গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি | Girish Chandra Sen's House 16/01/2022


PC:


PC:Ashim Kumar Biswas

গিরিশচন্দ্র সেন, একজন অমুসলিম হয়েও যিনি বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের মধ্যে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মূলত ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামেই অধিক পরিচিত তিনি, তাঁর প্রধান পরিচয় ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন-এর প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে। নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামের ড্রিম হলিডে পার্ক সংলগ্ন মেহেরপাড়ায় অবস্থিত ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি (Girish Chandra Sen's House)। বাড়িটি অনেকদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ২০১৬ সালে ভারতীয় কমিশনারের অনুদানে মূল বাড়ির কাঠামো ঠিক রেখে পুনর্নির্মাণ করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

 

ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে, মূলভাষা থেকে অনূদিত হলে গ্রন্থটির পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হবে। পবিত্র কুরআন সম্পর্কেও এমন ধারণা ছিল। এ কারণে অনেক মুসলিম মনীষী এর বঙ্গানুবাদ করতে সাহস পাননি। গিরিশচন্দ্র সেন অন্য ধর্মালম্বী হয়েও এই ভয়কে প্রথম জয় করেন। শুধু কুরআন শরীফের অনুবাদ নয় তিনি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক গবেষণাও করেন। গিরিশচন্দ্র সেন নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে এক বিখ্যাত দেওয়ান বৈদ্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন মাধবরাম সেন এবং পিতামহ ছিলেন রামমোহন সেন। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়েও গিরিশ চন্দ্র সেনই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি কোরআন শরীফের পবিত্রতা রক্ষা করে বঙ্গানুবাদ করার সাহসিকা দেখিয়ে ছিলেন। ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক হিসেবে তাঁকে “ভাই” খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরবর্তীতে আরবি, ফার্সি ভাষার ব্যুৎপত্তি অর্জন ও কোরআন হাদিসের প্রথম অনুবাদক হিসেবে তাঁকে “মৌলভি” উপাধি দেওয়া হয়। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট গিরিশ চন্দ্র সেন মৃত্যুবরণ করেন।

 

ঐতিহ্য অন্বেষণ সূত্রে জানা গেছে, মূল অবকাঠামো অক্ষুন্ন রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মেরামত ও সংরক্ষণের এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ব্রিটিশ আমলের মূল্যবান কাঠ, আসবাবপত্র ও যশোরের টালি। এ ছাড়া, ঐতিহ্য অন্বেষণের নিজ উদ্যোগে উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় তৈরি করা একটি বিশেষ আয়তনের ইটও ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বাড়ির সামনে স্থাপন করা হয়েছে গিরিশ চন্দ্র সেনের সংক্ষিপ্ত জীবনী সহ একটি আবক্ষ মূর্তি। গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িতে বর্তমানে জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। জাদুঘরে গিরিশ চন্দ্র সেনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, বাস্তুভিটায় আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ন এবং তাঁর লেখা বই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহের রবিবার ব্যতিত অন্য ৬ দিন গিরিশ চন্দ্র জাদুঘর সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

 

কিভাবে যাবেন?

গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি যেতে চাইলে প্রথমে নরসিংদীর পাঁচদোনায় আসতে হবে। ঢাকার গুলিস্থান থেকে মেঘালয় ছাড়াও বেশকিছু পরিবহণের বাস পাঁচদোনার পথে যাতাযাত করে। পাঁচদোনা থেকে সিএনজি কিংবা অটোতে চড়ে ডাঙ্গা বাজার পৌঁছে সেখান থেকে সহজেই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িতে যেতে পারবেন। আবার মহাখালি থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড দিয়ে কাঞ্ছন ব্রিজ পার হয়ে মায়ার বাড়ী মোড় হতে অটো নিয়ে গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ী যাওয়া যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

নরসিংদীতে ইব্রাহীম কটেজ, সার্কিট হাউজ, এলজিডির রেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর মতো বেসরকারি ও সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা আছে।

 

কোথায় খাবেন?

নরসিংদীতে ফাল্গুনি হোটেল, বাবুর্চি আলমগির হোটেল, বন্ধু হোটেল ও খোকন হোটেলের মতো বেশকিছু খাবার হোটেল পাবেন। এছাড়া নরসিংদীর রসগোল্লা, লালমোহন, খিরমোহন মিষ্টি ও শাহী জিলাপি বেশ জনপ্রিয়।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?