তোহাখানা | Tahakhana 21/01/2022


PC:


চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রতণসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জেলা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের রাজধানী হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় নিদর্শন হিন্দু শাসন আমলে বিশেষ করে সেন বংশের শেষ রাজাদের খননকৃত দিঘী ও সুলতানী আমলে মুসলিম সুলতানদের নির্মিত মসজিদই এ উপজেলার প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই সকল স্থাপনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে তোহাখানা (Tahakhana) অনন্য একটি স্থাপনা যা সাধারন মানুষের কাছে খুব পরিচিতি। তাহখানা ফারসি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ ‘ঠান্ডা প্রাসাদ’।

 

সুলতান শাহ সুজা তাঁর মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবাদার থাকাকলে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তাঁর মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মান করেন। জনশ্রুতি মোতাবেক, শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মোরশেদ শাহ নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন তখন উক্ত ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কামরাটিতে বাস করতেন। তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিচয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারনা করা হয়।

 

গৌড়ের প্রাচীন কীর্তির মধ্যে এই শ্রেণীর ইমরাত এই একটিই পরিলক্ষিত হয়। কড়িকাঠের উপর খোয়া ঢালাই করে যার ছাদ ও কোঠা জমাট করা হয়েছিল। উল্লেখিত মসজিদ ও তাহখানার নিকটস্থ সরোবর দাফেউল বালাহর তীরে অবস্থিত। এই দুই ইমারত হতে দুইটি সিড়ি সরোবরের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভবনটির উত্তর-পশ্চিমে আরও দুটি কাঠামো রয়েছে নিকটস্থটি একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং একটু উত্তরে অবস্থিত অপরটি ভল্টেড বারান্দা ঘেরা একটি গম্বুজ সমাধি। যেহেতু ভবনগুলো একই সময় একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল, সেহেতু সব ভবনকে একত্রে একটি একক ইউনিট বা একটি কমপ্লেক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ভবনটি মূলত ইট নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ভবনটিকে দেখলে একতলা মনে হয়, পূর্বদিক থেকে অবশ্য দ্বিতল অবয়বই প্রকাশ পায়, যার নিচতলার কক্ষগুলো পূর্বদিকে বর্ধিত এবং খিলানপথগুলো উত্থিত হয়েছে সরাসরি জলাশয়টি থেকে।

 

ভবনের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি গোসলখানা যেখানে পানি সরবরাহ হতো একটি অষ্টভুজাকৃতির চৌবাচ্চার মাধ্যমে জলাশয় থেকে। উত্তর পাশে একটি ছোট পারিবারিক মসজিদ অবস্থিত, এর পেছনে রয়েছে একটি উন্মুক্ত কক্ষ যেটি একটি অষ্টভুজাকার টাওয়ার কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এ টাওয়ার কক্ষটি সম্ভবত ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হতো। অষ্টভুজাকার টাওয়ারটি সব কমপ্লেঙ্টিতে ভারসাম্য প্রদান করেছে। প্রাসাদটি প্লাস্টার করা এবং খোদাইকৃত। এসব অলঙ্করণ রীতি মোঘল আমলের।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেইনে চেপে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। তাহখানা কমপ্লেক্স ছোট সোনা মসজিদ থেকে ৫০০ মি. উত্তর-পশ্চিমে জাহেদুল বালা নামের দীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে অটোতে করে সহজেই যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল রোজ, হোটেল আল নাহিদ, হোটেল স্বপ্নপুরী, নবাবগঞ্জ বোডিং এবং হোটেল রংধনু উল্লেখযোগ্য। তবে ভালো কোথাও থাকতে চাইলে রাজশাহী শহরে যেতে হবে। রাজশাহীতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ছাড়াও হোটেল হক্স ইন, নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, ডালাস ইন্টারন্যাশনাল শুকরান ইত্যাদি হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে সারুয়ার হোটেল, ভাই ভাই হোটেল, শরিফা হোটেল মতো বেশ কিছু খাবারের রেস্তোরা আছে। আর সুযোগ হলে শিবগঞ্জের আদি চমচম খেয়ে দেখতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?