বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর | Varendra Research Museum 20/01/2022


PC: Nahid Raj


কোন দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে ধেরে রাখার জন্য জাদুঘর তৈরি হয়। জাদুঘরে মূলত উক্ত দেশের কিংবা জাতি গোষ্ঠীর সকল ইতিহাসের সাক্ষ্য এমন মুল্ল্যবান বস্তু প্রদর্শন করে হয়। যা দেখে সাধারন মানুষ তাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে জানতে পারে। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (Varendra Research Museum) হলো বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর, যা ১৯১৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজশাহী  শহরের প্রাণকেন্দ্র হাতেম খাঁন মহল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। রাজশাহী অঞ্চলের সনাতন ইতিহাস, ধর্মীয় রীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদির বিশাল এক সংগ্রহ আছে এখানে। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা।

 

বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এর শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য আবদান রয়েছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তারা বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। ঐ বছরে তারা রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য শরৎ কুমার রায়ের দান করা জমিতে জাদুঘরটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে। একই বছরের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।

 

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এখানে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, খিস্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধমূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তিসহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। মোঘল আমলের রৌপ্যমুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্যমুদ্রা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 

এখানে প্রায় ৫ হাজার পুঁথি রয়েছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পর্যন্ত পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এখানে রয়েছে। জাদুঘরটিকে ৭টি প্রদর্শনকোষ্ঠে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম প্রদর্শনকোষ্ঠে নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে উদ্ধারকৃত ২৫৬টি ঐতিহাসিক সামগ্রী রয়েছে। দ্বিতীয় প্রদর্শনকোষ্ঠে আছে হিন্দু ও বৌদ্ধদের তৈরি কাঠ ও পাথরের নানা ভাস্কর। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রদর্শনকোষ্ঠে রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। পঞ্চম প্রদর্শনকোষ্ঠে আছে বৌদ্ধমূর্তি। ষষ্ঠ প্রদর্শনকোষ্ঠে রয়েছে বিভিন্ন ভাষায় লিখিত পাথরের খ- এবং সপ্তম গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিদর্শনসমূহ।

 

বরেন্দ্র জাদুঘরে ১৪ হাজার গ্রন্থ’ সমৃদ্ধ একটি সংগ্রন্থশালাও রয়েছে। যদিও গ্রন্থাগারটি শুধুমাত্র গবেষকদের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, কারণ এখানে অনেক মূল্যবান পুস্তকাদি রয়েছে। এ সকল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস এবং শিল্প ও প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।

 

শনিবার থেকে বুধবার বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতি, শুক্রবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত ছুটির দিনগুলোতে বরেন্দ্র জাদুঘর বন্ধ থাকে। বরেন্দ্র জাদুঘরটি দেখার জন্য ২০ টাকা প্রবেশমূল্য/টিকেট নির্ধারন করা হয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন?

রাজশাহীতে পৌছার পর শহরের মূল কেন্দ্র জিরো পয়েন্টের কাছেই জাদুঘরটি পাওয়া যাবে। রাজশাহী কলেজের পাশে এটি অবস্থিত। এর পুর্ব দিকে সদর হাসপাতাল, দক্ষিণে প্রমত্তা পদ্মা নদী ও উত্তরে হেতেম খা বড় মসজিদ অবস্থিত। আপনি শহরের যেকোন জায়গা থেকে অটোরিক্সা কিংবা রিক্সা করে খুব সহজেই বরেন্দ্র জাদুঘর যেতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

রাজশাহী শহরে রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল গ্রীণসিটি ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল স্টার ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল ও মুক্তা ইন্টারন্যাশনালের মতো ভালো মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।

 

কোথায় খাবেন?

বরেন্দ্র জাদুঘর শহরের মূল কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এর পাশেই বেশ ভালো মানের হোটেল ও রেস্তোরা রয়েছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?