ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
মহাস্থানগড় (Mahasthangarh) প্রাচীন পুন্ড্রনগরী এর বর্তমান নাম যা বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত। এই খানে ৪ হাজার বছরের পুরানো স্থাপনা আছে। শক্তিশালী মাউর্যা, গুপ্ত এবং অন্যান্য রাজারা তাদের প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে মহাস্থানগড় ব্যবহার করতেন। পাল রাজাদের মূল রাজধানী হিসাবে পুন্ড্রনগর ব্যবহৃত হয়েছে। এই বিশাল শহরের ধংসস্তুপ করতোয়া নদীর পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত যা শুধু বগুড়া নয় বরং গোটা বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য ধারন করে। ইতিহাস বলে, ১২৭৯-১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসনকর্তা সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দীন বগরা খানের নামানুসারেই এখানকার নামকরণ হয়েছে বগড়া বা বগুড়া।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১0৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশি আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর যুদ্ধ হয়। (১২0৫-১২২0) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন হতে জানা যায় যে, বরেন্দ্র অঞ্চল যথা বগুড়া, রংপুর, দ্দিনাজপুর, রাজশাহী, মালদাহ ছিল পুন্ড্রদের আসল বাসস্থান। ১৯৩১ সালে মহাস্থানকে প্রাচীন পুন্ড্রনগরী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। গুপ্ত রাজাদের পতন এর পর রাজা শশাংক একটি শক্তিশালী রাজ্য পত্তন করেন।শশাংকের মৃত্যুর পর বিখ্যাত চীনা ভ্রমনকারী ওয়ান চুন ৬৯৩ সালে বৌদ্ধ স্থাপনা ভ্রমন এর জন্যে পুন্ড্রনগর এ আসেন। তিনি সম্রাট অশক এর তৈরী অনেক বৌদ্ধ মন্দির এবং আশ্রম দেখেন। তার বর্ননা মতে, পুন্ড্র নগরী ছিল একটি সমৃদ্ধ নগরী এবং এর আয়তন ছিল ছয় মাইল এর মত। এই জনপথ ছিল অনেকটা এথেন্স, ব্যবলিওন, মিশর এর মত। পুন্ড্রনগরী মহাস্থানগড় হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সমৃদ্ধশালী মুসলিম শাসনামলে। ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে “বুচানন হামিল্টন” সর্বপ্রথম পুন্ড্রনগরের ধংসাবসেস আবিস্কার করেন।
মহাস্থানগড়ের দর্শণীয় স্থানসমূহ
বৈরাগীর ভিটাঃ ৪ যুগ ধরে এটি নির্মিত হয়েছিল। খননের পর কিছু মন্দিরের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। ২টি মূর্তি খচিত কষ্টিপাথরের পিলার সংরক্ষণ করা হয়।
খোদারাপাথার ভিটাঃ অঞ্জলিতে পাথর খচিত মহান বুদ্ধ এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ করা হয়।
কালীদহ সাগরঃ গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দূর্গ রয়েছে। প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
শীলাদেবীর ঘাটঃ গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।
জিউৎকুন্ড কুপঃ মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
মানকালির দ্বীপঃ এখানে প্রাপ্ত প্রত্নতত্ত্বর মধ্যে রয়েছে পোড়ামাটির অলংকার ও থালা বাসন, তাম্র দিয়ে তৈরি গণেশের মূর্তি এবং পনেরো গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অবশিষ্টাংশ।
গোবিন্দ ভিটাঃ মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত।
তোতারাম পণ্ডিতের ধাপঃ এটি পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এখানে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ খুঁজে পাওয়া যায়।
