বীরশ্রেষ্ঠে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি | Tomb of Birshreshtha Captain Mohiuddin Jahangir 21/01/2022


PC:


চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (Birshreshtha Captain Mohiuddin Jahangir)। বরিশালের রহমতগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহন করা বাংলার এই বীর সন্তান ১৯৭১ সালে মহানন্দা নদীর কাছে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করাকালীন প্রতিপক্ষ শত্রুর বুলেটের আঘাতে শহীদ হন। ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটক জাহাঙ্গীর গেইটের নামকরন করা হয়েছে মহান এই বীরশ্রেষ্ঠের সম্মানে।

 

১৯৪৯ সালের ৮ মার্চ (মতান্তরে ৭ মার্চ) মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরএর জন্ম হয়। পিতা একজন বাউলশিল্পী হওয়ায় সাংসারিক কাজকর্মেও তেমন মন ছিল না। জাহাঙ্গীরএর লেখাপড়া বা তাঁর মানুষ হবার বিষয়েও পিতার ছিল গা ছাড়া ভাব। এই বিষয়টি লক্ষ করে জাহাঙ্গীরএর বড় মামা-মামি এগিয়ে এলেন ছোট্ট শিশুকে মানুষ করতে। ১৯৫৩ সালে সাড়েতিন বছর বয়সেই মামার বাড়ি মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে পাতারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন মহিউদ্দিন। জাহাঙ্গীর অংকে পারদর্শিতা লাভ করেন মামা-মামির হাত ধরেই। ফলে এই বালকটি সারা স্কুলে সবচেয়ে ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিতি পায় এবং সেই স্কুল থেকে দুইবার বৃত্তি লাভ করে সাফল্যের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমান এসএসসি) পাশ করেন।

 

মুলাদীতে তেমন ভালো কলেজ না থাকায় এরপর তিনি বরিশাল শহরে তাঁর মেজমামার বাড়িতে থেকে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সেখান থেকেই আইএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনিতে যোগ দেন। ১৫তম শর্টসার্ভিস কোরের প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট অফিসার হিসেবে মনোনীত হলেন তিনি। ১৯৬৭ সালের ৩ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ না করেই তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি ‘কাকুল’ এর উদ্দেশে রওয়ানা হন। ১৯৬৮ সালের ৩ ডিসেম্বরে তাঁকে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। আরও উন্নত প্রশিক্ষণের পর ১৯৭০ এর ৩০ আগস্ট তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। 

 

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ গভীর রাতেই সারা পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার খবর শুনে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ভীষণভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। তখন তিনি পাকিস্তানের কারাকোরাম এলাকায় ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন। চেষ্টা করতে লাগলেন কী করে পালানো যায়। জাহাঙ্গীরএর বন্ধু ক্যাপ্টেন হামিদ এর সহযোগিতায় আরও তিনজন অফিসারের সাথে যোগাযোগ হলো। এঁরাও পালাতে চান। তাঁরা হলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন, মেজর শাহরিয়ার ও লে. কর্নেল আনাম। এদের মধ্যে ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন পরবর্তীতে যুদ্ধে শহিদ হন এবং বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত হন।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুনরুদ্ধারের উদ্দেশে সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল নুরুজ্জামান এর নেতৃত্বে তিনটি দল গঠিত হয়। প্রথম দলের নেতৃত্বে মেজর গিয়াস, দ্বিতীয় দলের নেতৃত্বে মেজর রশীদ, তৃতীয় দলের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। প্রথম দলের ওপর দায়িত্ব দেয়া হলো সড়ক অবরোধ করে চাঁপাইনবাগঞ্জকে রাজশাহী থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সবচেয়ে কঠিন এবং দুঃসাহসী কাজটি দেয়া হলো তৃতীয় দল, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ দখল করা। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়ালসহ প্রায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারঘরিয়ায় অবস্থান নেন। শত্রুসেনারা অনেকগুলো বাংকার তৈরি করে রেখেছিল। সেগুলো থেকে তারা বৃষ্টির মতো গোলা বর্ষণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের হতাহত করছিল। কয়েকজন সহযোদ্ধা তাঁর চোখের সামনেই মৃত্যুবরণ করেন। মহিউদ্দিন একটি গ্রেনেড শত্রুর বাংকারে ছুঁড়ে সেটি ধ্বংস করে দেন এবং সরে পড়তে চেষ্টা করেন। এমন সময় হঠাত্ করে স্নাইপারের একটি বুলেট তাঁর একেবারে কপালে এসে লাগে। সাথে সাথে তিনি বাংলা মায়ের কোলে লুটিয়ে পড়েন। সামনা সামনি যুদ্ধে বীরের মতো লড়তে লড়তে প্রাণ ত্যাগ করেন এই যোদ্ধা।

 

যুদ্ধকালীন মহিউদ্দিনের সাংকেতিক নাম ছিল টাইগার। ১৫ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া এই বীর যোদ্ধার লাশ তাঁর সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে এবং টাইগারের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পূর্ববর্তী সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের সমাধির পাশে সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।

 

কিভাবে যাবেন?

রাজশাহী থেকে লোকাল বাসে চড়ে ৭০ টাকা ভাড়ায় কানসাট এসে, সেখান থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়ায় ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনেই এই বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলে পৌঁছাতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাত্রিযাপনের জন্য শহরেই আছে থ্রি স্টার মানের স্কাই ভিউ ইন। এছাড়া কম খরচে থাকার জন্যে হোটেল রোজ, লাল বোর্ডিং, হোটেল আল নাহিদ, হোটেল স্বপ্ন পুরী, হোটেল রংধনুর মতো আবাসিক হোটেলগুলো উল্লেখযোগ্য।

 

কোথায় খাবেন?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে সারুয়ার হোটেল, ভাই ভাই হোটেল, শরিফা হোটেল মতো বেশ কিছু খাবারের রেস্তোরা আছে। আর সুযোগ হলে শিবগঞ্জের আদি চমচম খেয়ে দেখতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?