নিঝুম দ্বীপ | Nijhum Dwip 17/04/2021


PC:


নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে দ্বীপটি জাহাজমারা ইউনিয়ন হতে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ইউনিয়নের মর্যাদা লাভ করে। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান, আবার কেউ কেউ একে ইছামতীর চরও বলত। এ চরে প্রচুর ইছা মাছ (চিংড়ীর স্হানীয় নাম) পাওয়া যেত বলে একে ইছামতির চরও বলা হত। প্রায় ১৪,০৫০ একর আয়তনের এই দ্বীপটি কামলার চর, বল্লার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামের চারটি দ্বীপ ও কয়েকটি চরের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও  ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।

 

ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন। মূলত বাল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং মৌলভির চর - এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জন বসতি গড়ে উঠে। ১৯৭০ এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটিতে কোন প্রানের অস্তিত্ব ছিলনা। ঘূর্ণিঝড়ের পরে তৎকালীন হাতিয়ার জননন্দিত নেতা আমিরুল ইসলাম কালাম সাহেব দ্বীপটিতে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন যে কোন প্রানের অস্তিত্ব নাই, তাই তিনি আক্ষেপের সুরে বলে ছিলেন হায় নিঝুম! সেখান থেকে দ্বীপটির নতুন নাম নিঝুম দ্বীপ।

 

বর্তমানে নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। নিঝুম দ্বীপের মতো অবশ্য দেশের অন্য কোথাও একসাথে এত চিত্রা হরিণ দেখা যায় না। শীতকালে নিঝুম দ্বীপে সরালি, জিরিয়া, লেনজা, পিয়ং, রাঙ্গামুড়ি, চখাচখি, ভূতিহাঁস, রাজহাঁস, কাদাখোঁচা, বাটান, জিরিয়া, গুলিন্দা, গাংচিল, কাস্তেচরা, পেলিক্যান ইত্যাদি হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটে। পাখি দেখতে চাইলে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ কবিরাজের চর ও দমার চর উত্তম জায়গা। স্থানীয় পাখির মধ্যে চোখে পড়ে সামুদ্রিক ঈগল, বক শঙ্খচিল। এছাড়া দ্বীপে রয়েছে হরিণ, বন্য শূকর, শেয়াল, বানর এবং নানা রকম সাপ।

 

নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার উপায়

বাসে চড়ে ঢাকা থেকে নোয়াখালী হয়ে নিঝুম দ্বীপ

বাসে চড়ে নিঝুম দ্বীপ যেতে চাইলে নোয়াখালীর সোনাপুর নামতে হবে। ঢাকা সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে একুশে এক্সপ্রেস, মুনলাইন এন্টারপ্রাইজ, হিমাচল এক্সপ্রেসের বাসে নোয়াখালীর সোনাপুর যেতে পারবেন। ধানমন্ডি জিগাতলা কাউন্টার থেকে একুশে পরিবহনের বাস নোয়াখালীর সোনাপুর জন্য রাত ১০ টা ২০ মিনিটে ছাড়ে। এসব বাসের নন-এসি এবং এসি কোচের ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০টাকা পর্যন্ত।

নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে সিএনজি বা অন্য যানবাহনে করে চেয়ারম্যান ঘাট যেতে হবে, সিএনজি রিজার্ভ করে চেয়ারম্যান ঘাটে আসতে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া লাগবে। একটা সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৫ জন বসতে পারবেন। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া যাওয়ার বিভিন্ন সি-ট্রাক, ট্রলার ও স্পীড বোট পাবেন। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া যাওয়ার সি-ট্রাক, ট্রলার এবং স্পীড বোট ভাড়া জনপ্রতি ৯০, ১২০-১৫০ এবং ৪০০ টাকা। হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে নেমে মোটর সাইকেল রিজার্ভ করে মোক্তারিয়া ঘাট পৌঁছাতে হবে, মোটর সাইকেল ভাড়া দুই জন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা লাগবে। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে চড়ে ২২ টাকা ভাড়ায় নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে এসে মোটর সাইকেলে করে নামার বাজার আসতে দুই জনের ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা।

উল্লেখ্য: নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় সি-ট্রাক ছাড়ে, আর নলচিরা থেকে নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট আসার ফিরতি সী ট্রাক সকাল ১০ টায় ছাড়া।

 

ট্রেনে করে ঢাকা থেকে নোয়াখালী হয়ে নিঝুম দ্বীপ

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে নিঝুম দ্বীপ যেতে চাইলে নোয়াখালীর মাইজদি ট্রেন থেকে নামতে হবে। ঢাকার কমলাপুর থেকে বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য ৬ দিন বিকাল ৪ টা ২০ মিনিটে উপকুল এক্সপ্রেস নামক আন্তঃনগর ট্রেন নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, মাইজদি পৌঁছাতে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে। ট্রেনের টিকেটের শ্রেনী ভেদে ভাড়া ২৩০ থেকে ৫০৩ টাকা পর্যন্ত।