গোকুল মেধঃ এই স্থানটি বেহুলার বাসর ঘর অথবা লক্ষিন্দরের মেধ নামেও পরিচিত। বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের ৩ কিলোমিটার দক্ষিনে গোকুল গ্রামে এটির অবস্থান। এখানে ১৭২ টি চারকোনা কক্ষসহ একটি মঞ্চ পাওয়া যায়।
ইস্কান্দারের ধাপঃ এটি দুর্গ এলাকার ৩.৫ কিলোমিটার দক্ষিনে বাঘাপুর গ্রামে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে অবস্থিত। এখানে কার্তিকা নামে একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি পাওয়া যায়।
খুল্লানার ধাপঃ চাঁদ সাগরের স্ত্রী খুল্লানার নামে নামকরন করা এই জায়গাটি দুর্গের উত্তরপশ্চিম কোণে চেঙ্গিসপুর গ্রামে অবস্থিত।
মাহী সওয়ার মাজার শরীফঃ মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে একটি ঐতিহাসিক মাজার শরীফ রয়েছে। পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।
ভীমের জঙ্গলঃ বগুড়ার উত্তর পূর্ব থেকে আরম্ভ হয়ে উত্তরে দামুকধারের বিট নামক স্থান পর্যন্ত এই জায়গাটি বিস্তৃত। এই জায়গাটির সাথে সামরিক এলাকার মিল পাওয়া যায় কেননা এখান থেকেই থেকে দেশের পূর্বাংশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা হত।
জগির ভবনঃ এই জায়গাটি ক্ষেতলাল সড়কের ৩ মাইল পশ্চিমে বাগতাহালিতে অবস্থিত। এখানকার পবিত্র স্থানগুলো দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত।
অররাঃ এটি মাসান দীঘির ওপরে অররা গ্রামে অবস্থিত।
তেঘরঃ এটি চাদিনা হাটের উত্তরে অবস্থিত।
রোজাকপুরঃ গোকুল থেকে পশ্চিমে যাওয়ার পথে আপনাকে হরিপুর গ্রামের পশ্চিম দিয়ে যেতে হবে। রোজাকপুর গ্রাম চাদনিয়া হাটের কাছে বগুড়া ক্ষেতলাল সড়কে, পশ্চিম হরিপুরে এবং সমরাই বিলের পশ্চিমে অবস্থিত।
মাথুরাঃ এটি পূর্ব বুমানপাড়ায় অবস্থিত যা পূর্ব গড় পর্যন্ত বিস্তৃত। মাথুরা গ্রামটি উত্তরে অবস্থিত।
মহাস্থানগড় জাদুঘরঃ মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।
রবি ও সোমবার সকালে এই জাদুঘরটি বন্ধ থাকে এবং প্রতিদিন দুপুর ১২:৩০ থেকে দুপুর ২:৩০ পর্যন্ত মধ্যাহ্ন বিরতি।
পরশুরামের প্রাসাদঃ এখানে ৩ টি আমলের প্রত্নতত্ত্ব রয়েছে। ৮ম শতকের প্রাপ্তির মধ্যে আছে পালা আমলে ভিসনুপাটটার পাথর। ১৫শ-১৬শ শতকের প্রাপ্তির মধ্যে আছে মুসলিম ঐতিহ্যের কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৮৩৫ থেকে ১৮৫৩ সালের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাবহার করা দুইটি মুদ্রা পাওয়া যায়।
কিভাবে যাবেন?
বগুড়া শহর থেকে সিএনজি অথবা অটোরিকশা দিয়ে সহজেই মহাস্থানগড় যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
বগুড়ায় রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে। ভাল মানের হোটেলের মধ্যে পর্যটন মোটেল, নাজ গার্ডেন, নর্থওয়ে মোটেল, সেফওয়ে মোটেল, মোটেল ক্যাসল এমএইচ, সেঞ্চুরি মোটেল, হোটেল সিস্তা, হোটেল আকবরিয়া, রেডচিলিস চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এন্ড আবাসিক হোটেল উল্লেখযোগ্য।
সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে হোটেল আল আমিন, হোটেল রয়াল প্যালেস, হোটেল সান ভিউ, হোটেল রাজমনি, হোটেল হানি ডে, হোটেল আজিজ উল্লেখ্য।
কোথায় খাবেন?
বগুড়া শহরে সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মায়ের দোয়া হোটেল, অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, চাপ কর্নার ও হোটেল সাফিনার মতো বেশকিছু ভাল মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আর অবশ্যই বগুড়ার বিখ্যাত দই খেতে ভুলবেন না।