ময়নামতি জাদুঘর কুমিল্লা | Mainamati Museum Comilla 20/04/2021


PC:


কুমিল্লা জেলায় বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে ময়নামতি জাদুঘর ( Moynamoti Museum Comilla) দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকষণীয় স্থান। এ জাদুঘরটি এখন দেশি-বিদেশি গবেষকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ময়নামতি জাদুঘরটি শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দেখা যায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম।

 

১৯৬৫ সালে কুমিল্লা কোটবাড়ির শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী এই জাদুঘর স্থাপন করা হয়। এই জাদুঘরে ভবদের মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, আনন্দ বিহার, রানীর বাংলা ও ভোজ রাজার বাড়ি বিহারের খননকালে প্রাপ্ত নানা মূল্যবান পুরাতত্ত্ব এখানে জায়গা করে নেয়।

 

জাদুঘরের মূলভবনে গুরুত্বপূর্ণ পুরাবস্তু প্রদর্শনের জন্য স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৭০-৭১ সালে এর দক্ষিণ পাশ বর্ধিত করায় ভবনটি ইংরেজী ‘টি’ অক্ষরের আকার ধারণ করে। পুরো জাদুঘর ভবনে মোট ৪২টি আধার রয়েছে। যাতে পুরাবস্তু সমূহ প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘরের প্রবেশ পথের বাম দিকে থেকে ১নং প্রদর্শনী আধার দিয়ে প্রদর্শনী আরম্ভ করে ক্রমানুসারে চারদিক ঘুরে ঘুরে প্রবেশ দ্বারের ডান দিকে ৪২নং আধারে প্রদর্শনী শেষ হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের ভূমি নকশা, ধাতু লিপি ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, মৃন্ময় মুদ্রক-মুদ্রিকা, পোড়া মাটির ফলক, ব্রোঞ্জ মূর্তি, পাথরের মূর্তি, লোহার পেরেক, পাথরের গুটিকা, অলংকারের অংশ এবং ঘরে ব্যবহৃত মাটির হাড়ি পাতিল এখানে প্রদর্শিত রয়েছে। এছাড়া আছে কিছু পাথর ও ছোট বড় ব্রোঞ্জ মূর্তি। জাদুঘরে প্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য পাথর ও ব্রোঞ্জ মূর্তি গুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের পাথরের দণ্ডায়মান লোকোত্তর বুদ্ধ মূর্তি, ত্রি বিক্রম বিষ্ণুমূর্তি, তারা মূর্তি, মরীচি মূর্তি, মঞ্জুরের মূর্তি, পার্বতী মূর্তি, হরগৌরী মূর্তি, নন্দী মূর্তি, মহিষমর্দিনী মূর্তি, মনসা মূর্তি, গণেশ মূর্তি, সূর্য মূর্তি, হেরুক মূর্তি এবং ব্রোঞ্জের বজ্রসত্ত্ব মূর্তি।

 

এছাড়াও এই পুরাকীর্তির জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, কাঠের কাজের নিদর্শন, মৃৎপাত্র ও প্রাচীন হস্ত লিপির নানা পাণ্ডুলিপি। এতো সব মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির পাশাপাশি এখানে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৩৭০ কেজি ওজনের ব্রোঞ্জের তৈরি বিশাল এক ঘণ্টা।

 

কিভাবে যাবেন?

কুমিল্লা নেমে প্রথমে কান্দিরপাড় চলে আসুন। কান্দিরপাড় আওয়ামী লীগ অফিসের কাছে কোটবাড়ি যাওয়ার লোকাল সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায় কোটবাড়ি যেতে পারবেন। আর কুমিল্লা শহরের যেকোন স্থান থেকে কোটবাড়ি যাওয়ার সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সিএনজি রিজার্ভ নিলে ১৫০ টাকা খরচ হবে। কোটবাড়ি থেকে অটোরিকসায় ১০ টাকা ভাড়ায় চলে যান ময়নামতি জাদুঘর দেখতে। আবার কুমিল্লা হতে কোটবাড়ি বিশ্বরোড হয়ে লোকাল সিএনজি করে ময়নামতি জাদুঘর চলে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া লাগবে। উল্লেখ্য শালবন বিহার, বৌদ্ধ মন্দির, ময়নামতি জাদুঘর পাশাপাশি অবস্থিত।

নোটঃ আপনি যদি বাসে কুমিল্লা আসেন আর বাস যদি কোটবাড়ি হয়ে যায় তাহলে কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড নেমে গেলে ময়নামতি জাদুঘর যেতে সবচেয়ে কাছে হবে।

 

সময়সূচীঃ

শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে এবং সোমবার অর্ধ দিবস বন্ধ থাকে।

শীতকালীন সময়সূচী (অক্টোমর – মার্চ):

  • মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা ( দুপুর ১ থেকে ১ঃ৩০ বিরতি)
  • শুক্রবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ঃ৩০ এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত
  • সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত

গ্রীষ্মকালীন সময়সুচি (এপ্রিল – সেপ্টেম্বর):

  • মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ১০ থেকে বিকেল ৬ টা (দুপুর ১ থেকে ১ঃ৩০ বিরতি)
  • শুক্রবার সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২ঃ৩০ এবং দুপুর ২ঃ৩০ থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত
  • সোমবার দুপুর ২ঃ৩০ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত

 

প্রবেশের টিকেট মুল্য:

যেকোন বাংলাদেশিকে শালবন বিহারে প্রবেশের জন্য ২০ টাকার টিকেট কাটতে হয়। দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা ৫ টাকায় শালবন বিহারে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে থাকে। সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা এবং অন্য সকল বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশের জন্য ২০০ টাকা প্রবেশ মূল্য রাখা হয়।

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?