কাকিনা জমিদার বাড়ী | Kakina Zamindar Bari 23/01/2022


PC:


বৃহত্তর রংপুর জেলার অন্যতম জমিদারী ছিল কাকিনার জমিদার। ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে মোগলদের দেয়া সনদমূলে কাকিনার জমিদারির সূচনা হয়। সে সময় ঘোড়াঘাটের মোগল ফৌজদার এবাদত খাঁ কোচ রাজা মহিন্দ্র নারায়নের সঙ্গে এক যুদ্ধে কোচ রাজ্যের ৬টি পরগনার মধ্যে কাকিনা, ফতেপুর ও কাজিরহাট দখল করে নেয়।

 

বৃহত্তর রংপুর জেলার জমিদারদের মধ্যে এই কাকিনা জমিদারদের (Kakina Zamindar) বেশ সুনাম ও প্রতিপত্তি ছিল। তৎকালীন সময়ে আওরঙ্গজেব দিল্লীর মোগল সম্রাট ছিলেন। আর আওরঙ্গজেবের মামা শায়েস্তা খাঁ ছিলেন বাংলার সুবেদার। শায়েস্তা খাঁর পুত্র এবাদত খাঁ পরগনা দখলের পর কোচবিহারের নাজির শত্ত নারায়নকে কর নির্ধারণ পূর্বক এর জমিদারির বন্দোবস্ত করতে অসম্মত হলে কাকিনা পরগনার প্রভাবশালী কর্মচারী রঘু রামের চার পুত্রের মধ্যে রামনারায়নকে কাকিনা জমিদারি সনদ প্রদান করেন। এরপর রাজা রায় চৌধুরী, রুদ্র রায়, রসিক রায়, অলকা দেবী, রাম রুদ্র রায় চৌধুরী, শম্ভুচরণ রায় চৌধুরী পর্যায়ক্রমে কাকিনার জমিদারী লাভ করেন।

 

১৮৬০ সালে শম্ভুচরণ রায় চৌধুরী নিজ অর্থায়নে বৃহত্তর রংপুর জেলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘রঙ্গপুর প্রকাশ’ বের করেন। এছাড়া শম্ভুসাগর নামে একটি বিশালাকার দিঘী খনন করেন। পরবর্তীতে ১৮৭৪ সালে শম্ভুচরণ রায় চৌধুরীর দত্তক পুত্র মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরীর উপর জমিদারীর দায়িত্ব অর্পিত হয়। মহিমা রঞ্জন প্রজা বৎসল এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সেবী জমিদার ছিলেন। তিনি কাকিনায় একটি বিশাল লাইব্রেরী গড়ে তোলেন। ১৯০৮ সালে বগুড়ার ‘‘উডবার্ণ’’ লাইব্রেরীটির তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। রংপুর জেলার রেলপথ প্রসারে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। মহেন্দ্রনগর এবং মহিমাগঞ্জ রেল স্টেশন দুটি তার পুত্র ও নিজ নামে কীর্তিকে স্মরণীয় করে রেখেছে। কাকিনায় তিনি একটি জাদুঘরও স্থাপন করেন। রংপুর সাহিত্য পরিষদের তিনি প্রথম সভাপতি (১৯০৭)।

 

১৯২৫ সালে নিয়ন্ত্রণহীন অর্থ ব্যয় এবং বিলাসিতার কারণে মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরীর জমিদারী নিলাম হয়ে যায়। এরপর তিনি সপরিবারে দার্জিলিং চলে যান এবং ১৯৩৯ সালে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী ও তাঁর পূর্বদের জমিদারিই বর্তমানে কাকিনা জমিদার বাড়ি হিসাবে পরিচিত।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে লালমনিরহাট এসে সেখান থেকে বুড়িমারী স্থল বন্দরগামী পথে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে কাকিনা বাজার বাসস্ট্যান্ড পৌঁছাতে পারবেন। কাকিনা বাজার বাসস্ট্যান্ড হতে মাত্র ২০০ গজ পশ্চিমে কাকিনা জমিদার বাড়ির ভগ্নাশেষের অবস্থান।

 

এছাড়া ট্রেনে চড়ে লালমনিরহাট থেকে সরাসরি কাকিনা রেল স্টেশন যাওয়া যায়। কাকিনা রেল ষ্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে আছে এই জমিদার বাড়ি। আর রংপুর থেকে কাকিনা জমিদার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৬৬ কিলোমিটার।

 

কোথায় থাকবেন?

রাত্রিযাপনের জন্য লালমনিরহাটে বেশ কয়েকটি মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে খান হোটেল, হোটেল সীমান্ত আবাসিক, হোটেল অতিথি, হোটেল অবসর, হোটেল মাসুদ ও উত্তরা হোটেল উল্লেখ্য। এছাড়া কাকিনা ও কালিগঞ্জে রাত্রিযাপনের জন্য সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।

 

কোথায় খাবেন?

লালমনিরহাটে প্যারাডাইস, সীমান্ত ক্যান্টিন, পলাশী, পালকি, নিউ শান্তি এবং মুক্তিযোদ্ধা হোটেল ছাড়াও বেশকিছু খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?