খেরুয়া মসজিদ | Kherua Mosque 21/01/2022


PC:


বগুড়ায় কালের সাক্ষী হয়ে আছে প্রায় পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ (Kherua Mosque)। বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা শহরের অদূরে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খন্দকারটোলায় গ্রামীণ সবুজ-শ্যামল পরিবেশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।

 

মোগল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতিহাসবিদ ও সাবেক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রোস্তম আলী তাঁর ‘শেরপুরের ইতিহাস’ বইয়ে লিখেছেন, ৯৮৯ হিজরির ২৫ জিলহজ সোমবার (২০ জানুয়ারি ১৫৮২ খ্রি.) মসজিদের জায়গা পরিদর্শন করা হয়। এবং জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশালের পৃষ্ঠপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির ২৬ জিলহজ মঙ্গলবার ওই স্থানে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ‘কাকশাল’ উপাধি ছিল তুর্কিদের দেওয়া। ঘোড়াঘাট অঞ্চল ছিল তুর্কি জায়গিরদারদের অধীন। সম্রাট আকবরের সময় নির্মিত হওয়ায় মসজিদের দেয়ালের কিছু চিহ্ন নিয়ে অসংগতি প্রকাশ পায়। এই মসজিদ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক কিংবদন্তি বিদ্যমান। প্রচলিত আছে, এই মসজিদটি জিন জাতির দ্বারা নির্মিত। কেউ কেউ বলে থাকেন, মসজিদটি রাতারাতি তৈরি হয়েছে। তবে এখন এগুলোর পরিবর্তন হয়েছে।

 

প্রায় ৪৩০ বছর পুরনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদটি চওড়া দেয়াল এবং মিনারের ভিতের কারণে আজো টিকে রয়েছে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট নজরকাড়া মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এর বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট ভেতরের দিক। আর মসজিদের চারদিকের দেয়ালের পুরুত্ব ৬ ফুট। চারকোনায় চারটি মিনার ও পূর্ব দেয়ালে তিনটিসহ উত্তর-দক্ষিণে আরো দুটি দরজা রয়েছে। মাঝের দরজাটি অন্য দুটি থেকে আকারে অনেক বড়। আয়তকার ফ্রেমের মধ্যে অর্ধগোলাকার মেহরাবগুলো স্থাপিত। মসজিদের কার্নিশগুলো বাঁকানো। মসজিদের দেয়ালে কোনো কারুকার্য চোখে পড়ে না। এর দেয়াল সাদাসিধেই বলা যায়। মসজিদের প্রবেশদ্বারের দুই পাশে দুটি শিলালিপি ছিল। ডান পাশেরটি করাচি জাদুঘরে রাখা হয়েছে। আর বাম পাশেরটি অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়। আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, জানালাবিহীন মসজিদটির প্রবেশদ্বারগুলোতে কোনো খিলানের ব্যবহার নেই। মসজিদ নির্মাণে ইট, চুন ও সুরকি ছাড়াও বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।

 

খেরুয়া মসজিদের নামকরণ স্পষ্ট নয়। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ বইতে উল্লেখ করেছেন ‘এ মসজিদের খেরুয়া নামের কোনো ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়নি। আরবি বা ফার্সি ভাষায় খেরুয়া বলে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না।’ তবে ফার্সিতে ‘খায়ের গাহ্’ বলে শব্দ আছে। যার অর্থ ‘কোনো স্থানের ভেতরে’। রাজা মানসিংহ যখন বাংলার সুবাদার, তখন তিনি শেরপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। তবে মসজিদটি যদি শেরপুর দুর্গের ভেতরে নির্মিত হয়ে থাকে, তবে ‘খায়ের গাহ্’ থেকে খেরুয়া নাম হতে পারে বলে অনুমান করা যায়।

 

দীর্ঘদিন মসজিদটি অবহেলা অযত্নে পড়ে থাকে। সেই সময় ঝোপঝাড়, গাছপালায় ঢেকে ছিল মসজিদের সামনের অংশ। চারদিকেও বেড়ে উঠেছিল অনেক জঙ্গল। পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরপর ১৯৮৮ সাল থেকে মসজিদ এবং এর ৪৮ শতক জায়গা দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন মসজিদটি তার হারানো জৌলুস ফিরে পায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক, দর্শনার্থীরা দেখতে আসে এই মসজিদটি।

 

কিভাবে যাবেন?

বগুড়া জেলা শহর থেকে খেরুয়া মসজিদের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং শেরপুর উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। শেরপুর সদর উপজেলা সদর থেকে রিকশা, ভ্যান অথবা সিএনজি চড়ে যেতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

বগুড়ায় রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে। ভাল মানের হোটেলের মধ্যে পর্যটন মোটেল, নাজ গার্ডেন, নর্থওয়ে মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, মোটেল ক্যাসল এমএইচ, সেঞ্চুরি মোটেল, হোটেল সিস্তা, হোটেল আকবরিয়া, রেডচিলিস চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এন্ড আবাসিক হোটেল উল্লেখযোগ্য।

 

সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে হোটেল আল আমিন, হোটেল রয়াল প্যালেস, হোটেল সান ভিউ, হোটেল রাজমনি, হোটেল হানি ডে ও হোটেল আজিজ উল্লেখ্য।

 

কোথায় খাবেন?

বগুড়া শহরে ভাল মানের হোটেল ও রেস্তোরার মধ্যে সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মায়ের দোয়া হোটেল, অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, চাপ কর্নার ও হোটেল সাফিনা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বগুড়ার বিখ্যাত দইয়ের সুনাম রয়েছে বিশ্বজোড়া।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?