লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান | Lawachara National Park 03/05/2021


PC:


PC : Pallabkabir | CC BY-SA 4.0

বাংলাদেশের যে ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যান আছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। ঘন সবুজ বনকে ভেদ করে পড়ে সূর্যের আলো, গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে চলে এই আলো-ছায়ার খেলা। ঝোপঝাড় চিড়ে ঠিকই কানে আসে অসংখ্য পাখির ডাক। মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায় নানা প্রজাতির বানরের। হয়তোবা দেখা হয়ে যেতে পারে বিপন্ন প্রায় উল্লুকের পরিবারের সাথে। রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত সিলেটের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান গেলে এমনই চমৎকার আরণ্যক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে।

 

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল (আংশিক) উপজেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পশ্চিম পাশে এ উদ্যানের প্রবেশপথ। ১২৫০ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট এই চিরহরিৎ বনকে প্রাকৃতিক জাদুঘর বললেও কম হবে। মজার ব্যাপার হলো,জুলভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে করা ‘অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ’ ছবিটির একটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল এই বন ঘেঁষে যে রেলপথ চলে গেছে সেখানে।

 

উঁচু নিচু টিলা জুড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গঠন। রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ বন্যপ্রাণী ও গাছপালা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরিসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। এর অন্যতম আকর্ষণ বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক। গভীর জঙ্গলের উঁচু ডালে এরা পরিবারসহ বসবাস করে। এছাড়া চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মেছো বাঘ, শিয়াল, মায়া হরিণ ইত্যাদিও দেখা যায় এ বনে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আছে অজগরসহ নানারকম সাপ। এছাড়া হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপও এ বনের উল্লেখযোগ্য সরীসৃপ। এখানকার মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি। বনের ভেতর দিয়েই বয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ছড়া। তবে এসব ছড়াগুলোর বেশিরভাগই পানিতে পূর্ণ থাকে বর্ষাকালে।

 

উদ্যানে বেড়ানোর তিনটি পথ আছে। একটি তিন ঘণ্টার, একটি এক ঘণ্টার এবং অন্যটি আধ ঘণ্টার পথ। উদ্যানের ভেতরে একটি খাসিয়া পল্লীও আছে।

 

আধ ঘণ্টার পথ

এ পথটির শুরু রেললাইন পেরিয়ে হাতের বাঁ দিক থেকে। পথের শুরুতে উঁচু উঁচু গাছগুলোতে দেখা মিলতে পারে কুলু বানরের। নানারকম গাছ-গাছালির ভেতর দিয়ে তৈরি করা এ হাঁটা পথে চলতে চলতে জঙ্গলের নির্জনতায় শিহরিত হবেন যে কেউ। এ ছাড়া এ পথের বড় বড় গাছের ডালে দেখা মিলবে বুনো অর্কিড। নির্দেশিত পথে হাতের বাঁয়ে বাঁয়ে চলতে চলতে এই পথ আবার শেষ হবে ঠিক শুরুর স্থানে।

 

এক ঘণ্টার পথ
এক ঘণ্টার ট্রেকিংয়ের শুরুতেই দেখবেন বিশাল গন্ধরুই গাছ, যার আরেক নাম কস্তুরী। এগাছ থেকে নাকি সুগন্ধি তৈরি হয়। এপথে দেখবেন ঝাওয়া, জগডুমুর, মুলীবাঁশ, কাঠালীচাঁপা, লেহা প্রভৃতি গাছ। আরও আছে প্রায় শতবর্ষী চাপলিশ আর গামারি গাছ। পথের পাশে থাকা ডুমুর গাছের ফল খেতে আসে উল্লুক, বানর ও হনুমান ছাড়াও বনের বাসিন্দা আরও অনেক বন্যপ্রাণী। মায়া হরিণ আর বন মোরগেরও দেখা মিলতে পারে।

 

দুই ঘণ্টার পথ

তিন ঘণ্টার হাঁটা পথটিও বেশ রোমাঞ্চকর। পথের বাঁয়ে খাসিয়াদের বসত মাগুরছড়া পুঞ্জি। এ পুঞ্জির বাসিন্দারা মূলত পান চাষ করে থাকেন। ১৯৫০ সালের দিকে বনবিভাগ এ পুঞ্জি তৈরি করে। পথে দেখা মিলবে বিশাল বাঁশ বাগান। বাগানে আছে কুলু বানর আর বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর। লজ্জাবতী বানর নিশাচর প্রাণী। এরা দিনের বেলায় বাঁশঝারে ঘুমিয়ে কাটায়। রয়েছে নানান প্রজাতির পাখি। এ পথের শেষের দিকে দেখা মিলতে পারে বনের অন্যতম আকর্ষণ উল্লুক পরিবার। এরা বনের সবচেয়ে উঁচু গাছগুলোতে দলবদ্ধভাবে বাস করে।

 

কিভাবে যাবেন?

লাউয়াছড়া যেতে হলে আপনাকে প্রথমে ট্রেনে বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জে আসতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি করে যেতে পারেন লাউয়াছড়া উদ্যানে। যাওয়া আসার খরচ পড়বে ৬০০ টাকার মত। এছাড়া জিপেও যেতে পারেন। এছাড়া বাসে যেতে চাইলে রিকশায় করে চলে আসুন ভানুগাছা রোড বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাসে ভাড়া মাত্র ১০ টাকা জনপ্রতি।

 

কোথায় খাবেন?

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ভিতরে কিংবা আশে পাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই তাই প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে কিছু হালকা খাবার সাথে নিতে পারেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ফিরে খেতে হবে। নানা ধরণের রেস্তোরা আছে। আছে সবার প্রিয় পানশী রেস্টুরেন্ট। ভর্তা ভাজিসহ নানা পদের খাবার খেতে পারবেন ১০০-৫০০ টাকায়।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?