বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ | Mausoleum of Bangabandhu 13/01/2022


PC:


PC:Shek Hasan

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণেই বিশেষায়িত টুঙ্গিপাড়া। গ্রিক স্থাপত্য শিল্পরীতির ছোঁয়ায় লাল সিরামিকের ইট এবং সাদা-কালো টাইলস যেন হয়ে উঠেছ বেদনার প্রতীক। কমপ্লেক্সের সামনের উদ্যান পেরিয়ে গেলেই বঙ্গবন্ধুর কবর চোখে পড়ে। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গীপাড়া গ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাদপুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধটি (Mausoleum of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman) অবস্থিত।

 

গ্রামটি পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হলেও গ্রামের নামেই উপজেলা সদরের নাম হয়েছে টুঙ্গীপাড়া। এই টুঙ্গীপাড়াতেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে মৃত্যুহীন প্রাণ নিয়ে জন্মমাটি টুঙ্গীপাড়ায় ফিরে আসেন তিনি। পরদিন পারিবারিক কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর দাফনকার্য সম্পাদন করা হয়। কবরের পাশেই রয়েছে তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের কবর। আর এই তিন কবরকে ঘিরেই মূল টম্ব নির্মাণ করা হয়েছে।

 

১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই সমাধিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাইগার নদীর পাড়ে ৩৮.৩০ একর জমির ওপর ১৭ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ সমাধিসৌধ নির্মাণ করে। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন।

 

সমাধিসৌধের উপরে সাদা পাথরের তৈরী গোলাকার একটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের দেয়াল জাফরি কাটা, আর এই জাফরি কাটা অংশ দিয়েই সমাধিস্থলে সূর্যের আলো প্রবেশ করে কাচের কারুকাজের মধ্য দিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, পাঠাগার, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর, উন্মুক্ত মঞ্চ, স্যুভেনির কর্নার, ফুলের বাগান এবং কৃত্রিম পাহাড়। প্রদর্শনী কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের নানা পর্যায়ের আলোচিত্র ছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা শিল্পকর্ম। এ ছাড়া মুক্তিসংগ্রামের নানা পর্যায়ের দেশ ও বিদেশ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র। বঙ্গবন্ধুকে যে কফিনে করে ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে সযত্নে।

 

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমাধিসৌধ খোলা থাকে। পাঠাগার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’। সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স শুধু নয়, এর আশপাশের এলাকায় আরও অনেক কিছুই দেখার রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, শেখ বাড়ি জামে মসজিদ (স্থাপিত হয়েছে ১৮৫৪ সালে) ইত্যাদি। আছে হিজলতলা ঘাট, যেখানে বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় গোসল করতেন। দেখা মিলবে শেখ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী একটি বড় ও একটি ছোট আকারের পুকুরের।

 

কিভাবে যাবেন?

গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম এবং পুলিশ লাইন মোড় থেকে ৩০ মিনিট বিরতিতে লোকাল বাস টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসের ভাড়া লাগে ৪০ টাকা। গোপালগঞ্জ সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধে যেতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া লাগে।

 

কোথায় থাকবেন?

গোপালগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকার জন্য হোটেল পলাশ, হোটেল রানা, হোটেল তাজ, হোটেল সোহাগ, হোটেল রিফাত এবং হোটেল শিমুল নামে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ধরণ এবং মান অনুযায়ী এসব হোটেলে রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া থাকার জন্যে আছে গোপালগঞ্জের জেলা পরিষদ কটেজ এবং গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউজ।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?