হরিপুর রাজবাড়ি | Haripur Palace 22/01/2022


PC:


বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য আর অন্যতম একটি অংশ রাজবাড়ি। বাংলার প্রায় প্রতিটি জেলা শহরেই বিভিন্ন সময়কার রাজাদের নিদর্শন সম্বলিত রাজ বাড়ি গুলো এখন সগৌরবে দাড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হল ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর রাজবাড়ি (Haripur Palace)। ঘন শ্যাম কুণ্ডের বংশধর রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী ১৮৯৩ সালে নির্মিত হরিপুর জমিদার বাড়ির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেও পরবর্তীতে তারই পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী কতৃক জমিদার বাড়ীর কাজ সম্পন্ন হয়।

 

কথিত আছে, মুসলিম শাসন আমলে আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। তখন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তাঁর বাড়ি মেদিনীসাগর গ্রামে। জমিদারির খাজনা দিতে হতো তাজপুর পরগনার ফৌজদারের নিকট। খাজনা অনাদায়ের কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন। ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বৃটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর সময়ে রাজবাড়ির কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন।

 

জগেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী বৃটিশ সরকার কর্তৃক রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সে সময়ে বৃটিশ সরকার তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই সামন্তপ্রভুদের বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করে খুশি করতে চাইতেন। জগেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীকে এই একই উদ্দেশে রাজর্ষি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন সত্য। কিন্তু এই উপাধি প্রদানের ক্ষেত্রে সম্ভবত আরো একটি বিষয় কাজ করেছিলো। আর সেটি হলো তাঁর বিদ্যানুরাগ ও শিল্প সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপারে আগ্রহ। রাজর্ষি জগেন্দ্রনারায়ণ যেমন আকর্ষণীয় স্থাপত্য শৈলীর প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন তেমনি তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাজর্ষির এই অনুরাগ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে তা নয়, সমগ্র হরিপুরবাসীর মানসিক ঐশ্বর্যের উজ্জ্বল দিকটিকেও তুলে ধরে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার এই ধারায় যে আলোকিত জীবনের আকাঙ্ক্ষা সেদিন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিলো তা আজো অনেকটাই বহমান রয়েছে এই হরিপুরে।

 

এক শতাব্দীরও পুরনো হরিপুর রাজবাড়ির দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে প্রাচীন অনেক নিদর্শন ফুটে উঠেছে। লতা পাতার নকশাকৃত দ্বি-তল এই জমিদার বাড়ীর পূর্ব দেয়ালে রয়েছে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চোদ্দটি আবক্ষ মূর্তি। পূর্ব পাশে রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো টেরাকোটার নকশাকৃত শিব ও নাট মন্দির। ১৯০০ সালে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হবার কারনে হরিপুর রাজবাড়ী বড় তরফের রাজবাড়ী ও ছোট তরফের রাজবাড়ী হিসেবে দুটি অংশে ভাগ হয়ে যায়। রাঘবেন্দ্র-জগেন্দ্র নারায়ণ রায় কর্তৃক নির্মিত রাজবাড়িটি বড় তরফের রাজবাড়ি নামে পরিচিত। এই রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে নগেন্দ্র বিহারী রায় চৌধুরী ও গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরী ১৯০৩ সালে আরেকটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন যার নাম ছোট তরফ। বর্তমানে পরিত্যক্ত হরিপুর রাজবাড়ির বিভিন্ন কক্ষ স্থানীয় মহিলা সমিতি, ভূমি অফিসার্স সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

 

কিভাবে যাবেন?

ঠাকুরগাঁও থেকে বাস বা অটোরিকশায় হরিপুর উপজেলার রাজবাড়ি যেতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

ঠাকুরগাঁওয়ের নর্থ সার্কুলার রোডে হোটেল সালাম ইন্টার ন্যাশনাল, হোটেল প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শাহ্‌ জালাল ও হোটেল সাদেকের মতো বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। এছাড়া সরকারী সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজে যাত্রিযাপন করতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার আটঘারিয়া বাজার ও পাঁচঘরিয়া বাজারে খুচরা চা ও নাস্তা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?