বলিহার রাজবাড়ি | Balihar Rajbari 21/01/2022


PC: Shahnawaz Chowdhury


নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বলিহার রাজবাড়ি (Balihar Rajbari)। নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহার ইউনিয়নের কুড়মইল মৌজায় বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত। দেশ বিভাগের সময়কালে বলিহারের রাজা ছিলেন বিমেলেন্দু রায়। দেশ বিভাগের সময় জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে বলিহারের রাজা বিমেলেন্দু রায় চলে যান ভারতে। এরপর বলিহার রাজবাড়ি ভবনটি দেখভাল করেন রাজ পরিবারের অন্যান্য কর্মচারীরা।

 

কথিত আছে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের সনদ বলে বলিহারের এক জমিদার জায়গীর লাভ করেন। বলিহারের জমিদারদের মধ্যে অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় একজন লেখক ছিলেন। তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থাবলি প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড অন্যতম। বলিহারের নয় চাকার রথ প্রসিদ্ধ ছিল। বলিহারের জমিদার রাজেন্দ্র ১৮২৩ খিস্টাব্দে লোকান্তরিত হবার পূর্বে এখানকার বিখ্যাত দূর্গামন্দিরে রাজরাজেশ্বরী দেবীর অপরূপা পিতলের মুর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে রাজবাড়ির বিভিন্ন নিদর্শন, আসবাবপত্র, জানালা দরজাসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুট হয়ে যায়।

 

রাজ ভবনটি তৃতীয় তলা। ভবনের ছাদ থেকে বহুদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায়। প্রাসাদ কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত বিশাল দেবালয়টিতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা-অর্চনা করেন। দেবালয়ের ভিতরে অনেক কক্ষ আছে। এই কক্ষগুলি এক একটি মন্দির ছিলো বলে জানা যায়। রাজবাড়ীর সামনেই রয়েছে প্রকাণ্ড তোরন। ভেতরের কম্পাউণ্ডে নাটমন্দির, রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির, জোড়া শিব মন্দির আর বিশাল দোতলা জমিদার বাড়ি। যদিও বিভিন্ন মন্দিরের দেয়ালের কারুকাজ, মূল্যবান রিলিফের কাজগুলো এখন অস্পষ্ট ও ভাঙ্গা। এই কারুকাজগুলো ছিল এই মন্দির গুলোর শোভাবর্ধক।

 

জনশ্রুতি আছে, মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ বার ভূঁইয়াদের দমন করতে এদেশে সৈন্যসামন্ত নিয়ে বলিহার পৌঁছেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় সৈন্যরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বিশ্রামের জন্য ও মানসিংহের প্রেরিত গুপ্তচরের মাধ্যমে বার ভূঁইয়াদের খবর জানার জন্য যাত্রাবিরতি করেন সেনাপতি মানসিংহ। ওই সময় চলছিল বরেন্দ্র অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুম। বেশি দিন বসে থাকলে সৈন্যরা অলস হয়ে যেতে পারে ভেবে মানসিংহ সৈন্যবাহিনী দিয়ে ওই ৩৩০টি দিঘী ও পুকুর খনন করেন। নামগুলো শ্রুতিমধুর যেমন মালাহার, সীতাহার, বলিহার, অন্তাহার নানান নামেই দিঘি ও পুকুরগুলো পরিচিত ছিল।

 

পূর্বে রাজবাড়ির একটি ভবন স্থানীয় একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কিন্তু নতুন স্কুল ভবন নির্মিত হওয়ায় রাজবাড়ী ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। প্রাসাদ এর ভিতরে অবস্থিত দেবালয় পূজা অর্চনার কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাসাদের সিংহদুয়ার এখন অনেকটাই শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদের পেছনের মালিপাড়ায় এখনো বিশাল আকারের পাশাপাশি দুটি শিবলিঙ্গ আছে। কালো পাথরের শিবলিঙ্গ যাতে চুরি হয়ে না যায় সে কারণে গোড়ায় খোয়া সিমেন্ট দিয়ে মজবুত করে ঢালাই দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। দর্শনীয় প্রাসাদটির কয়েকটি ভবন বর্তমানে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে একসময়ের বলিহার রাজাদের ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে।

 

কিভাবে যাবেন?

নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে নওগাঁ-মহাদেবপুর রোডে হয়ে রাজশাহীগামী বাসে বলিহারে যেতে পারবেন। বলিহার কলেজের উত্তরে বলিহার রাজবাড়ির অবস্থান।

 

কোথায় থাকবেন?

নওগাঁতে হোটেল প্লাবন, হোটেল যমুনা, হোটেল অবকাশ, মল্লিকা ইন, হোটেল ফারিয়াল ও হোটেল রাজ প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

 

কোথায় খাবেন?

বালুডাঙ্গা বাস ষ্টেশনে সাধারণ মানের খাবারের দোকান রয়েছে। এছাড়া নওগাঁর গোস্তহাটির মোড়ে ভালমানের কয়েকটি রেস্তোরাঁ পাবেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?