ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোকিটার দুরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাসে ষাটগুম্বজ বাসস্টপেজ লাগোয়া সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটির কোন শিলালিপি না থাকায় ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্টাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে খান-ই-জাহান ১৫০০ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ষাট গম্বুজ মসজিদটি বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউনেস্কো ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
সুলতান নসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট।
মসজিদটি বাইরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট লম্বা। আর ভিতরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৪৩ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮ ফুট লম্বা। দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। মসজিদটির পূর্ব দিকে দেওয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর তুলনায় বেশ বড়। উত্তর এবং দক্ষিণ দেওয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। আর মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনারও আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে।
মসজিদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড এবং চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আযান দেবার ব্যবস্থাও ছিলো। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ।
মসজিদটির নাম ৬০ গম্বুজ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয় বরং গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং পূর্ব দেওয়ালের মাঝের দরজা এবং পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে। তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহরাব আছে ১০ টি। মাঝখানের মিহরাবটি বড় ও কারুকার্যপূর্ণ। দক্ষিণ দিকে ৫ টি এবং উত্তর দিকে ৪টি মিহরাব রয়েছে। উত্তর পাশে ১ টি মিহরাবের স্থলে ১ টি ছোট দরজা আছে। অনেকের মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন আর এই দরজা ছিল তার প্রবেশ পথ।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তরনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে। এ মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে বিবি বেগনির মসজিদ। হাতে সময় থাকলে ফুলের কারুকার্যময় মসজিদটি দেখে আসতে পারেন। বিবি বেগনির মসজিদের ৫০০ মিটার পেছনের দিকে রয়েছে চুনাখোলা নামের আরেকটি মসজিদ। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকায় টিকেট করতে হয়। বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে প্রবেশ টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা। রবিবারে পূর্ণ দিন কেল্লা বন্ধ থাকে এবং সোমবার খোলা হয় বেলা ২.০০ থেকে। গরমকালে কেল্লা খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শীতকালে কেল্লা খোলা হয় সকাল ৯টায় থেকে আর বিকেল ৫ টায় বন্ধ করা হয়। শীত ও গরমকাল উভয় সময়ই দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে থেকে ৩ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ থাকে।
কিভাবে যাবেন?
বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়ায় ষাটগম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজি তে করে করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
এখানে কিছু মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নিন।