ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি | Vaggokul Jamindar Bari 15/01/2022


PC:


অতীত ইতিহাস আর কাল প্রবাহের সাক্ষী হিসেবে এখনও দেশের নানা জায়গায় আছে জমিদার বাড়ি ও তাদের নানা নিদর্শন৷ বিক্রমপুরের ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি (Vaggokul Jamindar Bari) তেমনই একটি। জমিদার যদুনাথ সাহা আনুমানিক ১৯২০ সালে প্রায় ৫০০ শতাংশ জমির ওপর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল গ্রামে ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। জমিদার শ্রী নাথ রায়ের পুত্র এই যদুনাথ রায় চৌধুরি৷ স্থানীয় মানুষের কাছে এটি বাবু বাড়ি নামেও পরিচিত।

 

গঙ্গাপ্রসাদ রায়ের ৪র্থ ও কণিষ্ঠ পুত্র প্রেমচাঁদ রায়ের তিনপুত্র ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী জমিদার। এদের মধ্যে শ্রীনাথ রায় এবং জানকী নাথ রায় ইংরেজ সরকার কর্তৃক রাজা উপাধি দ্বারা ভূষিত হন। এই দুইজন ভাগ্যকুলে প্রাসাদ নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের প্রাসাদও প্রায় ৩০ বছর পূর্বে কৃত্তিনাশা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। রাজা শ্রীনাথ রায় ছিলেন ভাগ্যকুলের জমিদারদের মধ্যে সর্বশেষ্ঠ। রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। যদুনাথ রায় বর্তমানের বাড়িখাল ইউনিয়নের উত্তর বালাশুরে (সে সময় ভাগ্যকুল নামে পরিচিত ছিল) হুবহু একই ধরণের দুটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। বিশালাকৃতির দিঘি খনন করেন, নাট মন্দির ও দূর্গামন্দির স্থাপন করেন। ড. হুমায়ুন আজাদ এই বাড়িটিকে নিয়ে তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না গ্রন্থে লিখেছেন- বিলের ধারে প্যারিশ শহর। সাহিত্যিক নূর উল হোসেন তার বহু লেখায় ভাগ্যকুলের জমিদার বাড়ির জাকজমকপূর্ণ উৎসবের বর্ণনা দিয়েছেন। ভাগ্যকুলের স্টীমার ঘাটও সুপরিচিত ছিল জমিদারদের কারণেই।

 

জমিদারগণ শুধু শিক্ষানুরাগীই ছিলেন না, তারা প্রায় সকলেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। ঢাকা, কলকাতা এবং ইংল্যান্ডে তার পড়াশোনা করেন। ভাগ্যকুলের জমিদারদের সকলেরই কলকাতায় বাড়ি ছিল। তারা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কলকাতামুখী হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র যদুনাথ রায় তার বিলের ধারের প্রাসাদে ছিলেন। তিনি ভাগ্যকুল ত্যাগ করতে চাননি। বৃদ্ধ বয়সে তার আত্মীয়-স্বজনরা জোর করে কলকাতায় নিয়ে যায়। তিনি কলকাতায় গিয়ে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।

 

ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ির দরজা ও জানালাগুলো একই আকারের ফলে বদ্ধ অবস্থায় দরজা-জানালার অনুমান করা বেশ কঠিন। বাড়ীর সমস্ত জায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে মূল ভবন, আর তার মাঝখানে উঠোনের অবস্থান। ভবনের সামনে রয়েছে ৮ টি থাম, যা মূলত গ্রীক স্থাপত্য শিল্পের বৈশিষ্ট নির্দেশ করে। মূল ভবনের ভেতরের দেয়ালে ময়ূর, সাপ ও বিভিন্ন ফুল-পাখির নকশা অঙ্কিত রয়েছে। বাড়ির একতলা থেকে দোতলায় চলাচলের জন্য আছে একটি কাঠের সিঁড়ি। যদুনাথ সাহা তাঁর ৫ ছেলেমেয়ের জন্য পৃথক পৃথক বাড়ী নির্মাণ করে দেন। বাড়িগুলো স্থানীয় মানুষের কাছে কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ী, উকিল বাড়ী, জজ বাড়ী এবং ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি নামে পরিচিটি লাভ করে। এক বাড়ি হতে আরেক বাড়ির দূরত্ব ৪০ থেকে ৫০ গজ। তবে বান্দুরায় অবস্থিত ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় রয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে বান্দুরা যাত্রাপথের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। গুলিস্তান হতে ঢাকা-দোহার রুটের গরিবে নেওয়াজ, মহানগর, আরাম কিংবা সেবা পরিবহনের বাসে বালাসুর বাজার এসে সেখান থেকে রিকশায় চড়ে ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে সাধারণত দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। তবে প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতে চাইলে শ্রীনগর উপজেলায় থাকতে পারবেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?