ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
PC:The NKB
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগরে সৃষ্টি এই ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে শপথ গ্রহণের স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স (Mujibnagar Memorial Complex)।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যেখানে গঠিত হয় সেখানে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর স্থপতি তানভীর কবির। নিম্নে এর স্থাপত্য গুলোর তাৎপর্য দেয়া হলোঃ
লাল মঞ্চ
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত সিরামিকের ইট দিয়ে একটি আয়তকার লাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের ভিতরে মাঝখানে।
২৩টি স্মৃতি স্তম্ভ
স্মৃতিসৌধটি ২৩ টি ত্রিভূজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে গঠিত। যা বৃত্তাকার উপায়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ২৩ টি দেয়াল (আগষ্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১)- এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম দেয়ালটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়ালকে ক্রমান্বয়ে দৈর্ঘ্য ১ ফুট ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করেছিল। শেষ দেয়ালের উচ্চতা ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। প্রতিটি দেয়ালের ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র আছে যেগুলোকে পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচারের চিহ্ন হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে।
এক লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলি
স্মৃতিসৌধটির ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু বেদীতে অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত রয়েছে যা দ্বারা ১ লক্ষ বুদ্ধিজীবির খুলিকে বোঝানো হয়েছে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদ
স্মৃতিসৌধের ভূমি থেকে ৩ ফুট উচ্চতার বেদীতে অসংখ্য পাথর রয়েছে যা দ্বারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও মা-বোনের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করা হয়েছে। পাথরগুলো মাঝখানে ১৯টি রেখা দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ১৯টি জেলাকে বুঝানো হয়েছে।
এগারোটি সিঁড়ি
স্মৃতিসৌধের বেদীতে আরোহণের জন্য ১১টি সিঁড়ি রয়েছে। যা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তা বুঝানো হয়েছে।
বঙ্গোপসাগর
স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আম বাগান ঘেঁষা স্থানটিতে মোজাইক করা আছে তার দ্বারা বঙ্গোপসাগর বোঝানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগর যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণে, কিন্তু শপথ গ্রহণের মঞ্চটির সাথে স্মৃতিসৌধের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য এখানে এটিকে উত্তর দিকে স্থান দেয়া হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতীক
স্মৃতিসৌধের মূল ফটকের রাস্তাটি মূল স্মৃতিসৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে। এখানে রাস্তাটি ভাষা আন্দোলনের প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
রক্তের সাগর
স্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাশে প্রথম দেয়ালের পাশ দিয়ে শহীদের রক্তের প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে যাকে রক্তের সাগর বলা হয়।
সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতা
লাল মঞ্চ থেকে যে ২৩টি দেয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুরি-পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে। যা দিয়ে ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতাকে প্রতীক আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাইরের অংশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ এবং পাকিস্থানি বাহিনীর আত্নসমর্পণ এর দৃশ্যসহ আরও ঐতিহাসিক ঘটনার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত উক্ত ভাস্কর্যগুলি যেকোন পর্যটককে আকর্ষণ করবে।
কিভাবে যাবেন?
সড়ক পথে মেহেরপুর জেলা সদর থেকে বাস, স্থানীয় যানবাহনের (টেম্পু/নছিমন/করিমন) মাধ্যমে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
কোথায় থাকবেন?
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটি আবাসিক হোটেল চালু আছে। এছাড়া জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সার্কিট হাউজ, পৌর হল এবং ফিন টাওয়ারসহ বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন?
মেহেরপুরে খাবারের জন্য বেশকিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে অবশ্যই আমের মৌসুমে মেহেরপুরে গেলে পাকা আম খেতে ভুল করবেন না। এছাড়া মেহেরপুর শহরে “সাবিত্রী” নামের মিষ্টির স্বাদ চেখে দেখতে পারেন।