ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
নওগা জেলাস্থ ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান (Altadighi National Park) অবস্থিত। ধামইরহাট হতে গ্রামের আধা পাকা রাস্তা ধরে যতই এগিয়ে যাওয়া যায় ততই গাছগাছালি ঘেরা সবুজ প্রকৃতির মুগ্ধতাকে উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিছুদূর গেলে দেখা যাবে রাস্তার দুই পাশে শালবন। এখানে দেখা যাবে বরেন্দ্রভূমির লালমাটির সৌন্দর্য। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ শালবন বর্তমানে সরকারিভাবে সংরক্ষিত। বনের মধ্যে হাঁটলে দেখা যাবে, সূর্যের আলো সরাসরি মাটিতে পড়তে না পেরে গাছের পাতা ভেদ করে বনের ভেতর চাঁদের আলোর মতো রূপ নিয়েছে।
আলতাদীঘির নামকরণেও রয়েছে ঐতিহাসিক মজার ঘটনা। হাজার বছর আগে এ এলাকা ছিল বটু রাজার। জগদ্দলে ছিল সেই রাজার বাড়ি। রানী একদিন আবদার করলেন, তাকে বড় এক দীঘি খুঁড়ে দিতে হবে। রাজা বললেন, ঠিক আছে। তুমি হাঁটতে শুরু কর। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ফেটে রক্ত বের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এখান থেকে হাঁটা শুরু করে যেখানে গিয়ে পা থেকে রক্ত বের হবে সেই পর্যন্ত দীঘি কাটা হবে। রানী হাঁটতে থাকলেন। হাঁটা আর শেষ হয় না। রাজা পড়ে গেলেন চিন্তায়। শেষ পর্যন্ত পাশের দেশে গিয়ে দীঘি কাটতে না হয়। তাই কৌশলে তার সৈন্য দিয়ে রানীর পায়ে আলতা লাগিয়ে বললেন, রানীর পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। দীঘি সে পর্যন্তই খোঁড়া হল। আর সে থেকেই এর নাম হয়েছে আলতাদীঘি। প্রায় হাজার বছরের স্মৃতি নিয়ে আজও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী আলতাদীঘি।
আলতাদীঘি এর নামেই গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে আলতাদীঘি। গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি মাটির তৈরি। আবার অনেকে মাটি দিয়েই দোতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। গ্রাম পার হয়ে আলতাদীঘি। এত প্রাচীন আর এমন বিশাল দীঘি বাংলাদেশে আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ দীঘির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, চওড়া প্রায় ৪০০ মিটারের মতো। গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত আছে বৌদ্ধ যুগের কীর্তি এটি। দীঘির পাড় ঘেঁষে ভারত সীমান্ত। উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, বিএসএফের সীমান্ত টইল, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে দেখা খুবই সহজ। আলতাদীঘির পাড়ে দাঁড়ালে মনে হবে অনেকটাই সুন্দরবনের মতো, শীতের সময় অতিথি পাখির আগমন ঘটে। দাঁড়টানা নৌকা আছে। ইচ্ছা হলে কিছুক্ষণের জন্য নৌভ্রমণও উপভোগ করা যাবে।
আলতাদিঘীতে প্রায় ৫৫ প্রজাতির দেশীয় মাছ ও প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির অন্যান্য জলজ প্রাণী রয়েছে। এর অদূরেই রয়েছে পাল শাসনামলে নির্মিত জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার। সেখানে বিষ্ণু, শিব ও কারুকার্যখচিত কষ্টিপাথরের নারীর মুখমণ্ডলের প্রতিকৃতি দেখতে পাওয়া যায়। দীঘির পাশেই রয়েছে কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস। একতলা, দোতলা ঘর দেখতে দেখতে গ্রামের ভেতরটা ঘুরে যেতে পারেন। গ্রামের আদিবাসী গোষ্ঠীর জীবনধারা আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও বৈচিত্র্যময় করবে। বর্তমানে আলতাদীঘিকে কেন্দ্র করে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে।
কিভাবে যাবেন?
নওগাঁ জেলা সদরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে বাসে চড়ে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ধামইরহাট আসতে হবে। ধামইরহাট থেকে আলতাদীঘি যাওয়ার রিকশা ও ভ্যান পাবেন।
কোথায় থাকবেন?
ধামইরহাটে তেমন ভালো আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা নেই। নিজের পছন্দমত আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চাইলে আপনাকে নওগাঁ জেলা সদরে থাকতে হবে। নওগাঁতে হোটেল প্লাবন, হোটেল যমুনা, হোটেল অবকাশ, মল্লিকা ইন, হোটেল ফারিয়াল ও হোটেল রাজ প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন?
বালুডাঙ্গা বাস ষ্টেশনে সাধারণ মানের খাবারের দোকান রয়েছে। এছাড়া নওগাঁর গোস্তহাটির মোড়ে ভালমানের কয়েকটি রেস্তোরাঁ পাবেন।