ধানুকার মনসা বাড়ি ও মন্দির | Dhanuka Manasha Bari and Temple 16/01/2022


PC:


ধানুকার মনসা বাড়ি ও মন্দির (Dhanuka Manasha Bari and Temple) শরীয়তপুর জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির ও বাংলাদেশের অন্যতম একটি সরক্ষিত পুরাকীর্তি। এটি শরীয়তপুর সদরের ধানুকা নামক গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটি ময়ূর ভট্টের বাড়িতে অবস্থিত। এ বাড়িতে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। সবগুলো মন্দির নিয়ে গঠিত বাড়িটিকে একত্রে স্থানীয়রা ময়ূর ভট্টের বাড়ি নামে ডেকে থাকেন সুলতানী ও মোগল আমলের নির্মাণ শৈলিতে নির্মিত এ বাড়িতে ৫টি ইমারত আছে।  যার মধ্যে আছে দুর্গা মন্দির, মনসা মন্দির, কালি মন্দির, নহবতখানা এবং আবাসিক ভবন।

 

তৎকালীন সময়ে এখানে পূজা দেয়ার জন্য ভারতবর্ষের বহু লোকের আগমন ঘটতো বলে বাড়িটি মনসা বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বাড়ির পাশে স্থাপিত ছিল মহিলা মনসা মন্দির ও শিব মন্দির। আরেক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় ভারতের কৌনজ থেকে তৎকালিন সময়ে ধনাঢ্য ভট্রাচার্য পরিবার ধানুকা অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। তারা শিক্ষা, ধর্ম পরায়নতা, অর্থ বৃত্তে সমৃদ্ধ ছিল বলে জানা যায়। আর তাদেরই পূর্ব পুরুষ ছিলেন ময়ুর ভট্ট।

 

ময়ুর ভট্টের জন্ম বৃত্তান্ত জানতে গিয়ে জানা যায় তিনি যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন তার পিতা মাতা তীর্থের জন্য কাশিধামে যাত্রা করেন। দীর্ঘ যাত্রা পথে ময়ুর ভট্ট এক বনের ধারে জন্মগ্রহন করেন। তার ধর্মের জনক জননী ধর্ম ও দেবতাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তারা পুত্রকে শাল পাতায় আচ্ছাদিত করে কাশিতে যাত্রা করেন। গন্তব্যে পৌছে পূজো দিয়ে রাতে ঘুমিয়ে তারা স্বপ্ন দেবতার মাধ্যমে জানতে পারে তাদের পূজা দেবতার নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা শিশুটি ফেলে যাওয়ার সময় ভূলে গিয়েছিল মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। তারা তাদের ভূল বুঝতে পেরে দ্রুত ফিরে এসে দেখেন নির্দিষ্ট স্থানে এক ঝাক ময়ুর শিশুটিকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। ময়ুরের আশ্রয়ে বেঁচে ছিল বলে ঐ শিশুর নাম রাখা হয়েছিল ময়ুর ভট্টো। তাঁর নামে বাড়ির নাম করন করা হয়।

 

তবে মনসা বাড়ি নামকরণের আরো একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। ময়ূর ভট্ট বাড়ির এক কিশোর পর পর তিন দিন বাগানে ফুল কুড়াতে গিয়ে একটি বিশালাকার সাপ দেখতে পায়। চর্তুথ দিন সাপটি বাড়ির উঠোনে নৃত্য করতে থাকে। সেই রাতে মনসা দেবী ভট্টবাড়ির লোকদের স্বপ্নে দর্শন দিয়ে মনসা মন্দির স্থাপন এবং পূজা আয়োজনের নির্দেশ দেন। আর তখন থেকেই ময়ূর ভট্ট বাড়ি হয়ে যায় মনসা বাড়ি এবং বাড়িটির অবস্থান ধানুকা গ্রামে হওয়ায় মনসা বাড়ির সাথে ধানুকা শব্দটি যুক্ত হয়ে ধানুকা মনসা বাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।

 

এ বাড়িতে রয়েছে পিতলের মূর্তি। যে মূর্তিটি তৎকালিন সময় কীর্তিনাশা নদীতে মাছ ধরার সময় জালে মূর্তিটি পেয়ে জেলে অলৌকিক ভাবে এ মন্দিরে রেখে যান। যা আজঅবধি এ মন্দিরে আছে। ঐতিহাসিক এ বাড়ি থেকে ১৯৭৩ সালে ভাষা সৈনিক ও জেলার ইতিহাস গবেষক মাস্টার জালাল উদ্দিন আহম্মেদ কাঠের বাধাই করা ও তুলট কাগজে লিখিত পুথি উদ্ধার করেন। যা কয়েকটি কপি নেপালে পাঠানো হয়। আজ ও বেশ কয়েকটি কপি এখনো শরীয়তপুর জেলার বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।

 

কিভাবে যাবেন?

শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ধানুকা গ্রামে এই ঐতিহ্যবাহী ধানুকা মনসা বাড়ির অবস্থান। শরীয়তপুর শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা যোগে মনসা বাড়িতে যেতে পারবেন।

 

ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, বোট, ট্রলার অথবা ফেরীর মাধ্যমে নদী পার হয়ে মঙ্গল মাঝির ঘাট আসুন। মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে বাসে চড়ে শরীয়তপুর শহরে আসার পর অল্প টাকা রিকশা ভাড়ায় ধানুকা মনসা বাড়ি পৌঁছে যাবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

শরীয়তপুর জেলায় খুব ভাল হোটেল আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। শরীয়তপুর জেলা সদরে অবস্থিত আবাসিক হোটেলের মধ্যে নুর হোটেল, চন্দ্রদাস রেস্ট হাউজ, হোটেল শের আলী উল্লেখযোগ্য।

 

কোথায় খাবেন?

শরীয়তপুর জেলা শহরে খাবারের জন্য বিভিন্ন মানের চাইনিজ এবং বাংলা খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট পাবেন। আপনার সাধ্যের মধ্যে যেকোন হোটেল থেকে খাবার খেতে পারবেন। শরীয়তপুর শহরে খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মধ্যে উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, হোটেল জনতা, চিকন্দি ফুড পার্ক, চিলেকোঠা ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?