শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক | Martyred Freedom Fighter's Memorial 23/01/2022


PC:


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙ্গালি জাতির মুক্তির লড়াই। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে দেশের প্রতিটি জেলার মানুষজন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কুড়িগ্রাম জেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িগ্রামে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কতৃক বর্বোরোচিত হামলায় শহীদদের স্মরণে শহরের ঘোষপাড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক (Martyred Freedom Fighters' Memorial) নির্মাণ করা হয়েছে।

 

জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর গোটা দেশের মতো উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে কুড়িগ্রামবাসী। ৩০ মার্চ রংপুরের তৎকালীন ইপিআর উইং-এর সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেস কুড়িগ্রামে আসেন। তার নির্দেশেই রংপুরের ইপিআর উইং-এর অধীনস্থ অধিনায়ক নায়েক সুবেদার বোরহান উদ্দিন তাদের সহযোদ্ধাদের নিয়ে কুড়িগ্রামে আসেন এবং অবস্থান নেন। ৩১ মার্চ কুড়িগ্রামে স্থানীয় পুলিশ, আনসার, ছাত্র-জনতা এবং ইপিআরদের নিয়ে একটি সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলা হয়। ১ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে তিস্তা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা একটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলেন। ৩ এপ্রিল সেখান থেকেই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তিস্তা নদীর কাউনিয়া অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে। পাকিস্তানি বাহিনী তিস্তা ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা লালমনিরহাট দখল করলে মুক্তিযোদ্ধারা ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রামে এসে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেন।

 

পাকিস্তানি বাহিনী সাঁজোয়া বহর নিয়ে লালমনিরহাট এবং রংপুর থেকে কুড়িগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। অনেকটা বিনা প্রতিরোধেই বিকালে পাকিস্তানি বাহিনী কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। তারা বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনে এসে পজিশন নিয়ে তৎকালীন কুড়িগ্রাম উপ-কারাগারে অতর্কিতভাবে হানা দেয়। সেসময় উপ-কারাগারে কর্তব্যরত এক নন বেঙ্গলি জমাদারের সহায়তায় উপকারাগারের ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহ ও পাঁচজন কারারক্ষীকে পাকিস্তানি বাহিনী ডেকে নেয় এবং বর্তমান সার্কিট হাউসের সামনের রাস্তার পূর্ব প্রান্তে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। শহীদ হন কারারক্ষী লাল মোহাম্মদ, আনসার আলী, সাজ্জাদ হোসেন এবং জহির উদ্দিন। জেল ব্যারাকের পেছনে মূল কারা প্রাচীরের ঠিক পূর্ব দিকে একটি বড় গর্ত করে কারা রক্ষীদের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থাতেই চার শহীদদের দাফন করা হয়। আরেক শহীদ জেল-ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহকে সমাহিত করা হয় কারাগারের পশ্চিম প্রান্তে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুস ছালামের বাড়ির উঠানে।

 

জেলা ইন-চার্জসহ চারজন শহীদ আজও কুড়িগ্রামের ইতিহাসে উজ্জ্বল। তাঁরা কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম শহীদ। তাঁদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক’। একসময় অবহেলায়, অযত্নে পড়ে থাকলেও এখন অবস্থা বদলেছে। লাল রঙের দুইটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে রয়েছে। উপরে বড় বড় করে লেখা 'শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক'। সবার উপরে রয়েছে একটি তেজস্বী সিংহের ভাস্কর্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও নির্ভীকতার সাথে এই ভাস্কর্য যেন একদম সামঞ্জস্যপূর্ণ। পুরো স্মৃতি ফলকের স্থান ইস্পাতের রেলিং দিয়ে ঘেরা এবং সামনে রয়েছে ছোট দরজা। ভেতরে রয়েছে লাল-সবুজ পতাকা। পতাকায় রয়েছে কুড়িগ্রামের সকল শহীদদের নাম। মহান মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাঁদের ত্যাগ কখনও ভোলা সম্ভব নয়। তাই তো স্মৃতি ফলকের সামনে দাঁড়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধায় মন  ভরে যায়। কুড়িগ্রাম এলে এই স্মৃতি ফলক দেখতে ভুলবেন না। অবশ্যই ঘুরে যাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি জড়িত এই স্থান থেকে।

 

কিভাবে যাবেন?

কুড়িগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে যেতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়া ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে বিভিন্ন মানের কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল অর্নব প্যালেস, হোটেল ডিকে, হোটেল স্মৃতি, হোটেল নিবেদিকা ও হোটেল মেহেদী উল্লেখযোগ্য।

 

কোথায় খাবেন?

কুড়িগ্রামের শাপলা মোড়ে অবস্থিত নান্না বিরিয়ানি বা এশিয়া হোটেলের খাবার বেশ জনপ্রিয়। সিদল ভর্তা ও তিস্তা নদীর বৈরাতী মাছ কুড়িগ্রামের বিখ্যাত খাবার।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?