ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়ীত সিরাজগঞ্জ জেলাটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। তাঁতশিল্প, নদীরক্ষা বাধ, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর অববাহিকা, বিভিন্ন ব্রীজ, পুরান কালে নির্মিত অনেক মসজিদ, ইকো পার্ক, বিভিন্ন খ্যাতিনামা ব্যক্তিদের বসতবাড়ি জেলাটিকে এসে দিয়েছে এক অনন্য পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি। সেই খ্যাতি আরও বহুগুনে বারিয়ে দেয় সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরীত কাছারি বাড়ীটি (Robindro Kachari Bari)।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈত্রিক জমিদার বাড়িটি রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি নামে পরিচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই বাড়ীটিকে নীলকুঠি হিসাবে ব্যবহার করা হতো। ১৮৪২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে নিলামে বাড়ীটি কিনে নেন। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম শাহজাদপুর কুঠিবাড়িতে আসেন এবং ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত বহুবার তিনি এখানে এসে বসবাস করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য সব সাহিত্যকর্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়ি থেকে ‘সোনার তরী’ কাব্যের ‘ভরা ভাদরে’, ‘দুইপাখি’, ‘আকাশের চাঁদ’, ‘হৃদয় যমুনা’, ‘প্রত্যাখ্যান’, ‘বৈষ্ণব কবিতা’, ‘পুরস্কার’ ইত্যাদি অসাধারণ কবিতা রচনা করেছেন। ‘চৈতালী’ কাব্যের ‘নদীযাত্রা’, ‘শুশ্রূষা’,‘ইছামতি নদী’, ‘বিদায়’, ‘আশিস-গ্রহণ’ ইত্যাদি কবিতা এবং ‘কল্পনা’ কাব্যের ‘যাচনা’, ‘বিদায়’, ‘নরবিরহ’, ‘মানস-প্রতিমা’, ‘লজ্জিতা’, ‘সংকোচ’, ইত্যাদি বিখ্যাত গানগুলোও রচনা করেছেন। তাঁর শাহজাদপুরে রচিত ছোটগল্পের মধ্যে ‘পোষ্টমাস্টার’, ‘ছুটি’, ‘সমাপ্তি’, ‘অতিথি’ ইত্যাদি বিখ্যাত। আর প্রবন্ধের মধ্যে ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’, ‘পঞ্চভূত’, এর অংশবিশেষ এবং ‘ছিন্নপত্র’ ও ছিন্নপত্রাবলীর আটত্রিশটি পত্র রচনা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তার ‘বিসর্জন’ নাটকও এখানে রচিত।
শাহজাদপুর ছিল রবীন্দ্রনাথের অত্যান্ত প্রিয় এবং ভালোবাসার একটি স্থান। তাঁর ভালোবাসার কথা তিনি বিভিন্ন লেখায় বিশেষ করে ‘ছিন্নপত্র’ ও ‘ছিন্নপত্রাবলী’ তে গভীর আবেগ এবং আন্তরিকতার সাথে উল্লেখ করেছেন। প্রায় দশ বিঘা জায়গার উপর ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই পুরো ভবনটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে সাধারণ দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষ রয়েছে । এই ১৬টি কক্ষেই রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের এবং নানা সময়ের বিচিত্র ভঙ্গির সব ছবি । তাঁর একদম ছোটবেলা থেকে মৃত্যুশয্যায় ছবি পর্যন্ত এখানে সংরক্ষিত আছে। তাছাড়াও এখানে কবির নানান রয়েছে সকল শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র।
ঠাকুর পরিবারে জমিদারি ভাগাভাগির ফলে শাহজাদপুরের জমিদারি চলে যায় রবীন্দ্রনাথের অন্য শরীকদের হাতে। তাই ১৮৯৬ সালে তিনি শেষ বারের মতো শাহজাদপুর থেকে চলে যান। এর পরে তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে ১৯৬৯ সালে শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষণ করার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নেয়া হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই রবীন্দ্র কাছারি বাড়িকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
প্রবেশমূল্য ও সময়সূচী
রবিবার ও অন্যান্য সরকারী ছুটি ব্যাতিত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি জাদুঘর খোলা থাকে। তবে শুক্রবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নামাজের বিরতি থাকে। আর সোমবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘরে প্রবেশ করা যায়। বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।
কিভাবে যাবেন?
সিরাজগঞ্জ জেলা শহর পৌঁছে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
সিরাজগঞ্জ শহরে হোটেল আলিশান, হোটেল অনিক, আরমানী কমপ্লেক্স, জয়সাগর রেস্ট হাউজ ও উল্লাপাড়া ডাক বাংলোতে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
শাহজাদপুরে হোটেল ঘরোয়া, ফয়সাল ক্যাফে, আপ্যায়ন হোটেল, হাজি বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে।