ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
PC : Ku.sumon
বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট হচ্ছে রাতারগুল। এটি গোয়াইনঘাট উপজেলার সিলেট শহর জেলা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে প্রায় ৩০,৩২৫ একর জুড়ে বিস্তৃত। এই অঞ্চলের মধ্যে ৫০৪ একর বন দ্বারা আচ্ছাদিত এবং বাকি বড় এবং ছোট জলাবদ্ধ দ্বারা আচ্ছাদিত। তবে বর্ষার সময় পুরো অঞ্চলটি একই রকম দেখায়। সিলেটে রাতারগুল “সিলেটের সুন্দরবন” নামে খ্যাত। বছরের ৪-৫ মাস ধরে রাতারগুল জলাভূমিগুলি পানির তলদেশে নিমজ্জিত হয় এবং সারা বাংলাদেশ থেকে দর্শনার্থীরা নিমজ্জিত গাছগুলি দেখতে আসেন।
উত্তরে মেঘালয় থেকে নেমে আসা স্রোতস্বিনী গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওড়ের মাঝখানে জলাবন ‘রাতারগুল’। উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্যমতে সারা পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি যার ভারতীয় উপমহাদেশ আছে এর দুটি, একটা শ্রীলংকায় আর আরেকটা আমাদের রাতারগুলে। অনেক পর্যটক আবার রাতারগুলকে “বাংলাদেশের আমাজন” নামেও অভিহিত করেন। বর্ষার সময় গাছের ডালে প্রচুর প্রজাতির পাখি থাকে এবং অনেক বন্য প্রাণীও গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও শীতকালে এখানে প্রচুর প্রজাতির পাখি আনাগোনা হয়। রাতারগুল দেখার উপযুক্ত সময় বর্ষার শেষে (জুলাই থেকে অক্টোবর)। ১৯৭৩ সালে, বাংলাদেশ বন বিভাগ বন্যজীবন সংরক্ষণের জন্য ৫০৪ একর রাতারগুল বন ঘোষণা করেছিল।
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটিগাছ ‘রাতাগাছ’ নামে পরিচিত। সেই মুর্তা অথবা রাতাগাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল। অ্যামাজনের মতোই গাছগাছালির বেশির ভাগ অংশই বছরে চার থেকে সাত মাস থাকে পানির নিচে। ভারতের মেঘালয়ের জলধারা গোয়াইন নদীতে এসে পড়ে, আর সেখানকার এক সরু শাখা চেঙ্গী খাল হয়ে পানিটা প্লাবিত করে পুরো রাতারগুল জলাবনকে। এই প্রাকৃতিক বনে সংযোজন দিতে স্থানীয় বন বিভাগ হিজল, বোরুন, কোরচ সহ অনেক গাছ লাগিয়েছিল। এছাড়াও, কোডোম, জালিবেথ, অর্জুন সহ ২৫ প্রজাতির জল-প্রতিরোধী গাছগুলি এখানে লক্ষ্য করা যায়।
বনের ভেতর দাঁপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোঁদড়, বনবিড়াল, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউস, রুইসহ আরো অনেক জাতের মাছ পাওয়া যায় এই বনে। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানি বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নিয়ে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আপনাকে উড়ে সরে গিয়ে পথ করে দেবে। এ দৃশ্য আসলেই দুর্লভ!
কিভাবে যাবেন?
সিলেট থেকে দুই ভাবে রাতারগুল আসা যায়। সিলেট শহরের পাশের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে খুব অল্প সময়ে রাতারগুল পৌঁছানো যায়। এই পথে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা জিপ নিয়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ যেতে হয়। সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। তাই সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা অটোরিকশার ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে। সারাদিন সিএনজি ভাড়া নিলে প্রায় একই ভাড়ায় বিছনাকান্দিও ঘুরে আসতে পারবেন। যদি সিলেটের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজি চড়ে যেতে চান তবে শ্রীঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত আসতে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া লাগবে। সিএনজি রিজার্ভ করতে অবশ্যই দামাদামি করে নিন। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাতারগুল জঙ্গলে ঢুকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাবেন। একটি ছোট নৌকায় ৪-৫ জন চড়া যায়। এমন একটি নৌকার ভাড়া ৮৫০ টাকা। রাতারগুলে লাইফ জ্যাকেট, ছাতা এবং মাঝির হ্যাট ইত্যাদি ভাড়া পাওয়া যায়।
রাতারগুল যাওয়ার দ্বিতীয় পথে সিলেট হতে জাফলং গামী গাড়িতে গিয়ে সারিঘাট নামতে হবে। সিলেট থেকে সারিঘাট আসার লোকাল ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সারিঘাট হতে সিএনজিতে করে গোয়াইনঘাট বাজারে এসে নৌকা দিয়ে রাতারগুল যেতে হবে। তবে এ পথে সময় বেশি লাগে।
এছাড়া সিলেটের বন্দর বাজার পয়েন্ট থেকে সিএনজি যোগে সাহেব বাজার হয়ে মটরঘাট পৌঁছে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে রাতারগুল জলাবনে চলে যেতে পারবেন।