.jpg)
ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021

সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021

চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
.jpg)
ঝরঝরি ট্রেইল | Jorjori…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
বিহার ধাপ (Bihar Dhap) হলো বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক একটি স্থান। বগুরার নাগর নদীর পাশ ঘেঁষা এই স্থাপনাটি স্থানীয়দের কাছে তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ কিংবা তোতারাম পণ্ডিতের বাড়ি নামেও সুপরিচিত। বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ যুগের কাল নির্ধারণ করা হয়েছে চার অথবা পাঁচ শতক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্মাণ যুগ ছয় থেকে দশ শতকের বলে ধারণা করা হয়। চতুর্থ থেকে পঞ্চম নির্মাণ যুগের স্থাপত্যকর্মে প্রায় ক্ষেত্রেই পুরানো ইটের পুনর্ব্যবহার হয়েছে। আনুমানিক এগারো থেকে বারো শতকের মধ্যে এই প্রত্নস্থলের পতন ঘটে বলে ধারণা করা হয়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্গের বিবরণে মাটির নিচ হতে আবিষ্কৃত উঁচু টিলা আকৃতির বিহার ধাপের কথা উল্লেখ করা হয়।
২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২২০ মিটার প্রস্থের বিহার ধাপ ভূমি হতে প্রায় ২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। খননের মাধ্যমে উত্তর-দক্ষিণে ৫৭ মিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে ৬১ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি বিহার এখানে আবিষ্কার হয়েছে। উন্মোচিত বিহারের মধ্যে রয়েছে চারপাশে ৩৭টি ভিক্ষু কক্ষ বিশিষ্ট উন্মুক্ত আঙ্গিনা, আর পশ্চিম দিকে বাইরে দুইটি প্রহরী কক্ষ বিশিষ্ট প্রবেশ তোরণ ও পূর্ব দিকে মূর্তি রাখার বেদিও।
১৯৭৯-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিহার ধাপে ধারাবাহিকভাবে খনন কাজ করা হয়। প্রাথমিকভাবে দুইটি বৌদ্ধ বিহার এবং একটি মন্দিরের অবকাঠামো আংশিকভাবে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীকালে ২০০৫ সালে খননের মাধ্যমে পূর্ব দিক থেকে আরেকটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও ৫টি নির্মাণ যুগের স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। প্রথম নির্মাণ যুগের মন্দির ক্ষতিগ্রস্থ হবার পর দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে পুরনো মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত করে পশ্চিম দিকে একটি নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে নির্মিত দ্বিতীয় মন্দিরটি পশ্চিম দিকের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে যুক্ত করে পুনঃনির্মাণ করা হয়।
মন্দির-১:
প্রথম মন্দিরটি পূর্ব-পশ্চিমে ৫ মি এবং উত্তর-দক্ষিণে সম্ভবত ৬ মি দীর্ঘ। মন্দিরের উত্তর দিকে ছিল মূল প্রবেশ পথ। এটি ছয় ধাপ বিশিষ্ট। প্রতিটি ধাপ ২৪ সেমি চওড়া এবং ২৭ সেমি উঁচু এবং ১.৭০ সেমি লম্বা। প্রথম নির্মাণ যুগের মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে পুরনো মন্দিরের সাথে যুক্ত করে পশ্চিম দিকে একটি নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়। সেই সঙ্গে পুরানো মন্দিরটিও পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফলে এটি একটি মন্দির কমপ্লেক্সে রূপ নেয়। প্রথম নির্মাণ যুগে মন্দিরের দেয়াল পোড়ামাটির ফলক দিয়ে সজ্জিত করা হলেও দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে ফলকের ব্যবহার দেখা যায় না। এ যুগে দেয়ালে মসৃণ ইট ব্যবহার করা হয় এবং তাতে ১৫ সেমি গভীর ও ১৪ সেমি চওড়া টানা খাঁজ নকশা করা হয়। তৃতীয় নির্মাণ যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো দেয়ালে ২ সেমি. পুরু পলেস্তরার ব্যবহার। যা বজ্রলেপ নামে পরিচিত। ইটের গুড়া ও কাদামাটির তৈরি এ আস্তর এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যে আবিষ্কৃত হয়নি। প্রথম মন্দিরটিতে তিনটি নির্মাণ যুগের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
মন্দির-২:
মন্দিরটি মন্দির-১ এর দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে নির্মিত পশ্চিম দিকের ধ্বংসাবশেষের সাথে যুক্ত করে নির্মাণ করা হয়। ফলে মন্দির-১ এর পশ্চিম দেয়াল ও মন্দির-২ এর পূর্ব দেয়াল একটি সাধারণ দেয়াল হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল। খনন কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় এখনো মন্দিরের পুরো নকশা উন্মোচিত হয়নি। তবে, এ পর্যন্ত মন্দিরের পূর্ব-পশ্চিমের ১২ মি এবং উত্তর-দক্ষিণের ৯.৫০ মি অংশ উন্মোচিত হয়েছে। মন্দিরের প্রবেশ পথ, প্রদক্ষিণ পথ ও মেঝে অক্ষত অবস্থায় আবিষ্কৃত হলেও অন্যান্য অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। মন্দিরের সামনে রয়েছে আঙ্গিনা এবং আঙ্গিনার পরে রয়েছে বেদি। এর পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর বাহু ৫২ সেমি চওড়া ও প্রদক্ষিণ পথের মেঝে প্রথমে ইট বিছিয়ে তার উপর টুকরা ইট, ইটের কণা ও আঠালো মাটি পিটিয়ে শক্তভাবে তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরের সামনের দেয়াল দু’সারি পোড়ামাটির ফলক দ্বারা সজ্জিত ছিল। মন্দিরের প্রবেশ পথটি দশ ধাপ বিশিষ্ট।
বিহার ধাপ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্ত্ত পাওয়া গেছে। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সুলতান সিকান্দার শাহ-এর (১৩৫৮-১৩৯০) একটি রৌপ্য মুদ্রা, ৬০টি পোড়ামাটির ফলক চিত্র, পোড়ামাটির সিল, ১০০টি নকশা অঙ্কিত ইট, মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির গোলক, ধূপদানী, কুপি, কাঁচের পুঁতি, পোড়ামাটির পুঁতি, খেলনা, ব্রোঞ্জ নিদর্শন, খড়িমাটি এবং লোহার পেরেক।
কিভাবে যাবেন?
বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং ভাসু বিহার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে বিহার ধাপের অবস্থান। বগুড়ার ঠনঠনিয় বাসস্ট্যান্ড বা সাতমাথা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা নিয়ে ভাসু বিহার যেতে পারবেন। সারাদিনের জন্য অটো রিকশা রিজার্ভ নিতে ৮০০-১০০০ টাকা খরচ হবে।
কোথায় থাকবেন?
বগুড়াতে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, সেঞ্ছুরি মোটেল এবং মোটেল ক্যাসেল উল্লেখযোগ্য।
বগুড়া শহরে সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মায়ের দোয়া হোটেল, অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, চাপ কর্নার ও হোটেল সাফিনার মতো বেশকিছু ভাল মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আর অবশ্যই বগুড়ার বিখ্যাত দই খেতে ভুলবেন না।