মথুরাপুর দেউল | Mathurapur Deul 12/01/2022


PC:


PC:Amdadul Hasan

ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি আনুমানিক ষোলশো শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়, তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা। এই দেউলটি ফরিদপুর-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত যার বিপরীত দিক দিয়ে বয়ে গেছে চন্দনা নদী। সমগ্র মঠ জুড়ে শিলা খন্ডের ছাপচিত্রের পাশাপাশি মাটির ফলকের তৈরী অসংখ্য ছোট ছোট মুর্তির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এসব মুর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে নৃত্যরত নর-নারী, মস্তকবিহীন মানুষের প্রতিকৃতি, তীর ধনুক হাতে হনুমান, পেঁচা, ঘোড়া ইত্যাদি।

 

কিংবদন্তি রয়েছে যে, মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ রাজা প্রতাপাদিত্যকে যুদ্ধে পরাজিত করে এটি নির্মাণ করেছিলেন। মানসিংহের সাথে প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে মানসিংহের জয়লাভ ইতিহাসের বিচারে সত্য নয়। ১৬১২ সালে প্রতাপাদিত্যের সাথে সুবেদার ইসলাম খানের ভাই এনায়েত খানের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজয় বরণ করলে তাকে দিল্লিতে নেয়া হয়, এ অবস্থায় বোঝা যায় রাজা প্রতাপাদিত্য মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। আবার মানসিংহ এতদাঞ্চল ছেড়ে যান ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং তিনি মারা যান ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে। অতএব দেখা যায়, দুজনের কেউ এই মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। তবে ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে গভর্নর সংগ্রাম সিংহ দেউলটি বিজয়স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্যই নির্মাণ করেছিলেন। আবার জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে সংগ্রাম সিং নামের এক সেনাপতি মথুরাপুর দেউল নির্মাণ করেন৷ ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিং অত্র এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব লাভ করেন।

 

দেউলটি বারো কোন বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে প্রায় ২১.২ মিটার উঁচু। দেউলটিতে দুইটি প্রবেশ পথ আছে, একটি দক্ষিণ মুখী অন্যটি পশ্চিম মুখী৷ এর ভিতর একটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে ভুল হবে না৷ এটি একটি রেখা প্রকৃতির দেউল৷ ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনা গুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউল সম্ভাবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল৷ দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত, যা আলোছায়ার সংমিশ্রণে এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে৷ পুরো স্থাপনা জুরে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাংকণ রয়েছে৷ বে দেউলটির কোথাও কোন লেখা পাওয়া যায়নি৷ বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য বৈশিষ্ঠ বহন করে৷ ২০১৪ সালে মথুরাপুর দেউলটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কতৃক জাতীয় পুরাকীর্তি স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়৷

 

কিভাবে যাবেন?

ফরিদপুর থেকে মধুরাপুর দেউল যেতে হলে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে মধুখালী উপজেলা যাওয়ার বাসে চলতে হবে। অথবা মাগুরা কিংবা ঝিনাইদহ জেলায় যাতায়াতকারী বাসেও মধুখালী বাজার যেতে পারবেন। মধুখালী বাজার থেকে রিকশায় করে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবেন ঐতিহ্যবাহী মথুরাপুর দেউল।

 

কোথায় থাকবেন?

ফরিদপুর শহরে বেশ কয়েকটি মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল আছে। এদের মধ্যে হোটেল র‍্যাফেলস, জে কে ইন্টারন্যাশনাল, পদ্মা হোটেল এবং হোটেল ঝিলভিউ অন্যতম।

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?