নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়ি | Nihar Ranjan Gupta's House 18/01/2022


PC:


নড়াইল জেলা শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে নিহাররঞ্জন গুপ্তের (Nihar Ranjan Gupta) পৈত্রিক নিবাসের অবস্থান। প্রায় ৭০ শতক জায়গার উপর নির্মিত গাছগাছালিতে ঘেরা দ্বিতল বাড়ির উত্তর দিকের দোতালা অংশে বারান্দাসহ তিনটি কক্ষ ও একটি মন্দির এবং দক্ষিণের একতালা অংশে ৭টি কক্ষ ও খিলানযুক্ত সরু বারান্দা রয়েছে।

 

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র কাহিনীকার ডা: নীহাররঞ্জন গুপ্ত। ১৯১১ সালের ৬ জুন তার বাবার কর্মস্থল ভারতের কোলকাতায়  জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয়। তার পিতা-মাতার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত এবং লবঙ্গলতা দেবী। কৃষ্ণনগর সরকারী কলেজ  থেকে আই.এসসি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি কোলকাতায় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় কৃতকার্য হন।

 

তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হন। এরপর তিনি মেজর পদে উন্নীত হন। এই চাকুরীর সূত্রে তিনি চট্টগ্রাম, বার্মা (বর্তমানঃ মায়ানমার) থেকে মিশর পর্যন্ত বিভিন্ন রণাঙ্গনে ঘুরে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ ডিগ্রী অর্জন শেষে তিনি কোলকাতা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন। এরপর তিনি ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেছেন। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে তিনি ও তার পরিবার স্থায়ীভাবে কোলকাতায় অভিবাসিত হন।

 

আঠারো বছর বয়সে নীহাররঞ্জন তার প্রথম উপন্যাস রাজকুমার রচনা করেন। ইংল্যান্ডে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি গোয়েন্দা গল্প রচনায় আগ্রহান্বিত হয়ে স্বীয় লেখার উত্তোরন ঘটান এবং আগাথা ক্রিস্টির সাথে সাক্ষাৎ করেন। ভারতে ফিরে এসে তিনি তার ১ম গোয়েন্দা উপন্যাস কালোভ্রমর রচনা করেন। এতে তিনি গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে কিরীটি রায়কে সংযোজন করেন যা বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যে এক অনবদ্য সৃষ্টি। পরবর্তীতে কিরীটি তীব্র জনপ্রিয়তা পায় বাঙালি পাঠকমহলে। তিনি বাংলা সাহিত্যে রহস্য কাহিনী রচনার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক ছিলেন।

 

নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়ির দরজা, জানালা ও দেয়াল আলমারিতে কাঠের কারুকার্যময় ফুল ও লতাপাতার অলংকরণ বাড়িটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বাড়ির সামনে দিকে একটি পুকুর রয়েছে। ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারি এই কালজয়ী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এখানে ইতনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৪ নভেম্বর ইতনার চিত্রশিল্পী আলী আজগর রাজা ও শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস এই বাড়িতে 'শিশু স্বর্গ-২' গড়ে তুলে। তবে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহাসিক এই বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। 

 

কিভাবে যাবেন?

নড়াইল শহর পৌঁছে সিএনজি বা ইজিবাইকের মত স্থানীয় যানবাহনে লোহাগড়া উপজেলা হতে ৭.৫ কিলোমিটার দূরে নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়ি যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

নড়াইলে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে হোটেল ডলফিন, সম্রাট, মর্ডাণ, অরুনিমা রিসোর্ট, চিত্রা রিসোর্ট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

 

কোথায় খাবেন?

লোহাগড়া উপজেলায় ভালমানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?