ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
আলোকচিত্র: Rocky Masum
কখনও কখনও, একটি ধর্মীয় স্থান সমস্ত হৃদয় আকুল করে দেয়। জায়গাটিকে রামুর মন্দির বলা হয়। যদিও সেই জায়গাটি শহর থেকে অনেক দূরে প্রকৃতির শুদ্ধতায় এবং বনের ছায়ার মাঝে থাকে। এই জায়গাটিতে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ প্রাচীনত্ব এবং রয়েছে বহু প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন। যার মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, মঠ এবং চৈতন্য-জাদি উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৩৫ টি বৌদ্ধ মন্দির রামুর ঐতিহ্য অতীত থেকেই গৌরবময় সাক্ষ্য বহন করে আসছে।
ইতিহাসবিদদের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে রামু-কে ‘‘প্যাং-ওয়া/প্যানোয়া’’ অর্থাৎ হলদে ফুলের দেশ হিসেবে বর্ণনা রয়েছে। রামু এলাকাটি একদা আরাকানে একটি প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছিল। রামুর অধিপতিকে রাখাইন রাজারা প্যাঙ-ওয়া-জা বলে আখ্যায়িত করতেন। তৃতীয় ধন্যাবতী যুগের প্রথম রাখাইনরাজ চেন্দা থুরিয়া (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮০-৫২৮) শাসনামলে তাঁর আমন্ত্রণে সেবক আনন্দকে নিয়ে তথাগত গৌতম বু্দ্ধ আরাকানে এসেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। গৌতম বুদ্ধের সাথে আরো পাঁচশত শিষ্য ছিলেন। তখন এক ধর্ম সম্মেলনেসেবক আনন্দকে উদ্দেশ্য করে গৌতম বু্দ্ধ বলেন, ‘‘হে আনন্দ! ভবিষ্যতে পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব উপকূলে পাহাড়ের উপর আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হবে। তখন এর নাম হবে ‘রাং-উ’।’’ ‘রাং-উ’ রাখাইন শব্দ এর শাব্দিক অর্থ বক্ষাস্থি। ‘রাং’ অর্থ বক্ষ, ‘উ’ অর্থ বক্ষাস্থি। ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং অর্থগত দিক থেকে রামু শব্দের সংগে রাং-উ শব্দের মিল রয়েছে।
মৌর্য বংশের তৃতীয় সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩২) কর্তৃক স্থাপিত ৮৪ হাজার ধাতু চৈত্যের মধ্যে রামুর এ চৈত্যটি অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮ অব্দে নির্মিত ঐতিহাসিক রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পাহাড় চূঁড়ায় মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। সময়ের বিবর্তনে রামকোটের অস্তিত্ব বিলীন হলে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলংকা থেকে আগত পুরোহিত জগৎ জ্যোতি মহাস্থবির রামকোট বৌদ্ধ বিহারটি সংস্কার পূর্বক পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে একটি বনাশ্রম রয়েছে যেখানে প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা ও পুরাকীর্তি রয়েছে। প্রতি বছর প্রচুর তীর্থযাত্রী-পূজারী ও পর্যটকরা এখানে ভীড় করেন।
আশ্রমের পাদদেশে ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইটালীসহ অনেক দেশের আর্শীবাদপুষ্ট ‘‘জগৎ জ্যোতি শিশু সদন’’ নামে একটি বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমালয় রয়েছে। এ আশ্রম নির্মাণকালে রামুর রাখাইন সম্প্রদায়ের শশ্মানে স্থিত এতদঞ্চলে দানবীর প্রয়াত পোওয়েজা: সেজারী (খিজারী দালাল) এর বংশধরদের সমাধিস্তম্ভ ধ্বংস করা হয় বলে রামুর রাখাইনসহ সচেতন রামুবাসীদের আক্ষেপ রয়ে গেছে। আশ্রমের অনেক অনাথ ছেলেমেয়েরা বিনা পয়সায় এখানে পড়ালেখা করে যাচ্ছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামকোটে বসে ‘‘রাজর্ষি’’ উপন্যাসটি রচনা করেন। কবিগুরুই হলদে ফুলের দেশ রামুকে রম্যভূমি হিসেবে সর্বপ্রথম আখ্যায়িত করেন। অবশ্য এককালে বৌদ্ধ সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে রম্যভূমির নামে বর্তমান রামু প্রসিদ্ধ ছিল।
কিভাবে যাবেন?
কক্সবাজার শহর থেকে রামু ঘুরতে যাবার সহজ উপায় হলো আপনি যদি রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে নেন। তাহলে জনপ্রিয় স্থান গুলো সহজেই ও অল্প সময়ে দেখে আসতে পারবেন। ৪-৫ ঘন্টা সময় নিয়ে গেলে মোটামুটি অনেক গুলো বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখতে পারবেন। কক্সবাজার থেকে সিএনজি বা ট্যাক্সি/অটোরিক্সা নিয়ে বৌদ্ধ বিহার থেকে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন। রামু যাবার ট্যাক্সি বা অটোরিক্সা সাধারণত জনপ্রতি ভাড়া নেয় ৪০ টাকা করে আর রিজার্ভ নিতে চাইলে যাওয়া আসা ও ঘুরে দেখার সময় সহ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগবে। অটোরিক্সায় ৫-৬ জন অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
অল্প দূরত্ব হওয়ায় মহেশখালী থেকে সহজেই ফিরে আসা যায়। আর তাই সাময়িক ক্ষুদা নিবারণের জন্য দ্বীপেই হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। কিংবা ফিরে এসে খেতে পারেন কক্সবাজারে। কক্সবাজারে সব ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছুর মত এখানে খাবারের দামও কম/বেশী হতে পারে। ভাত: ২০-৪০ টাকা, মিক্সড ভর্তা: ৭৫/১৫০/৩০০টাকা (৮-১০ আইটেম), লইট্যা ফ্রাই: ১০০-১২০টাকা (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা), কোরাল/ভেটকি: ১৫০ টাকা (প্রতি পিচ), গরু: ১৫০-২০০ টাকা (২ জন শেয়ার করতে পারবেন), রপচাঁদা ফ্রাই/রান্না: ৩০০-৪০০ টাকা (বড়, ২জন খাওয়ার মত), ডাল: ৩০-৬০ টাকা। এছাড়াও লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন হান্ডি রেস্তারা থেকে ২০০-২৫০ টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরাণী চেখে দেখতে পারেন। আর কেওএফসি তো আছেই।