
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021

ধুপপানি ঝর্ণা | Dhuppani…
16/04/2021
.jpg)
ঝরঝরি ট্রেইল | Jorjori…
02/05/2021
.jpg)
রিসাং ঝর্ণা | Risang…
20/03/2021
16/04/2021
16/04/2021
02/05/2021
20/03/2021
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলাস্থ নুনছড়ি মৌজায় অবস্থিত সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৭০০ ফুট উপরে প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গা জুড়ে বিদ্যমান প্রাকৃতিক হ্রদ মাতাই তুয়ারি বা মাতাই পুখিরি। মাতাই অর্থ দেবতা এবং পুখিরি অর্থ পুকুর। বাংলাভাষি ও পর্যটকদের কাছে হ্রদটি দেবতার পুকুর নামে অধিক পরিচিত। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে শুয়ে থাকা এই পবিত্র জলাশয়টি দৈর্ঘ্যে প্রায় দেড় হাজার ফুট এবং প্রস্থে ছয়শত ফুট। পুকুরের চারদিকে আছে ঘন সবুজ অরণ্য ও সুবিন্যস্ত পর্বতশ্রেণি। দেবতার পুকুর হ্রদের পানি কখনো সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় না এবং বর্ষাকালে এটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে।
দেবতার পুকুর সৃষ্টির কারণ হিসেবে বেশকিছু লোককথা প্রচলিত আছে। এক স্থানীয় জুম চাষী স্বপ্নে দেবতার নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে জুম চাষ চালিয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যে এক ভুমিকম্পের পর স্থানীয়রা দেখতে পায় জুম পাহাড়ের জায়গাটিতে একটি জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আবার রেবতী রঞ্জন নামের জনৈক হিন্দু ভদ্রলোক স্থানীয় লোকদের সাহায্যে বাঁশের ভেলায় চড়ে এই হ্রদের মাঝখানের গভীরতা মাপার চেষ্টা করেন। কিন্তু দড়ি তল পর্যন্ত ঠেকাতে পারেননি। বরং ভেলাসহ ডুবে যায় যায় অবস্থা হওয়াতে একটা ছাগল মানত করে গভীরতা নির্ণয়ের চেষ্টা ত্যাগ করেন। এই প্রাকৃতিক হ্রদকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত রয়েছে নানা লোককাহিনী। সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রকৃতি পূজারি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির বিশ্বাস অলৌকিক কোন শক্তির প্রভাব রয়েছে বলেই হ্রদটি উঁচু একটি পাহাড়ে সৃষ্টি হয়েছে এবং এই হ্রদের জল কখনও শুকোয় না। অনেকের বিশ্বাস, স্বয়ং জল দেবতা স্থানীয় গ্রামবাসীদের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য এই হৃদ সৃষ্টি করেছেন। তাই স্থানীয়দের কাছে এটি আর্শীবাদস্বরূপ।
এই অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং প্রকৃতি পূজারি ত্রিপুরা জনগোষ্টিরা বিশ্বাস করেন যে, দেবতারা পুকুরের তলায় গুপ্তধন লুকায়িত রয়েছে যা স্বয়ং দেবতাদের পাহারায় রয়েছে এবং হ্রদের পাড়ে গিয়ে দেবতার কাছে কিছু মানত করলে তা পাওয়া যায়। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে তীর্থ মেলা এবং প্রকৃতি পূজারি ত্রিপুরাদের মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। পুণ্য লাভের আশায় দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ত্রিপুরাদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত দেবতার পুকুর আসেন।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, উত্তরা বা আরামবাগ থেকে সেন্টমার্টিন হুন্দাই, শান্তি, শ্যামলী, হানিফ, ইকোনো, রিলেক্স এবং ঈগল পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি শহর থেকে জীপ বা চান্দের গাড়ীতে নুনছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি- রাঙ্গামাটি সড়কের কাছে নেমে প্রায় ১৮০০ টি সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে মাতাই পুখিরি যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
দীঘিনালাতে আল আমিন, দীঘিনালা গেস্ট হাউজ ও হোটেল জুরানির মতো সাধারন মানের আবাসিক হোটেল আছে। তবে ভালো মানের হোটেলে থাকতে হলে আপনাকে খাগড়াছড়িতে ফিরে আসতে হবে। খাগড়াছড়ি শহরে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেলে ভেদে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ৬০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। খাগড়াছড়ি শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে –
• হোটেল হিল প্যারাডিসে : খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
• হোটেল গাইরিং : খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
• অরণ্য বিলাস : শহরের নারিকেল বাগানে অবস্থিত এই হোটেলে টুইন বেড এসি ৩০০০ টাকা, কাপল এসি ২০০০ টাকা, টুইন নন এসি ২৫০০ টাকা এবং কাপল নন এসি ১৫০০ টাকা ভাড়া।
• হোটেল ইকোছড়ি ইন : এই হোটেলটি হলো তাদের জন্য যারা শহরের কোলাহল থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখতে চান। এই হোটেলটি খাগড়াছড়ি শহর থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রুম ভেদে এখানে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ১৫০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
যদি খুবই কম খরচে থাকতে চান তাহলে নারিকেল বাগানের "গাংচিল আবাসিক হোটেলে" থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে ৬০০-১০০০ টাকায় থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
খাগড়াছড়ি হতে মাতাই পুখিরি যাওয়ার রাস্তায় এফএনএফ রেস্টুরেন্ট, ইসমাইল হোটেল, ব্যাম্বু শুট, হিল ফ্লেভারস, ফুডাং থাং, চাওমিন রেস্টুরেন্ট ও জুম স্পাইস ইত্যাদি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আর খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর, বাস স্ট্যান্ড ও পান্থাই পাড়ায় অবস্থিত সিস্টেম রেস্তোরাঁ, পেডা টিং টিং, গাং সাবারং, পাজন ও চিম্বাল রেস্টুরেন্টের অনেক সুনাম রয়েছে। খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে হাঁসের কালাভুনা, বাশকুড়ুল এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ী খাবার অন্যতম।