আটকান্দি নীলকুঠি মসজিদ | Atkandi Nilkuthi Mosque 16/01/2022


PC:


PC:Nadim Ahsan

নরসিংদির রায়পুরা উপজেলার আটকান্দি গ্রামে মাওলানা আলিম উদ্দিন প্রায় ১৫০ বছর আগে ঐতিহাসিক আটকান্দি মসজিদ নির্মাণ করেন। কোন শিলালিপি না থাকায় মসজিদের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনুমান করা হয় আটকান্দি মসজিদটি ১৮৯০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে আটকান্দি মসজিদটি নীলকুঠি মসজিদ (Nilkuthi Mosque) নামে সুপরিচিত।

 

নরসিংদীর শিকড়সন্ধানী লেখক সরকার আবুল কালাম ‘কিংবদন্তির নরসিংদী’ গ্রন্থে লেখেন—আটকান্দি মসজিদটি নির্মাণ করেন মাওলানা আলিম উদ্দিন। যিনি দেওবন্দ পাস আলেম নামেও পরিচিত। ঢাকার নবাববাড়িতে মাওলানা আলিম উদ্দিনের চাকরি হয়। বাচ্চাদের মক্তবে পড়াতেন। পাশাপাশি চিঠি লেখা ও উত্তর প্রদানের দায়িত্বও পালন করতেন তিনি। দেখতে সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট ছিলেন মাওলানা। নবাবরা তাঁকে স্নেহ করতেন। একদিন বিকেলে বগুড়ার নবাব থেকে চিঠি পান ঢাকার নবাব। চিঠিতে পাত্র তলব করা হয়েছে। মাওলানা আলিম উদ্দিন দায়িত্বের সুবাদে চালাকি করে নিজেই পত্র পড়েন। বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করলে বন্ধুরা বগুড়া যেতে জোর দিলেন।

 

নবাববাড়ি গেলে বগুড়ার নবাব তাঁকে পছন্দ করলেন। বিয়ে হলো তৎকালীন নবাবের মেয়ে সাদেতুন্নেছার সঙ্গে। নবাব মহলে দিনাতিপাত করছেন মাওলানা। বগুড়ার নবাব বিয়ের সংবাদ পাঠালেন ঢাকায়। ঢাকা থেকে জানানো হলো, তারা কোনো পাত্র পাঠাননি। এই সংবাদ নবাব মহলে চাউর হলে সাদেতুন্নেছার মা তাদের রাতে পালানোয় সহযোগিতা করলেন। দিয়ে দিলেন ব্যাগভর্তি স্বর্ণ, হীরা আর নগদ টাকা। স্টিমারে করে চলে আসেন নিজ শহর নরসিংদীর রায়পুরার আটকান্দি গ্রামে। এখানে এসে ৪০ বিঘা জমি কিনলেন। ইটভাটা নির্মাণ করলেন। সেখানে ইট তৈরি করে তারপর মসজিদ আর থাকার ঘর নির্মাণ করলেন। এখনো মাটি খুঁড়লে ইটভাটার নিদর্শন পাওয়া যায়। মেঘনা নদীর পারে বানালেন শানবাঁধানো ঘাট। অল্প সময়ে হয়ে উঠলেন স্থানীয় জমিদার। মসজিদকেন্দ্রিক সমাজ পরিচালিত হতো।

 

সজিদে সর্বমোট ৩৪টি কারুকার্যময় খিলান রয়েছে। মোগল আমলের স্থাপত্যের আদলে তৈরি নীল কুঠি মসজিদের পুরু দেয়াল, পাথর বসানো মেহরাব ও মেঝে, ফুল পাতার নান্দ্যনিক নকশা মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আটকান্দি মসজিদে মোট গম্বুজ সংখ্যা ৮টি, যার ৩টি আছে মূল মসজিদে আর বাকি ৫টি ছোট গম্বুজ আছে মূল মসজিদের বাইরে। মসজিদের বারান্দায় প্রবেশের ৫টি দরজা থাকলেও মূল মসজিদ ভবনে প্রবেশের ২টি দরজা রয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার মহাখালী, সায়দাবাদ কিংবা টঙ্গী বাসস্ট্যান্ড থেকে নরসিংদী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড চলে আসুন। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে আরশিনগর সিএনজি স্ট্যান্ড এসে সিএনজিতে চড়ে আমিরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন আসতে হবে। আমিরগঞ্জ হতে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে আটকান্দি নীলকুঠি মসজিদ যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে নরসিংদী রেলওয়ে ষ্টেশনে নেমে সিএনজি বা অটোতে চড়ে আমিরগঞ্জ হয়ে নীলকুঠি মসজিদ পৌঁছাতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

নরসিংদীতে হোটেল নিরাপদ, হোটেল রিয়াজ আবাসিক, বীরপুর হোটেল, আজিজের মতো বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে। এছাড়া সার্কিট হাউজ, এলজিডির রেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় অনুমতি সাপেক্ষ্যে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

 

কোথায় খাবেন?

নরসিংদী ক্ল্যাশ অফ ফুডজ রেস্টুরেন্ট, এনএফসি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, রমিজ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। নরসিংদী জেলার রসগোল্লা, লালমোহন, খিরমোহন এবং শাহী জিলাপির বাংলাদেশ জুড়ে ব্যাপক কদর রয়েছে।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?