রোয়াইলবাড়ি দূর্গ | Royailbari Fort 19/01/2022


PC:


ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নেত্রকোণা জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক এলাকা। এই জেলার ইতিহাস প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরপুর। নেত্রকোণা জেলায় বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। সেসব স্থাপত্যগুলো অধিকাংশই এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে কিছু স্থাপত্য এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য ‘রোয়াইলবাড়ি দূর্গ’ (Royailbari Fort)। স্থানীয় অভিমতে এটি ‘কোটবাড়ী দুর্গ’ নামেও পরিচিত।

 

রোয়াইলবাড়ি দূর্গের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদগণদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে সুলতানী আমলের স্থাপনা বলে মনে করেন। অনেকে আবার মনে করেন এটি জনৈক কোনো মুঘল জেনারেলের তৈরি স্থাপনা। গঠনশৈলির কারণে প্রত্নতাত্তি্বকরা একে মহাজাদপুর এবং গৌড়ের ১৪ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের ধারণা, এটা মুঘল আমলের কোনো সেনা নায়কের বাসভবন। রোয়াইলবাড়ী দূর্গ পশ্চিমে বেতাই নদী এবং অপর তিনদিকে তিনটি পরিখা দ্বারাবেষ্টিত।

 

জানা গেছে ‘রোয়াইল’ একটি আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থ ‘ক্ষুদ্র অশ্বারোহী বাহিনী’। সুতরাং ‘রোয়াইলবাড়ি’ এর অর্থ দাঁড়ায় ‘অশ্বারোহী বাহিনীর বাড়ি’। ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ্ ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে কামরূপের রাজা নিলাম্বরের বিরুদ্ধে এক প্রচন্ড যুদ্ধ পরিচালনা করে কামরূপ রাজ্য দখল করেন। এরপর কিছুদিন তাঁর পুত্র নছরত শাহ্ কামরূপে শাসন করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রতিপক্ষের আক্রমণের মুখে তিনি বিতাড়িত হন এবং এক পর্যায়ে কামরূপ থেকে পালিয়ে আসতে হয়। কথিত আছে, নছরত শাহ্ কামরূপ থেকে পালিয়ে পূর্ব ময়মনসিংহের (বর্তমান নেত্রকোনার) রোয়াইলবাড়িতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি এর নামকরণ করেন ‘নছরত ও জিয়াল’ (কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে- ‘নছরত আজিয়াল’)। পরবর্তীতে তাঁর শাসন অন্তর্গত সমগ্র প্রদেশটিই (বৃহত্তর ময়মনসিংহ) ‘নছরতশাহী পরগণা’ নামে পরিচিত হয় এবং আকবর শাহ্‌র সময় পর্যন্তও পরগণাটি এ নামেই পরিচিত ছিল। এরপর বাঙ্গালীর গৌরব, মসনদে আলী ঈশা খাঁ এ অঞ্চলে বিশাল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি ও নেত্রকোণার রোয়াইলবাড়ি দূর্গের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেন।

 

দূর্গের অভ্যন্তরভাগ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একটি ইটের প্রাচীর দ্বারা দু’অংশে বিভক্ত। উত্তরের অংশটির আয়তন ৪শ ৯৭ বর্গফুট। এটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ। উত্তরের অংশে রয়েছে একটি বরুজ ডিবি, শানবাঁধানো পুকুর ও একটি কবরস্থান। দক্ষিণে আছে বার দুয়ারী ঢিবি। পুরাকীর্তি এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পাথর। ৯১-৯২ এবং ৯২-৯৩ অর্থবছরে এর অভ্যন্তরে খনন কাজ পরিচালনা করা হয়। বরুজ ঢিবি খননে একটি ইমরাত কাঠামো এবং বার দুয়ারী ঢিবিতে মসজিদের নকশা আবিষ্কৃত হয়। বরুজ ঢিবির উচ্চতা দূর্গ চত্বর হতে প্রায় ২০ ফুট। চূড়ায় আরোহণের জন্য ব্যবহৃত অক্ষত সিঁড়ি ছাড়াও আবিষ্কৃত হয় মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির তেরাব এবং রঙ্গের প্রলেপযুক্ত ইট। বার দুয়ারী ঢিবি খননে ৭৪ ফুট বাই ৪৬ ফুট আয়তনের একটি মসজিদের নকশা এর পূর্ব দেয়ালে ৫টি উত্তর দেয়ালে ৩টি দরজা এবং পশ্চিম দেয়ালে পাশাপাশি ৩টি মেহরাব ছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রতি সারিতে রয়েছে ৪টি করে ৮টি পিলার। দেয়ালে প্লাস্টারের চিহ্ন নেই, দেয়ালের রহিরাবরণে পোড়ামাটির অলংকৃত ইট, ঝিনুক ও বিশেষ ধরনের মসলা ব্যবহৃত হয়েছে। ৮০’র দশকে আবিষ্কৃত এ স্থাপনাটি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভূক্ত করে।

 

কিভাবে যাবেন?

নেত্রকোনা থেকে বাস, অটোরিকশায় যেতে হয় কেন্দুয়া উপজেলা সদরে। এর পর কেন্দুয়া থেকে আবার অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে সোজা যাওয়া যায় রোয়াইলবাড়িতে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?