্য কোথাও কোনও লোহার বা কাঁটাতারের ব্যবহার করা হয়নি বরং কাঠের খাঁজ এবং কাঠামোটি খাড়া রাখার জন্য বাজি ব্যবহার করা হত। মৌলভী বিভিন্ন মসজিদের নকশা এবং আর্কিটেকচার অনুসন্ধান করে তাঁর গবেষণা করেছিলেন এবং তাঁর কাজে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর নিদর্শন গড়ে তোলেন। মসজিদের নামাজ হলটি রম্বস আকারে দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট ও প্রস্থ ১৮ ফুটের ডাচ গাবল টিনশেড ছাদযুক্ত। হলটিতে দুটি আলাদা প্রবেশপথ রয়েছে এবং জানালা রয়েছে মোট ১২টি। সামনের প্রবেশ পথটি আরবি ক্যালিগ্রাফি এবং অনন্য ফুলের মোটিফ দিয়ে সজ্জিত। এর উপরের বাম কোণে চারটি খলিফার নাম এবং দরজার মাঝখানে খোদাই করা প্রথম ইসলামের কালেমা রয়েছে।

 

মমিন আকনের নাতি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ মমিন মসজিদের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরত্ব ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে “মমিন মসজিদ: স্মৃতি বিস্মৃতির খাতা” নামক একটি বই রচনা করেন। ফলে ২০০৩ সালে মসজিদটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে মসজিদের সংস্কার কাজে লোহা ব্যবহার করে মসজিদের মূল ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। আকর্ষণীয় জ্যামিতিক নকশা ও আরবি ক্যালিগ্রাফির জন্য অনেক দর্শনার্থী দূরদূরান্ত থেকে এই মসজিদটি দেখতে আসেন। উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মূল সড়কটি মমিন মসজিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সড়ক বা নৌপথে পিরোজপুর যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সাকুরা, ঈগল, দোলা, হামিম এবং বনফুল পরিবহনের বাসে মাওয়া সংলগ্ন পদ্মা নদী পার হয়ে পিরোজপুর যাওয়া যায়। আর নৌপথে, ঢাকার সদরঘাট থেকে রাজদূত, আচল, হিমাচল ও পারাবত লঞ্চে পিরোজপুরের হুলারহাট ঘাটে যাওয়া যায়। পিরোজপুর থেকে যেকোন স্থানীয় পরিবহণে মঠবাড়িয়া যেতে পারবেন। মঠবাড়িয়া থেকে মমিন মসজিদের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। মঠবাড়ীয়ার টিএন্ডটি রোড দিয়ে তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের কিছুটা সামনে এগুলেই ঐতিহাসিক মমিন মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়া বরিশাল থেকেও সহজে মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদে যাওয়া যায়। বরিশাল শহরের রুপাতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে মঠবাড়িয়াগামী বাসে তুষখালি নেমে সেখান থেকে রিক্সায় মমিন মসজিদ পৌঁছানো যায়। ঢাকা সদরঘাট থেকে তুষখালীর উদ্দ্যেশ্যে কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায়।

 

কোথায় খাবেন?

মঠবাড়িয়ায় গাজী হোটেল, ক্যাফে আড্ডা, আফজাল হোটেল, মোঘল, রাজবাড়িয়া প্রভৃতি ভালমানের কিছু রেস্তোরা রয়েছে। সুযোগ থাকলে পিরোজপুরের দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই এবং ঋতুপর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসমঞ্জুরি খেয়ে দেখতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?