ইটনা শাহী মসজিদ | Itna Shahi Masjid 13/01/2022


PC:


বিস্তীর্ণ এই অংশ বেশ অনেকটা সময়জুড়ে মোঘল সম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। বিভিন্ন মোঘল বাদশাগণ হিন্দু অধ্যুষিত এই এলাকা শাসন করে গেছেন। তাদের সেই শাসনামলে এই পুরা অঞ্চলজুড়ে নির্মিত হয়েছে মোঘল স্থাপত্যরীতির অসংখ্য মসজিদ, দুর্গ, কেল্লা এবং প্রাসাদ। ইটনা শাহী মসজিদ  (Itna Shahi Masjid) কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলায় অবস্থিত। মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ইটনা শাহী মসজিদটি একটি বেদির উপর স্থাপিত। স্থানীয়দের মধ্যে এই মসজিদের নাম নিয়ে দ্বৈত মত দেখা যায়। কেউ কেউ এটাকে বলেন গায়েবী মসজিদ, আবার অনেকে বলেন তিন গম্বুজ মসজিদ।

 

আনুমানিক ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই অঞ্চলে মোঘল আধিপত্য বিনষ্ট হওয়ার পরে মজলিশ দেলোয়ার এই হাওড় অঞ্চলে তার প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মজলিশ দেলোয়ার ছিলেন বার ভুইয়াদের মধ্যে অন্যতম ঈসা খাঁর একজন সভাসদ। সেই আমলে একই সাথে এটি মসজিদ এবং তার জমিদারির প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যাবহার করা হত। পরবর্তীতে ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা পুনরায় মোঘল সম্রাজ্যের অধীনে চলে গেলে মজলিশ দেলোয়ারের জমিদারি এবং সেই সাথে মসজিদ হাতছাড়া হয়ে যায়। দীর্ঘকাল পরে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে মজলিশ দেলোয়ারের দুই দৌহিত্র ফতেহ খান এবং জালাল খান ১৯ কোষা নজরানার বিনিময়ে শাহী ফরমান অনুযায়ী তৎকালীন জয়নশাহী পরগণা তথা বর্তমান ইটনার দেওয়ানী লাভ করেন এবং একই সাথে মসজিদের দখলও ফিরে পান। বংশানুক্রমে উনিশ শতকের শেষ অবধি এই দেওয়ানী টিকে ছিল।

 

মসজিদে রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ, যার মধ্যে মাঝেরটি প্রধান, এবং ভেতরে রয়েছে তিনটি মেহরাব। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ২৪ মিটার লম্বা, প্রস্থ্যে সাড়ে ৯ মিটার প্রশস্ত এবং কার্নিশ পর্যন্ত এর উচ্চতা ৬ মিটার। মসজিদের দেওয়াল গলি প্রায় ২ মিটার সমান চওড়া। সামনে রয়েছে ১৩ মিটার প্রশস্ত একটি খোলা বারান্দা। বারান্দা এবং মসজিদের প্রবেশের জন্যে রয়েছে দুটি তোরণ। মসজিদের সাথেই রয়েছে এক বিশাল দীঘি। মূল কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে মসজিদটিতে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে।  কিছুটা অপরিকল্পিত ভাবে মেরামত করায় মসজিদের গায়ে থাকা শিলালিপি সিমেন্টের প্রলেপের নিচে ঢাকা পড়ে গেছে। তবুও মসজিদটির পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে মোঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ যা এটিকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে শেষ বংশধরেরা থাকলেও মসজিদটির সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের উপর।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা হতে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ: কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে দুপুর ১১ টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে পারবেন। ট্রেনের টিকেট কাটতে শ্রেনী ভেদে ১২৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকা লাগবে। এরপর ইজিবাইক দিয়ে মাত্র ৫ টাকা ভাড়ায় কিংবা ৫ মিনিট পায়ে হেঁটে আসতে হবে শহরের একরামপুর মোড়ে।

 

ঢাকা থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ: মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জ গামী যেকোন বাসে করে কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাস চলে আসুন। ইজিবাইক দিয়ে আসতে হবে শহরের একরামপুর মোড়ে। ইজিবাইকে ১৫ টাকা ও রিক্সায় ৩০ টাকা ভাড়া লাগবে।

 

একরামপুর মোড় থেকে সিএনজি কিংবা মহেন্দ্রতে চড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় চামটাঘাট আসতে হবে। একরামপুর থেকে চামটাঘাটের দূরত্ব বিশ কিলোমিটার। চামটাঘাট থেকে ইটনা যাবার জন্য ট্রলারে পাওয়া যায়। ট্রলারে করে ইটনা যেতে ৫০ টাকা ভাড়া লাগে, আর সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। ইটনা ঘাট থেকে বড়হাটি ইটনা শাহী মসজিদে রিক্সায় বা পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

পর্যটকদের জন্য ইটনায় বলার মত তেমন কোন আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। সম্প্রতি কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে। তাই ভাল মানের হোটেলে রাত্রি যাপনের জন্য আপনাকে কিশোরগঞ্জ জেলায় ফিরে আসতে হবে। চামটাঘাট থেকে সারাদিনের জন্য নৌকা রিজার্ভ নিলে সবগুলো জায়গা একদিনে ভ্রমণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ট্রলারের সাইজ অনুযায়ী ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা ভাড়া লাগবে। কিশোরগঞ্জ শহরে বিভিন্ন মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে গাংচিল, ক্যাসেল সালাম, রিভারভিউ, উজান ভাটি উল্লেখযোগ্য।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?