আতিয়া জামে মসজিদ | Atiya Jame Mosque 27/12/2021


PC:


শাড়ি ও চমচমের জন্য বিখ্যাত টাঙ্গাইল জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি নান্দনিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর মধ্যেই উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঐতিহাসিক আতিয়া জামে মসজিদ।  টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার আতিয়া গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছর পুরনো একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হচ্ছে আতিয়া মসজিদ। শহর থেকে মসজিদটির দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার।  মজার ব্যাপার হলো, পুরাতন দশ টাকার নোটের ডানদিকে যে মসজিদটির ছবি রয়েছে সেটাই এই আতিয়া মসজিদ।

 

পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চলে আদম শাহ্ বাবা কাশ্মিরী নামে বিখ্যাত এক সুফি ধর্মপ্রচারক এখানে আগমন করে বসবাস করতে থাকেন এবং ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। এই সাধকের মাজার এই আতিয়াতেই অবস্থিত। তিনি বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসায়েন শাহ কর্তৃক আতিয়ার জায়গিরদার নিযুক্ত (১৫৯৮ সালে) হয়েছিলেন বলে জানা যায়। ঐ সময় কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে তাঁর ধর্মীয় কার্য পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের জন্য বিশাল একটি এলাকা বা মহাল ওয়াকফ্ হিসাবে পান। তাঁকে এ এলাকা দান করা হলে এ দান বা ‘আতা’ থেকে সম্ভবত এ পরগণার নাম ‘আতিয়া’ হয়েছে।

 

শাহ্ বাবা কাশ্মিরী বৃদ্ধ বয়সে তাঁর পরামর্শে প্রিয় ভক্ত সাঈদ খান পন্নীকে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা নিয়োগ করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। সাঈদ খান পন্নী ১৬০৮ সালে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি দেলদুয়ার উপজেলা তথা টাঙ্গাইল জেলার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি মুহাম্মদ খাঁ।এ মসজিদটি নির্মাণের পর ১৮৩৭ সালে রওশন খাতুন চৌধুরাণী ও ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ খান গজনবী সংস্কার করেন।

 

অসংখ্য ফুলের অলংকরণের কারণে আতিয়া মসজিদ বেশ দৃষ্টিনন্দন। এই ধরনের অলংকরণ ষোল শতকে নির্মিত গৌড়ের জাহানিয়া মসজিদ ও কদম রসূল ইমারতে পরিলক্ষিত হয়। আতিয়া মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য যেটি আপনার নজর কাড়বে তা হল এর কুঁড়ে ঘরের কার্নিশের ন্যায় ধনুক বক্রাকার কার্নিশ যা সম্পূর্ণরূপে বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যরুপে পরিগণিত হয়। লাল ইটে তৈরি এই মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী অত্যন্ত চমৎকার। মসজিদটি মূলত বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট। এছাড়া, পূর্ব দিকে অপেক্ষাকৃত ছোট তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার বারান্দা রয়েছে। বারান্দা থেকে মসজিদে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ। মসজিদের কিবলা দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত মেহরাব। আতিয়া মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দেয়ালে দেখতে পাবেন চমৎকার সব পোড়ামাটির নকশা। এতে টেরাকোটা ও ইট খোদাই নকশাতে চমৎকার আঞ্চলিক মোটিফ দ্বারা অলঙ্করণ লক্ষণীয়।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিরালা, বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী ইত্যাদি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে ছেড়ে যায়। টাঙ্গাইলের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে পাথরাইল বটতলা আসতে হবে। অটোরিকসা জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নিবে। বটতলা থেকে সিএনজি, রিকশা বা পায়ে হেটে আতিয়া মসজিদে যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

টাঙ্গাইলে থাকার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ ও এলজিইডির সরকারি রেস্ট হাউজ আছে। সেগুলিতে যোগাযোগ করে থাকতে পারবেন। আর যদি হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চান তবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ের দিকে বেশ কিছু বিভিন্ন মানের হোটেলে রাতে থাকতে পারবেন।

 

কি খাবেন?

টাঙ্গাইল খাওয়ার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে শহরের নিরালা মোড়ে অবস্থিত হোটেল নিরালা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। নিরালা মোড়ের কাছাকাছি দূরত্বে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম খেতে ভুলে যাবেন না।

 

 

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?