দয়ারামপুর রাজবাড়ী | Dayarampur Rajbari 20/01/2022


PC:


দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংস্কৃতি সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে রয়েছে মূল্যবান বহু ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও স্থাপত্যের নিদর্শন। আর বাংলাদেশের এই নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে নাটোরের দয়ারামপুর রাজবাড়ী (Dayarampur Rajbari) অন্যতম।

 

দয়ারাম রায় সিংড়া থানার কলম গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কলমের নরসিংহ রায়ের সন্তান তিনি অনুমান ১৬৮০ সালে তার জন্ম। প্রথমে রাজা রামজীবনের একজন সাধারণ কর্মচারী এবং প্রতিভাবলে নাটোর রাজের দেওয়ান পর্যন্ত হয়েছিলেন। রামজীবন তাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদ তার কাছে গচ্ছিত রাখতেন। রাজা সীতারাম রায়ের পতনের পর দয়ারাম নাটোর রাজ্যের একজন পরাক্রমশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

 

নিঃসন্তান রামজীবন দেওয়ান দয়ারামের পরামর্শেই রামকান্তকে দত্তক গ্রহণ করেন এবং পুত্র রামকান্ত ও ভ্রাতুষ্পুত্র দেবী প্রসাদের মধ্যে জমিদারী ভাগ করে নিতে চান। কিন্তু দেবী প্রসাদের একগুঁয়েমী মনোভাবের জন্য তিনি সমগ্র জমিদারী রামকান্তের নামে উইল করে দেন। রামকান্তের বিবাহের সময় তিনিই ছিলেন সর্বময় কর্তা। কন্যা পছন্দ, দিন-তারিখ নির্ধারণ, যৌতুক আদায়, আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ সব কিছুর ভারই অর্পিত ছিল দেওয়ান দয়ারামের উপর।
রামজীবন মৃত্যুকালে দয়ারাম রায়কেই পুত্রের একমাত্র অভিভাবক নিযুক্ত করে যান। পুত্র রামকান্ত তখন মাত্র বালক, তাই রাজশাহীর মতো ব্যাপক ও বিস্তৃত জমিদারী পরিচালনা করা তার পক্ষে অসম্ভব। এজন্য প্রকৃত কর্তৃত্ব ছিল দয়ারাম রায়ের উপর। তাঁর সুদক্ষ ও নিপুণ পরিচালনায় জমিদারীর মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

 

যশোরের রাজা সীতারাম রায় বিদ্রোহী হলে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ নাটোর রাজের দেওয়ান দয়ারাম রায়ের সাহায্যেই দমন ও পরাজিত করে নাটোর কারাগারে বন্দী করেন। সীতারাম রায়কে পরাজিত করায় নবাব সরকারের প্রভাব বেড়ে যায়। তখনই তিনি ‘‘রাই রাইয়া’’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৭৬০ সালে ৮০ বছর বয়সে তিনি ৫ কন্যা, ১ পুত্র ও প্রচুর সম্পদ রেখে ইহলীলা ত্যাগ করেন। দেওয়ান দয়ারাম রায়ই প্রথমে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী নির্মাণ করেন যা এখন উত্তরা গণভবন নামে খ্যাত।

 

বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ১৯৭৪ সালে নাটোর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী দয়ারামপুর রাজবাড়ী ও তাঁর পার্শবর্তী এলাকা জুড়ে স্থাপিত হয় কাদিরাবাদ সেনানিবাস। ১৯৭৮ সালে “ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং” ঢাকা সেনানিবাস থেকে এই সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। দিঘাপতিয়া রাজা প্রমথনাথ রায়ের (১৮৪৯-১৮৮৩) জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রমদানাথ রায় (১৮৭৩-১৯২৫) ১৮৯৪ সালে দিঘাপতিয়া জমিদারীর দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তাঁর তিন কনিষ্ঠ ভ্রাতা কুমার বসন্তকুমার রায় (১৮৭৮-১৯২৫), কুমার শরৎকুমার রায় (১৮৭৬-১৯৪৬), এবং কুমার হেমেন্দ্রকুমার রায়ের (১৮৭৭-১৯৪৩) জন্য বড়াল নদীর তীরে নন্দীকুজা নামক স্থানে স্থাপিত হয় “দিঘাপতিয়া জুনিয়ার রাজ দয়ারামপুর এস্টেটস” এবং নির্মিত হয় নয়নাভিরাম রাজবাড়ী। তাদের প্রপিতামহের পিতামহ, নাটোরের রানী ভবানীর (১৭১৬-১৭৯৫) অসাধারণ দক্ষদেওয়ান ও দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা, দয়ারাম রায়ের (১৬৮০-১৭৬০) নামানুসারে এই এলাকার নতুন নামকরণ করা হয় দয়ারামপুর।

 

কুমার বসন্তকুমার রায়ের মৃত্যুর পর কুমার শরৎকুমার রায় দয়ারামপুর এস্টেটস-এর পরিচালনার দায়িত্বভার নেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই রাজবাড়ীতেই বসবাস করতেন। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ার কোরের স্বাধীনতা যুদ্ধের (১৯৭১) বীর সৈনিক শহীদ লেঃ কর্নেল আব্দুল কাদিরের নামানুসারে অত্র সেনানিবাসের নামকরণ করা হয় “কাদিরাবাদ সেনানিবাস”।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা হতে রাজশাহী সড়ক পথে নাটোর জেলার বনপাড়া তিন রাস্তা মোড়ে নেমে সড়ক পথে কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট হয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা হেড কোয়ার্টার। নাটোর শহর থেকে অটো বা বাসযোগে দয়ারামপুর রাজবাড়ি যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

নাটোরে মুটামুটি মানের কতগুলো আবাসিক হোটেল ও বোডিং রয়েছে। হোটেল ভি.আই.পি এবং হোটেল রুখসানায় সিংগেল কেবিন ২৫০ থেকে ৩০০ ও ডাবল কেবিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

উদরপূর্তির জন্য নাটোরে বেশকিছু বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। নিজের পছন্দ মত যেকোন রেস্টুরেন্টে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। সমগ্র বাংলাদেশে চলনবিল এবং রানী ভবানী সুস্বাদু মাছের সুনাম ছড়িয়ে আছে। তাই নাটোর ভ্রমনকালে মাছ খাওয়ার এই সুযোগ মিস করা মোটেও ঠিক হবে না। সাথে নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা খেয়ে সাথে করে নিয়েও আসতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?