চিনি মসজিদ | Chini Mosque 23/01/2022


PC:


বাংলাদেশের বাণিজ্যিক শহরগুলোর মধ্যে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য। ফলে রেলের শহর হিসেবে পরিচিত সৈয়দপুরের কয়েকটি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে। নীলফামারী সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুরে অবস্থিত স্থাপত্য নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম একটি স্থাপনা হচ্ছে চিনি মসজিদ (Chini Mosque) বা চীনা মসজিদ।

 

চিনি মসজিদের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস, ১৮৬৩ সালে হাজী বাকের আলী ও হাজী মুকু ইসলামবাগ ছন ও বাঁশ দিয়ে একটি মসজিদ নির্মান করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় টিন দিয়ে এটি রূপান্তরিত করা হয়।এলাকার মানুষেরা মাসিক আয়ের একটি অংশ দিয়ে মসজিদের জন্য ফাণ্ড গঠন করে। পরবর্তীতে শঙ্কু নামের এক হিন্দু ব্যক্তি দৈনিক ১০ আনা মজুরীতে মসজিদ নতুনভাবে নির্মান শুরু করেন। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে থাকেন। মসজিদ নকশা করেন মো. মোখতুল ও নবী বক্স। মসজিদের গাত্রে চিনামাটির থালার ভগ্নাংশ, কাঁচের ভগ্নাংশ বসিয়ে ইট ও সুরকি দিয়ে নির্মান কাজ করা হতে থাকে। এই পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে চিনি করা বা চিনি দানার কাজ করা। এ থেকেই এই মসজিদের নাম চিনি মসজিদ বা চীনা মসজিদ। চীনা মাটির থালার ভগ্নাংশ দিয়ে গোটা মসজিদ মোড়ানো বলে একে অনেকেই চীনা মসজিদও বলে থাকে। আর এই চিনামাটির তৈজসপত্র নিয়ে আসা হয়েছিল কলকাতা থেকে। মসজিদের অনন্য কারুকার্যে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপফুল, একটি বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ তারা মসজিদের গাত্রে খঁচিত রয়েছে। এছাড়াও মুগ্ধ হতে হয় তত্‍কালিন আরবীয় ক্যালিপ্ট্রা দেখে। এ মসজিদ তৈরিতে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।

 

এই মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্য সবার নজর কাড়ে খুব সহজে। ইতোমধ্যে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি এ অঞ্চলের অন্যতম মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। হাজী আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন। পুনরায় ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। এই চিনি মসজিদের সারা অবয়ব রঙ্গীন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা আবৃত। ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদের ৪৫টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে দরজা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ দেখার জন্য বহু বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ইতিহাস রয়েছে। ইসলামের মহিমা প্রচার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ইসলাম অনুসারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সৈয়দপুর চিনি মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। মসজিদটির ডানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বামে একটি ইমামবারা রয়েছে। আর পশ্চিমে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে দক্ষিণে মসজিদের গাঁ ঘেঁষে ১২টির মত দোকানঘর। এসব দোকানের ভাড়া ও মুসল্লীদের চাঁদা মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস।

 

কিভাবে যাবেন?

নীলফামারী থেকে সড়কপথে এবং রেলপথে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে রিক্সাযোগে চিনি মসজিদ যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

নীলফামারী জেলার আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল প্রিমিয়ার, রনি ড্রিম, শিশির হোটেল, অবকাশ হোটেল, আর রহমান ও নাভানা রেস্ট হাউজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

 

কোথায় খাবেন?

নীলফামারীতে তাজিন উদ্দিন গ্র্যান্ড হোটেল, দারুচিনি ক্যাফে, হোটেল টিপ টপ, হোটেল স্টার, হোটেল আকবরিয়া ও হোটেল রহমতিয়াসহ ভালমানের কিছু খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?