উত্তরা গণভবন | Uttara Gonovoban 20/01/2022


PC:


দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি (Dighapatia Palace) বা উত্তরা গণভবন (Uttara Gonovoban) বাংলাদেশের নাটোর শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে এককালের দিঘাপাতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান এবং বর্তমান উত্তরা গণভবন বা উত্তরাঞ্চলের গভর্মেন্ট হাউস।

 

নাটোরের রানী ভবানী নায়েব দয়ারাম রায়ের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দিঘাপতিয়া পরগনা উপহার দেন। এখানে তিনি গড়ে তোলেন বেশকটি প্রাসাদ। প্রায় ৪৩ একর জায়গাজুড়ে চারদিকে লেক ও প্রাচীর বেষ্টিত এ রাজবাড়িটিতে ছোট-বড় ১২টি ভবন আছে। রাজা প্রসন্ননাথের অবক্ষমূর্তি দক্ষিণ দিকে কুমার ভবন ও অতিথিশালা। মূল প্রাসাদ ভবনে রাজার সিংহাসন, আক্রমণ ঠেকানোর বর্ম এবং তলোয়ার আছে। রাজ প্রাসাদের ভেতরে আছে ইতালি থেকে সংগৃহীত ভাস্কর্যে সজ্জিত বাগান। উত্তরা গণভবনের প্রবেশ পথে চারতলা বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির প্রবেশদ্বার। আর এর চূড়ায় রয়েছে বিলেতের কোক অ্যান্ড টেলভি কোম্পানির শতবর্ষ প্রাচীন ঘণ্টা ঘড়ি।

 

১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণবেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে দিঘাপতিয়ার মহারাজাদের এই বাসস্থানকে ১৯৬৭ সালের ২৪শে জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আব্দুল মোনায়েম খান দিঘাপতিয়ার গভর্ণরের বাসভবন হিসেবে উদ্বোধন করেন। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এর নাম পরিবর্তন করে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন।

 

এখানে আছে নীলমণিলতা, হাপরমালি, পারিজাত, রাজ-অশোক, সৌরভী, কর্পূর, যষ্টিমধু, হৈমন্তী, পেয়ালি, বনপুলক, তারাঝরা, সেঁউতি, মাধবী, সাইকাসসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ। উত্তরা গণভবন চত্বরে গোলপুকুর, পদ্মপুকুর, শ্যামসাগর, কাছারিপুকুর, কালীপুকুর, কেষ্টজির পুকুর নামে ছয়টি পুকুর রয়েছে। প্রবেশপথের সামনে প্রথমেই চোখ যাবে ডান দিকের বিশাল পরিখায়, যা পুরো রাজপ্রাসাদ ঘিরে আছে। একটু এগিয়ে বামে গণপূর্ত অফিস, সে সময়কার গাড়ির গ্যারেজ। আছে গোলাপবাগান, বিশাল মাঠ। এখানে দোতলা হলুদ ভবনটি হলো কুমার প্যালেস, যার নিচতলাটি টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহূত হতো। রয়েছে একতলা তহশিল অফিস। আর আছে সে সময়কার চারটি কামান। বিশাল রাজদরবারটি আছে। রাজপ্রাসাদ-সংলগ্ন বাগানে জমিদার দয়ারামের একটি ভাস্কর্য তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

 

প্রাসাদের পিছন দিকে রয়েছে ফোয়ারা সহ একটি সুদৃশ্য বাগান। বাগানের এক কোণে রয়েছে প্রমাণ আকৃতির মার্বেল পাথরের তৈরি একটি নারী মূর্তি। ১৯৪৭ সালের পর অবশ্য এ ভবনে আর কেউ বসবাস করেন নি। বর্তমানে এটি দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের অণুমতি সাপেক্ষে উন্মুক্ত রয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন?

নাটোর বাস স্টপ কিংবা রেলস্টেশন থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উত্তরা গণভবন যেতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে। অথবা নাটোরের যে কোন জায়গা থেকেই উত্তরা গণভবনে যাওয়ার পর্যাপ্ত রিক্সা বা অটোরিক্সা পাবেন। নাটোরের মাদ্রাসা মোড় থেকে উত্তরা গণভবন যেতে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগে।

 

কোথায় থাকবেন?

নাটোরে মুটামুটি মানের কতগুলো আবাসিক হোটেল ও বোডিং রয়েছে। হোটেল ভি.আই.পি এবং হোটেল রুখসানায় সিংগেল কেবিন ২৫০ থেকে ৩০০ ও ডাবল কেবিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

উদরপূর্তির জন্য নাটোরে বেশকিছু বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। নিজের পছন্দ মত যেকোন রেস্টুরেন্টে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। সমগ্র বাংলাদেশে চলনবিল এবং রানী ভবানী সুস্বাদু মাছের সুনাম ছড়িয়ে আছে। তাই নাটোর ভ্রমনকালে মাছ খাওয়ার এই সুযোগ মিস করা মোটেও ঠিক হবে না। সাথে নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা খেয়ে সাথে করে নিয়েও আসতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?