মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী | Manikchari Mong Rajbari 20/03/2021


PC: Abdullah Papon


জেলা শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মানিকছড়ি উপজেলায় ঐতিহাসিক মং রাজার প্রাচীন আদি নিবাস মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী অবস্থিত। প্রাচীনকালে মং রাজবংশ হিসেবে পরিচিত এই নৃ-গোষ্ঠীর একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাজশাসন ছিল।

 

১৭৯৬ সালে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার মহামূনি স্থানে রাজা কংজয় ত্রিপুরা রাজবংশের রাজকন্যাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি ৫০০ ত্রিপুরা পরিবার সঙ্গে নিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে মানিকছড়িতে আসেন এবং রাজপরিবারের সদস্যদের বসবাসের জন্য মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী স্থাপন করেন। এভাবেই মানিকছড়িতে কংজয়ের আমল থেকে মং রাজপরিবারের যাত্রা শুরু হয়। ১৮২৬ সালে রাজা কংজয় ত্রিপুরা মারা গেলে তাঁর ছেলে কিওজাই সেন মাত্র ৭ বছর বয়সে চাচা লথ্যানয্যার অভিভাবকত্বে শূন্য রাজসিংহাসনে স্থলাভিষিক্ত হন। পরবর্তীতে কিওজাই সেনকে ইংরেজ সরকার মং সার্কেলের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। কিওজাই সেনের পর রাজবংশের অন্যান্য বংশধররা পর্যায়ক্রমে মং সার্কেলের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন।

 

সপ্তম রাজা মং প্রু সাইন (১৯৫৪-১৯৮৪) রাজা থাকা অবস্থায় খাগড়াছড়ির উন্নয়নে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে প্রজাদের সুখ-দুঃখে রাজার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। রাজা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে তৎকালীন মহাকুমা শহর রামগড়ে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। একপর্যায়ে রাজা তার স্ত্রী, মেয়ে, নাতি ও নাতনিদের নিয়ে তার রাজকীয় স্বর্ণালঙ্কার ও গুপ্তধন মাটির নিচে চাপা দিয়ে জীবন রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাটি ও মানুষের টানে ফের মানিকছড়ি রাজপ্রাসাদে ফিরে আসেন। কিন্তু মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণলঙ্কার ও গুপ্তধনের কোনো হদিস পাননি। তার পরও রাজা দেশের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে ১৯৮৪ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজা মং প্রু সাইনের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে “অনারারি কর্নেল র‍্যাঙ্ক” পদবীতে ভূষিত করা হয়।

 

মানিকছড়ি মং রাজবাড়ীর কাছে বিশ্ব শান্তি মহামূনি রাজ বৌদ্ধ চৈত্যের বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপনের পর থেকে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এখানে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষ্যে মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া মূহামনি টিলায় পুরাকীর্তি স্থাপত্য মং রাজ বংশের সদস্যদের স্মৃতি মঠ, নানুমা দেবী হল ও রাজ জেত বন বৌদ্ধ বিহারসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা রয়েছে। আর ঐতিহ্যবাহী মং রাজবাড়ীতে আছে মং রাজার সিংহাসন ও মূল্যবান অস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতিহাসপ্রেমী অনেক পর্যটক দূর-দূরান্ত থেকে মং রাজার প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী ঘুরতে আসেন।

 

কিভাবে যাবেন?

খাগড়াছড়ি থেকে বাস বা সিএনজিতে ৪৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মানিকছড়ি উপজেলায় যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহণের বাসে সরাসরি মানিকছড়ির খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের আমতল বা মহামূনিতে নেমে রিকশা/পায়ে হেঁটে মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

মানিকছড়ির কাছে ফটিকছড়ির বিবির হাটে ফোর স্টার জামান হোটেল ও হোটেল গ্রিন রেসিডেন্সিয়াল হোটেলের অবস্থান। এছাড়া খাগড়াছড়ি শহরে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেলে ভেদে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ৬০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। খাগড়াছড়ি শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে –

• হোটেল হিল প্যারাডিসে : খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

• হোটেল গাইরিং : খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

• অরণ্য বিলাস : শহরের নারিকেল বাগানে অবস্থিত এই হোটেলে টুইন বেড এসি ৩০০০ টাকা, কাপল এসি ২০০০ টাকা, টুইন নন এসি ২৫০০ টাকা এবং কাপল নন এসি ১৫০০ টাকা ভাড়া।

• হোটেল ইকোছড়ি ইন : এই হোটেলটি হলো তাদের জন্য যারা শহরের কোলাহল থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখতে চান। এই হোটেলটি খাগড়াছড়ি শহর থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রুম ভেদে এখানে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ১৫০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকা প্রদান করতে হবে।

 

যদি খুবই কম খরচে থাকতে চান তাহলে নারিকেল বাগানের "গাংচিল আবাসিক হোটেলে" থাকতে পারেন।  এই হোটেলটিতে ৬০০-১০০০ টাকায় থাকতে পারবেন।

Book Now

 

কোথায় খাবেন?

মানিকছড়িতে জেনারেল রেস্টুরেন্ট, নিরালা রেস্টুরেন্ট, ইত্যাদি ফাস্ট ফুড ও কাঠ গোলাপ রেস্টুরেন্টে প্রয়োজনী খাবার খেতে পারবেন। আর খাগড়াছড়িতে অবস্থিত সিস্টেম রেস্তোরা, পেডা টিং টিং, গাং সাবারং, পাজন ও চিম্বাল রেস্টুরেন্টের খাবার বেশ জনপ্রিয়।

You might like