ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
ঝরঝরি ট্রেইল | Jorjori…
02/05/2021
ধুপপানি ঝর্ণা | Dhuppani…
16/04/2021
02/05/2021
16/04/2021
02/05/2021
16/04/2021
জমিদারি শাসনামল’ প্রাচীন শাসনব্যবস্থার প্রচলন ছিল বাংলাদেশেও। রংপুর জেলার তাজহাট, ডিমলা, কাকিনা, মন্থনা, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু জমিদার বংশ ছিল। তাদের ছিল বিশাল আয়তনের বেশ কিছু প্রাসাদ। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল তাজহাট জমিদার বাড়ি (Tajhat Palace)। এটি তাজহাট রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাহিগঞ্জের তাজহাট গ্রামের দক্ষিণ-পূর্বে তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত।
তৎকালীন জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল রায় প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৯১৭ সালে সম্পূর্ণ হওয়া এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করতে তৎকালীন সময়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। পাঞ্জাব থেকে আগত মান্নালাল রায় এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পেশায় তিনি ছিলেন স্বর্ণকার। উত্তরাধিকারী গোবিন্দলাল ১৮৭৯ সালে এই জমিদারির মালিক হন এবং পরবর্তীতে তিনি ১৮৮৫ সালে ‘রাজা’, ১৮৯২ সালে ‘রাজা বাহাদুর’ এবং ১৮৯৬ সালে ‘মহারাজা’ উপাধি অর্জন করেন। গোবিন্দলালও সোনা, হীরা জহরত এবং স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা করতেন। প্রথমে তিনি নানা ধরনের নামিদামি হীরা, মানিক জহরতখচিত তাজ বা টুপির ব্যবসা করেছেন। তার এ ব্যবসায়ের প্রসারের ফলে এখানে হীরা-জহরতের হাট বসত যা পরবর্তীতে বিরাট প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ তাজ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জমিদারবাড়ীর নামকরণ করা হয় তাজহাট জমিদারবাড়ী।
তাজহাট জমিদারবাড়ীর প্রাসাদটি প্রায় ২১০ ফুটের মতো প্রশস্ত ও চার তলার সমান উঁচু। এর গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের মতো। প্রাসাদের মধ্যখানে বিশাল একটি গম্বুজ ও দুই পাশে ছড়িয়ে থাকা প্রধান ইমারতের উত্তর অংশের মাঝামাঝি ২য় তলায় ওঠানামার জন্য সুন্দর কাঠের তৈরি ২২টি ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি রয়েছে। এ ছাড়া প্রাসাদটির পেছনের দিক থেকে ২য় তলায় ওঠানামার জন্য লোহার নকশাকৃত ঝুলন্ত মজবুত সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িগুলোর রেলিং দেখতে অসম্ভব সুন্দর। ফুলগাছের মতো দেখা যায়। প্রাসাদটির সামনে থেকে ২য় তলায় ওঠানামার জন্য একটি বিরাট গ্যালারির মতো সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িটিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। প্রথম স্তরে ১টি ধাপ বিরাজমান, ২য় স্তরে ওঠার সময় একটু সমান অবস্থান নেমে আবার ১৪টি ধাপ অতিক্রম করে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন আয়তাকার প্লাটফরম, যা দ্বিতীয় তলার ছাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যাকে ৩য় স্তর হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। দালানগুলো দেখতে একটা মসজিদের অবয়ব। তবে রাজবাড়ী যেই দিক থেকে বাংলাদেশের অন্য সব প্রাসাদের থেকে আলাদা তা হলো এর সিঁড়িগুলো। সর্বমোট ৩১টি সিঁড়ি আছে, যার প্রতিটাই ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত পুরোটাই একই পাথরে তৈরি। রাজবাড়ীর পেছনদিকে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি পথ, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাজহাট জমিদার বাড়িকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করে এবং ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে তাজহাট জমিদার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তরিত করে। জাদুঘরের প্রদর্শনী কক্ষে দশম ও একাদশ শতাব্দীর বেশকিছু টেরাকোটা শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে মুঘল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের সময়ের কুরআন, মহাভারত ও রামায়ণসহ বেশকিছু আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। কাল পাথরের বিষ্ণুর প্রতিকৃতি ছাড়াও জাদুঘরে প্রায় ৩০০ টি মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে।
পরিদর্শনের সময়সূচী ও প্রবেশের টিকেট মূল্য
গ্রীষ্মকালীন সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস ব্যাপী রংপুর জাদুঘর তথা তাজহাট জমিদার বাড়ি সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালীন সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পরিদর্শনের জন্য খোলা থাকে। দুপুর ১ টা থেকে ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রংপুর জাদুঘরে মধ্যাহ্ন বিরতির বন্ধ থাকে। সপ্তাহের প্রতি রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবসের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। এছাড়াও সমস্ত সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘরটিতে পরিদর্শন বন্ধ থাকে।
প্রাপ্তবয়স্ক সকল বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য রংপুর জাদুঘরে প্রবেশ করতে ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রবেশ করতে ৫ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়, তবে ৫ বছরের কম বাচ্চাদের প্রবেশ করতে কোন টিকেট লাগে না। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীর প্রবেশের টিকেট মূল্য ১০০ টাকা এবং অন্য যেকোন বিদেশীদের প্রবেশ টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা।
কিভাবে যাবেন?
রংপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে রিকশাযোগে তাজহাট জমিদার বাড়ি যেতে মাত্র ২০ টাকা ভাড়া লাগে। তবে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী বাসে চড়লে সরাসরি তাজহাট জমিদার বাড়ির সামনে নামা যায়।
কোথায় থাকবেন?
রংপুরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল নর্থভিউ, পর্যটন মোটেল, দি পার্ক হোটেল, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল তিলোত্তমা, হোটেল কাশপিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন?
রংপুর শহরে বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। তবে আমের সিজনে রংপুর গেলে বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।