বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স | Bir Shreshtha Noor Mohammad Sheikh 18/01/2022


PC:


বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ শেখ (Bir Shreshtha Noor Mohammad Sheikh) ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামে (বর্তমান নূর মোহাম্মদ গ্রাম) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে যশোর অঞ্চলের ৮ নং সেক্টরে যোগদান করেন। এই মহান বীরের দেশপ্রেম ও বীরত্বে পরবর্তী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নড়াইলের চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদনগরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে।

 

১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোর সেক্টরে বদলির পর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল. এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তাঁর দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না।

 

বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

 

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর স্বাধীনতা যুদ্ধে নূর মোহাম্মদের অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশ প্রেমের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় ভাবে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার তাঁর জন্মস্থানে একটি ট্রাস্ট এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তুলেছে।

 

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স সরকারী ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সড়ক পথে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট বা মাওয়া ঘাট পার হয়ে নড়াইলে যেতে পারবেন। নড়াইল সদর থেকে অটো রিকাশায় চন্ডিবরপুর হয়ে নূর মোহাম্মদ গ্রামে যেতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

নড়াইলে রাত্রি যাপনের জন্য ডলফিন, সম্রাট, মর্ডান, অরুনিমা রিসোর্ট, চিত্রা রিসোর্টের মতো বেশ কিছু আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

 

কোথায় খাবেন?

ফ্রেন্ডস ক্যাফে, মধুর ক্যান্টিন, সোনারগাঁও হোটেল এবং ফরহাদ ফুড ভিলজ সহ নড়াইলে বিভিন্ন মানের খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?