পরশুরামের প্রাসাদ | Parshuram Palace 21/01/2022


PC:


জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় মহাস্থানগড়ের সীমানায় আবিষ্কৃত প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম এক নিদর্শনের নাম পরশুরামের প্রাসাদ (Parshuram Palace)। মহাকালী কুণ্ড থেকে ২০০ মিটার উত্তরে এই প্রাসাদের অবস্থান। এখানকার শেষ হিন্দু রাজা ও বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের নামানুসারে এই প্রাসাদের নামকরণ করা হয়, স্থানীয়দের কাছে যা হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্যালেস নামে পরিচিত। পরশুরাম ছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। তিনি ত্রেতা যুগে বর্তমান ছিলেন। পরশুরামের পিতা জমদগ্নি ব্রাহ্মণ হলেও, মা রেণুকা ছিলেন ক্ষত্রিয়। কঠোর তপস্যা করে তিনি শিবের নিকট হতে পরশু লাভ করেন এবং যুদ্ধবিদ্যা শেখেন।

 

পাল রাজাগণ এখানে ৭৫০ থেকে ১১২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। প্রচলিত মিথ অনুসারে রাজা নলের ছোট ভাই নীল ১০৮২-১১২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ রাজ্যের রাজা ছিলেন। সেসময় ভারতের দক্ষিণাত্বের শ্রীক্ষেত্র থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ মহাস্থানগড়ে আসেন। এই মাতৃহন্তারক ব্রাহ্মণ প্রথমে পুন্ড্রনগরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পান। পরে নল ও তার ভাইয়ের (নীল) মধ্যে মীমাংসা করেতে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। পরে নল ও নীলের সাথে প্রতারণা করে সে ব্রাহ্মণ পুন্ড্রনগরের রাজা হন। এ অভিশপ্ত ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। আর এ রামই মহাস্থানগড়ে পরশুরাম নামে পরিচিত।

 

শাহ সুলতান বলখীর মাজার থেকে প্রায় ২৫০ মিটার এবং মহাকালীর কুণ্ড থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার উত্তরে এ এলাকার শেষ হিন্দু রাজা পরশুরামের প্রাসাদ ছিল। ১৯৬১ সালে খনন করে পাল, মুসলিম এবং ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় পরশুরামের প্রাসাদে পাল আমলে নির্মিত ইমারতের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এছাড়া এই স্থান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রা, পোড়ামাটির নকশি ইট, পাল আমলের বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসাবশেষ, বিষ্ণু পটের ভাঙ্গা অংশ ও মৃৎপাত্র পাওয়া যায়। আর সুলতানি আমলের নিদর্শনের মধ্যে আছে পোড়ামাটির ফলক, প্রস্তর নির্মিত বিষ্ণু পট্টের ভংগ্নাংশ এবং কড়ি।
 

পরবর্তীতে আরও খননের ফলে আঠারো শতকের একটি আবাসের সন্ধান পাওয়া যায়।  অন্দর মহলে অবস্থিত ছোট একটি অঙ্গনের দিকে মুখ করে নির্মিত পৃথক পৃথক ৪টি মহল বা অংশের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ইট, চুন, সুরকির আস্তর, চুনকামের ব্যবহারে তৈরি আবাস্থলটি পরশুরামের প্রাসাদের মূল কাঠামো। পরশুরামের প্রাসাদ কক্ষ, সোপান শ্রেণী, সীমানা প্রাচীর, প্রবেশদ্বার এই ৪ অংশে বিভক্ত। প্রাসাদের পাশে “জীয়ৎ কুণ্ড” নামের একটি কূপ রয়েছে। প্রচলিত আছে, শাহ্‌ সুলতান বলখী মাহীসওয়ারের সঙ্গে যুদ্ধের সময় পরশুরাম এই কূপের পানির সাহায্যে মৃত সৈনিকদের জীবিত করতে পারতেন।

 

কিভাবে যাবেন?

বগুড়া শহরের ঠনঠনিয় বাসস্ট্যান্ড বা সাতমাথা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা ভাড়া নিয়ে পরশুরামের প্রাসাদ পৌঁছাতে পারবেন।

 

কোথায় থাকবেন?

বগুড়া শহরের চারমাথা রোড ও বনানীতে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, সেঞ্ছুরি মোটেল এবং মোটেল ক্যাসেল উল্লেখযোগ্য।

 

কোথায় খাবেন?

বগুড়ায় সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মায়ের দোয়া হোটেল, অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, চাপ কর্নার ও হোটেল সাফিনার বেশ সুনাম রয়েছে। অবশ্যই বগুড়ার বিখ্যাত দইয়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?