বারোবাজার | Barobazar 08/09/2021


PC: আমানুল্লাহ আল নাহিদ


ঝিনাইদহ শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বারোবাজারের অবস্থান। বারো আউলিয়া, খানজাহান আলী, গাজী কালু চম্পাবতী, গঙ্গারিডিসহ ইতিহাসের সব নিগুঢ় রহস্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এখানে। হোসেন উদ্দীন হোসেনের লেখা ‘যশোরাদ্য দেশ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বারোটি বাজার নিয়ে প্রসিদ্ধ ছিল ৭শ বছরের প্রাচীন বারোবাজার নগরী। এ নগরের পরিধি ছিল ১০ বর্গমাইল। খোশালপুর, পিরোজপুর, বাঁদুরগাছা, সাদেকপুর, দৌলতপুর, সাতগাছিয়া, এনায়েতপুর, মুরাদগড়, রহমতপুর, মোল্লাডাঙ্গা, বাদেডিহি প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল এ নগরী।

 

১৯৯৩ সালে বারোবাজার রেললাইন সংলগ্ন ৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা খনন করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদ, সমাধিক্ষেত্র, করবস্থান, বন্দর এবং লৌকিক ভবন মিলিয়ে প্রায় ১৫ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পায়। প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে সাতগাছিয়া মসজিদ, নামাজগাহ কবরস্থান, ঘোপের ঢিপি কবরস্থান, জোড়বাংলা মসজিদ, গলাকাটা মসজিদ, জাহাজঘাটা, মনোহর মসজিদ, গোড়ার মসজিদ, দমদম প্রত্নস্থান, শুকুর মল্লিক মসজিদ, পীর পুকুর মসজিদ, পাঠাগার মসজিদ, বাদেডিহি কবরস্থান, খড়ের দীঘি কবরস্থান ও নুনগোলা মসজিদ। আর সাংস্কৃতিক বস্তুর মধ্যে আছে উৎকীর্ণ লিপি, অলংকৃত ইট, মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ফলক, গুটিকা, মৃৎপাত্রের ভাঙা টুকরো ইত্যাদি।

 

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এসব পঞ্চদশ শতাব্দীর কীর্তি। তবে ১৯৯৩ সালে জোড়বাংলা মসজিদ খননের সময় একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে পুসাইন ৮০০ হিজরি। এ শিলালিপিটি এখানকার প্রত্নতত্ত্বের অন্যতম দলিল। এ থেকেই বোঝা যায়, নিদর্শনগুলো প্রায় ৭শ বছরের প্রাচীন। বেশির ভাগ নিদর্শনের পাশে বিরাট বিরাট দীঘি রয়েছে।

 

গোড়ার মসজিদ

বারোবাজার বেলাট দৌলতপুরে কারুকাজ খচিত বর্গাকৃতির মসজিদটি চার গম্বুজবিশিষ্ট। মূল ভবনের সঙ্গে চার কোণে আট কোণবিশিষ্ট স্তম্ভ এবং বারান্দার সঙ্গে আরও দুটি স্তম্ভ আছে। মসজিদটির মেহরাব ও দেয়াল বিভিন্ন নকশায় সজ্জিত। মসজিদের অভ্যন্তরে চার দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত আটটি ইটের তৈরি কেবলা দেয়ালে ও মেহরাবে পোড়ামাটির নকশা, শিকল নকশা, বৃক্ষপত্রাদীর নকশা পুষ্পশোভিত পোড়ামাটির নকশা খচিত আছে। মসজিদের পূর্বপাশে একটি বিশাল দীঘি আছে।

 

জোড়বাংলা মসজিদ

বারোবাজার তাহেরপুর রাস্তার বাম পাশে জোড়বাংলা মসজিদটি অবস্থিত। প্রচলিত লোককথা মতে, মসজিদের কাছাকাছি জোড়া কুঁড়েঘর ছিল। এ কারণেই হয়তো মসজিদটির নামকরণ জোড়বাংলা হয়ে থাকবে। ধারণা করা হয়, এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসন আমলে নির্মিত। মসজিদের পূর্বপাশে তিনটি সুচালো খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে। মসজিদের চার কোণে আট কোণবিশিষ্ট চারটি কারুকাজ খচিত টাওয়ার আছে।

 

নুনগোলা মসজিদ

বারোবাজার হাসিল বাগে অবস্থিত নুনগোলা মসজিদটিও বর্গাকৃতির একটি মসজিদ। মসজিদটিতে তিনটি অর্ধবৃত্তাকৃতির মেহরাব আছে। মেহরাবে ছোট ছোট বর্গাকৃতির মধ্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা আছে। মসজিদের বাইরের দেয়ালে পর্যায়ক্রমিক খাড়া চাল ও খাঁজ আছে। এগুলোতে দিগন্ত রেখাকৃতির ছাঁচে গড়া নকশা ও বাঁধন আছে। মসজিদের ওপরে একটি গম্বুজ আছে।

 

গলাকাটা মসজিদ

বারোবাজার তাহেরপুর রাস্তার উত্তর পাশে অবস্থিত গলাকাটা মসজিদটি সুলতানি আমলের আরেক অনিন্দ্য সুন্দর এক স্থাপত্য শিল্প। গোলাকার ঢিবির ওপর স্থাপিত মসজিদটির ভেতরের দিকের কেবলা দেয়ালে তিনটি অর্ধবৃত্তাকারাকৃতির সুসজ্জিত মেহরাব আছে। মেহরাবের দুপাশে পোড়ামাটির দিগন্ত রেখাকৃতির বাঁধন, বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ও ফুলের নকশা আছে। এ ছাড়া পোড়ামাটির ঘণ্টা ও চেইন নকশা মসজিদের দেয়াল ও ছাদজুড়ে আছে। মসজিদের সাথেই আছে একটি বৃহদাকার দীঘি।

 

শুকুর মল্লিক মসজিদ

এটি একটি বর্গাকাকৃতির এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। দেখতে অনেকটা ঢাকার বিনত বিবির মসজিদের মতো। মসজিদটির উভয় পাশে একটি করে বন্ধ মেহরাবসহ পশ্চিম পাশে একটি অর্ধবৃত্তাকৃতির মেহরাব আছে। এই মেহরাবগুলোতে আছে পোড়ামাটির ঘণ্টা ও চেইন নকশা। অপরূপ নকশাগুলো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

 

কিভাবে যাবেন?

কালীগঞ্জ থেকে বারোবাজারের দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। কালীগঞ্জ হতে ইজিবাইক বা সিএনজি ভাড়া করে বারোবাজার যাওয়া যায়। আবার যশোর জেলা শহর থেকে বারোবাজার ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে চড়ে যশোর এসে সহজেই বারোবাজার যেতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

ঝিনাইদহ শহরে আহার, ফুড সাফারী, সুইট, ঘরোয়া ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে প্রয়োজনীয় খাবারের পাশাপাশি ঘোষ এর মিষ্টি, পায়রা চত্ত্বরের ছানা ও ছানার জিলাপী খেয়ে দেখতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?