ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ঐতিহ্যবাহী কমলা রাণী দিঘী (Komola Ranir Dighi) অবস্থিত। অনেকের কাছে এটি সাগর দিঘী নামেও সুপরিচিত। প্রচলিত আছে, পনের শতকের শেষ ভাগে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী রমনীকে বিয়ে করেন। প্রজা হিতৈষী রাজা জানকি নাথের ঘরে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানের নাম রাখা হয় রঘুনাথ।
রাজা জানকি নাথ প্রজাদের মঙ্গলার্থে পানির অভাব নিবারণের জন্য একটি পুকুর খনন করেন কিন্তু পুকুরে আর পানি উঠল না। রাজা মহা চিন্তায় পড়লেন। একরাতে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন রাণী কমলা দেবী যদি পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজো দেন তাহলে পুকুরে পানি উঠবে। রাণী কমলা দেবী প্রজাদের মঙ্গলার্থে পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজোয় বসলেন। সহসা চারিদিক দিয়ে পানি উঠতে শুরু করল। পানি রাণী কমলা দেবীকে স্পর্শ করল। রাণী কমলা দেবী উঠে দাঁড়ালেন এবং কড়জোড়ে দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। পানি বেড়েই চলল, পানি বাড়তে বাড়তে হাঁটু পেরিয়ে কোমরে পৌঁছালো। রাজা জানকি নাথ অস্থির হয়ে গেলেন। রাণীকে পাড়ে ভিড়ার জন্য চিৎকার দিতে শুরু করলেন। ততক্ষণে পানি রাণীকে ডুবিয়ে ফেলল। রাণী আর পানি থেকে উঠে এলেন না। পানিতে একাকার হয়ে মিশে গেলেন। রাজা জানকি নাথ এ দৃশ্য দেখে বিচলিত হলেন।
তিনি অস্থির হয়ে ঈশ্বরকে ডাকতে শুরু করলেন। কয়েক মাসের শিশু সন্তান রঘু যে মাতৃদুগ্ধ ছাড়া আর কিছুই খায় না। রাজা জানকি নাথ এই চিন্তায় কিংকর্তব্য বিমূঢ় হলেন। অবশেষে তিনি এক রাত্রে স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন। শিশু সন্তান রঘুকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসলে রাণী কমলা দেবী তাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন তবে শর্ত যে, রাজা কখনো রাণীকে স্পর্শ করতে পারবেন না। রাজা জানকি নাথ গভীর রাতে শিশু সন্তানটিকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসতেন আর রাণী কমলা দেবী তার সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়ে আবার পানিতে চলে যেতেন। এই দৃশ্য রাজাকে খুব যন্ত্রনা দিত। একদিন মধ্যরাতে যখন রাণী কমলা দেবী তার সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন তখন রাজা জানকি নাথ কমলা দেবীকে ধরার জন্য এগিয়ে গেলেন। রাণী রাজাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। পরে রাজা রাণীর চুলে ধরলেন কিন্তু রাণীকে আর রাখতে পারলেন না। রাণী পানিতে নেমে পানির সাথে একাকার হয়ে গেলেন। এরপর থেকে আর শিশু সন্তানটিকে রাণী আর দুধ খাওয়াতে এলেন না।
রাজা স্বপ্নে দেখতে পান তার সন্তান রঘুনাথ যদি এভাবে আর ৭ দিন বুকের দুধ খেতে পারতো তাহলে সে দিক বিজয়ী ও প্রতাপি বীর হিসাবে গণ্য হত। ইতিহাস থেকে জানা যায় রাজা রঘুনাথের আমলে সুসং দুর্গাপুর শক্তিশালী পরগনা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা রঘুনাথই জঙ্গল বাড়ী দূর্গ আক্রমণ করেন এবং বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়, কেদার রায়কে পরাজিত করে মুঘল সম্রাটদের কাছ থেকে মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হন।
বর্তমানে কমলা রাণী দীঘির মাঝ দিয়ে সোমেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। কালের সাক্ষী হয়ে দীঘির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড় এখনো টিকে আছে। পুকুরের পাড়ের একাংশে বসতভিটা তৈরী করা হয়েছে, আর কিছু অংশ ফসলী জমি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। উপজেলা পরিষদ থেকে রিক্সা বা মোটর সাইকেলে বিরিশিরি ব্রীজ পার হয়ে বামপাশে গুজরীকোণার পাকা রাস্তা দিয়ে ১.৫ কিলোমিটার পরে কমলা রাণী দিঘীর পাড়।
কোথায় থাকবেন?
সুসং দুর্গাপুরে রাত্রিযাপনের জন্য জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, বেশকিছু গেস্ট হাউস এবং মধ্যম মানের আবাসিক হোটেল আছে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন – জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস, YWCA গেষ্ট হাউজ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী গেষ্ট হাউজ
দুর্গাপুরে মধ্যম মানের হোটেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – স্বর্ণা গেস্ট হাউস, হোটেল সুসং, হোটেল গুলশান, হোটেল জবা, নদীবাংলা গেষ্ট হাউজ। এই হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় খাবেন?
বিরিশিরিতে ঘুরার সময় হালকা খাবার সাথে রাখতে পারেন কারণ যত্রতত্র খাবারের কিছু পাওয়া যায় না। এখানে মধ্যম মানের কিছু খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংসের পাশাপাশি বকের মাংসও পাওয়া যায়। দূর্গাপুর বাজারে নেত্রকোণার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির স্বাধ নিতে ভুল করবেন না।