মাইজদি থেকে চেয়ারম্যান ঘাট আসার সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর লোকালে আসতে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে উপরোক্ত উপায়ে নিঝুম দ্বীপ যেতে পারবেন।

 

লঞ্চে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়া হয়ে নিঝুম দ্বীপ

ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ায় উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে একটি মাত্র লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চটি হাতিয়ার তমুরদ্দী ঘাটে পৌঁছায় পরদিন সকাল ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে। তমুরদ্দী ঘাট থেকে ঢাকায় ফেরার লঞ্চ দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে ছাড়ে। লঞ্চ ভাড়া ডেক – ৩৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন – ১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন – ২২০০ টাকা।

হাতিয়ার তমুরদ্দী ঘাটে নেমে মোটর সাইকেল যোগে মোক্তারিয়া ঘাটে আসতে হবে। মোক্তারিয়া ঘাটে আসতে দুইজনের ভাড়া লাগবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নিঝুমদ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে যেতে ট্রলার ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ২২ টাকা। আর বন্দরটিলা ঘাট থেকে মোটর সাইকেলে করে নামার বাজার যেতে দুইজনকে ১০০ টাকা খরচ করতে হবে।

আবার তমুরদ্দী ঘাট থেকেও সরাসরি নিঝুমদ্বীপ নামার বাজার যেতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ১০ টার সময় তমুরদ্দী ঘাট থেকে কিছু ফিশিং ট্রলার সরাসরি নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার যায়, এগুলিতে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন। এছাড়া ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার যেতে ট্রলারের সাইজ অনুযায়ী ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা লাগতে পারে।

 

বিশেষ নির্দেশনা:
১। যদি কোন কারনে হাতিয়ার তমুরুদ্দি যাবার এম.ভি. ফারহান ৩/৪ লঞ্চ করেন তবে ঐ দিনই বিকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে যাত্রা আরম্ভকারী এম.ভি. টিপু-৫ অথবা এম.ভি. পানামা লঞ্চে তজুমুদ্দিন কিংবা মনপুরা ঘাটে নেমে পুনরায় এম.ভি. ফারহান ৩/৪ লঞ্চ ধরতে পারবেন। আবার চাইলে মনপুরা ঘাট থেকে ট্রলারে করে সহজে হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটে যেতে পারবেন।

২। আর যদি এম.ভি. টিপু-৫ এবং এম.ভি. পানামা লঞ্চও মিস করে বসেন তবে দ্রুত এম.ভি. ফারহান-৬ অথবা এম.ভি. ফারহান-৭ লঞ্চে চড়ুন। এই লঞ্চ গুলোর যাত্রার সময় ৬ টা ৩০ মিনিট হলেও এরা ছাড়তে একটু দেরী করে। এই লঞ্চে তজুমুদ্দিন ঘাটে গিয়ে এম.ভি. ফারহান-৩/৪ লঞ্চ ধরতে পারবেন। তজুমুদ্দিন ঘাট থেকেও ট্রলারে চেপে হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটে যাওয়া যায়।

এই ৬ টি লঞ্চই একই মালিকের। প্রয়োজনে নিচের নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন।
এম.ভি. ফারহান ৩ – 01785-63036501785-63036601785-630367
এম.ভি. ফারহান ৪ – 01785-63036801785-63036901785-630370

 

লঞ্চে চট্রগাম সদরঘাট থেকে হাতিয়া হয়ে নিঝুম দ্বীপ

চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে শুক্রবার ও রবিবার বাদে সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯ টায় এম.ভি.বার আউলিয়া, এমভি আব্দুল মতিন এবং এম.বি মনিরুল হক স্টীমার হাতিয়া নলচিরা ঘাট পর্যন্ত চলাচল করে। চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে হাতিয়ায় আসতে ভাড়া লাগবে: চেয়ার ক্লাস – ৩৫০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেনী – ১১১০ টাকা এবং প্রথম শ্রেনী – ২২১৫ টাকা।

হাতিয়ার নলচিরা থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়ে মোক্তারিয়া ঘাট এসে উপরের বর্নিত উপায়ে নিঝুম দ্বীপে যেতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

নিঝুম দ্বীপে তেমন ভালো খাবার না পেলেও সামুদ্রিক মাছ, মোটা চালের ভাত, মাংস, রুটি ইত্যাদি পাবেন। আলতাফ চাচার হোটেলের (হোটেল আসিফ) খাবারের মান অন্য সব হোটেল থেকে বেশ ভাল। আর আগে থেকে খাবারের অর্ডার করে গেলে তুলনামূলক ভাল খাবার পাবেন। এছাড়া নামার বাজারে বেশ কিছু খাবার হোটেল রয়েছে, যেখানে সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ী ভাজা খেতে বেশ ভালো। বার বি কিউ এর জন্য নিঝুম রিসোর্ট এর ম্যানেজার সবুজ ভাইকে বললে সব ব্যবস্থা করে দিবে। নিঝুম দ্বীপে ২০ থেকে ২৫ টাকায় ডাব পাওয়া যায়।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?