সেইন্ট নিকোলাস চার্চ | St. Nicholas Church 12/01/2022


PC:


PC:Monzur al murshed chowdhury

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে  বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নাগরী এলাকায় অবস্থিত খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত একটি ঐতিহাসিক জনগপদ যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ খ্রীস্টান মিশনারীর মর্যাাদায় আসীন তার নাম সেইন্ট নিকোলাস চার্চ (St. Nicholas Church)। ১৯৬৩ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নির্মিত এই ঐতিহাসিক চার্চ বাংলাদেশের বৃহত্তম খ্রিষ্টান মিশনারীয় চার্চের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।

 

বাংলাদেশে যে কয়টি পুরনো গির্জা আছে তার মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাচীন গির্জা। এই গির্জাটি এই উপমহাদেশেরও অন্যতম একটি প্রাচীনতম গির্জা। স্থানীয়দের অনেকেই টলেন্টিনির সাধু নিকোলাসের গির্জাকে নাগরী গির্জা নামে চেনেন। স্থানীয় ও পর্তুগীজ ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় সাধু নিকোলাস এই গির্জাটি নির্মাণ করেছিলেন। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে পর্তুগিজ খ্রিষ্টানদের এদেশে আগমন ঘটে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পর্তুগীজরা এ দেশে আসলেও ইউরোপীয়দের মধ্যে তারাই প্রথম এদেশে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তারা সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতিক্রমে ১৬৬৩ সালে এই গির্জা স্থাপন করে। পরে ১৬৮০ সালে পাকা ইমারতে রূপান্তরিত হয় এই নিকোলাস গির্জা। এই পুরাতন গির্জাটির পাশেই বিশাল এলাকা জুড়ে আধুনিকভাবে নতুন গির্জা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর সামনে হস্ত প্রসারিত যিশুর দণ্ডায়মান চমৎকার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।

 

এই গির্জা থেকে আঃঞ্চলিক বাংলা ভাষার প্রথম বাইবেল অনূদিত হয়। পর্তুগীজ ভাষায় বাংলা ভাষার প্রথম যে ব্যাকরণ ও অভিধান রচনাকারী পাদ্রী ম্যানুয়েল দ্যা অ্যাসুম্পসাও এই গির্জারই পাদ্রী ছিলেন। এ গির্জাতেই তিনি এই গ্রন্থগুলো রচনার কাজ করেছিলেন। এই গির্জাকে কেন্দ্র করে ১৯১০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করা হয়। পর্তুগিজ পুরোহিত ও তৎকালীন জেলা বোর্ডের অনুদানে এই বিদ্যালয় চালু হয়। এরপর ১৯২০ সালে ১ সেপ্টেম্বর এই বিদ্যালয়কে নিম্ন মাধ্যমিক ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ।

 

দেশী-বিদেশী রীতির মিশ্রণে তৈরি এ গির্জায় রয়েছে মোট চারটি প্রবেশপথ। এর প্রথম তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে বারান্দা দিয়ে ঢোকার অবলম্বন হিসেবে উত্তর দিকে। তবে দক্ষিণ দিকে একান্ত প্রার্থনা কক্ষে প্রবেশের জন্যও রয়েছে আরেকটি প্রবেশপথ, যেটি আবার খিলান দিয়ে অলঙ্কৃত। এ প্রবেশপথগুলো বাদ দিলেও এর পূর্ব ও পশ্চিমে মোট ছয়টি করে বারোটি উন্মুক্ত জানালা রয়েছে। গির্জাটির ফ্যাসেড ট্রিটমেন্ট ও অলঙ্করণের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায় বিশেষ বৈচিত্র্য। এর পোর্চ বে নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে চারটি অষ্টকোণী স্তম্ভ। আর হলঘরে প্রবেশের তিনটি সেমি সার্কুলার খিলানপথের কথা আগেই বলা হয়েছে। এগুলোর চারপাশে বেশ সুন্দর অলঙ্করণ লক্ষ করা গেছে। এর ওপর রয়েছে একটি সুদৃশ্য ক্রুশ ও ঘণ্টা যা বিশেষ ধরনের গথিক খিলানের মধ্যে প্রোথিত। খিলানাকৃতির প্রবেশ পথের স্প্যানড্রেল, দরজার উপরিভাগ ও জানালার উপরের অংশ জালি অলঙ্করণে সুশোভিত। পূর্ব ও পশ্চিমের প্রতিটি জানালাতেই সুদৃশ্য অলঙ্করণ লক্ষ করা যায়। পুরো স্থাপত্যটির ওপর যে প্যারাপেট, সেখানে রয়েছে কণিক আকৃতির কিয়স্ক বা ছত্রী। অন্যদিকে গির্জার উত্তর-পশ্চিম কোণে গ্রট্টো অবস্থিত।

 

কিভাবে যাবেন?

সেইন্ট নিকোলাস চার্চে যাওয়ার জন্য গাজীপুরের টঙ্গী আসতে হবে। টঙ্গী হতে কালীগঞ্জের বাস কিংবা সিএনজি দিয়ে আহসানুল্লা মাষ্টার ফ্লাইওভার পেরিয়ে নলছটা সেতু হয়ে সেইন্ট নিকোলাস চার্চে যাওয়া যায়। নলছটা সেতু থেকে সেইন্ট নিকোলাস চার্চের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার।

 

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে একদিনে সেইন্ট নিকোলাস চার্চ ঘুরে ফিরে আসা যায়। তবে প্রয়োজনে রাত্রিযাপনের জন্য গাজীপুরে শহরের চৌরাস্তা ও কোণাবাড়ি বাস স্ট্যান্ডের কাছে আল মদিনা আবাসিক হোটেল, হোটেল জলি, হোটেল অনামিকা, জাপান আবাসিক হোটেল, হোটেল ড্রিম ল্যান্ড আবাসিক, হোটেল এলিজা ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি আবাসিক হোটেলে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া গাজীপুরে সারাহ, সোহাগ পল্লী, ভাওয়াল, গ্রিন ভিউ, স্প্রিং ভ্যালী, ছুটি ও নক্ষত্র বাড়ির মতো বেশকিছু অত্যাধুনিক রিসোর্ট রয়েছে। তবে রিসোর্টে থাকার ক্ষেত্রে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে।

 

কোথায় খাবেন?

গাজীপুরে কথাকলি, ক্যাফে কস্তুরি, স্কাই ওয়ার্ড, হোটেল বাংলা ঘর ও রূপসা রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া সেন্ট নিকোলাস চার্চের কাছে নাগরী বাজারে হালকা চা-নাস্তা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?