রবি ঠাকুরের পতিসর কুঠিবাড়ি | Rabindra Patishor Kuthibari 21/01/2022


PC:


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নামটি শুনতেই মনে চলে আসে অসংখ্য গান, কবিতা, উপন্যাস ও ছোট গল্পের সমাহার। রবীন্দ্রনাথ মানেই বাঙালীর মনন ও সাহিত্যের আরেক নাম। আমাদের দেশের অনেক জায়গার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে কবির স্মৃতিচিহ্ন। তাই ছুটিতে শহুরে যান্ত্রিকতা ছেড়ে হৃদয় দোলাতে আপনজনদের নিয়ে ঘুরে আসুন রবীন্দ্র-স্মৃতিবিজড়িত এসব জায়গাগুলোতে। আর কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম একটি জায়গা হল নওগাঁর পতিসর কুঠিবাড়ি (Patishor Kuthibari)।

 

১৮৩০ সালে রবি ঠাকুরের পিতামহ ও জোড়াঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য দ্বারকানাথ ঠাকুর এই অঞ্চলে আগমন করেন। পরবর্তীতে ১৮৯১ সালে সর্বপ্রথম কালিগ্রাম পরগনার জমিদারী দেখাশোনা করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিসরে আসেন। প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত পতিসর রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ীর সামনে সিংহ দুয়ার, প্রশস্থ আঙ্গিনা, দোতালা কুঠিবাড়ি এবং কুঠিবাড়িকে ঘিরে থাকা বেশকিছু ভবনের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। নান্দনিক প্রবেশ পথ দিয়ে সামনে আগালেই মূল ভবনের সামনে নজরে পড়ে কংক্রিটের তৈরী রবি ঠাকুরের একটি আবক্ষ মূর্তি ও মার্বেল পাথরে খোদিত রবীন্দ্র রচনার কিছু কথা। রবীন্দ্র কাচারি বাড়ির ভিতরে বিভিন্ন সংরক্ষিত নিদর্শনের মধ্যে আছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজসপত্র, কবির স্বহস্তে লিখিত চিঠি, কবির বিভিন্ন বয়সের ছবি ও আসবাপত্র প্রভৃতি। এছাড়া কুঠিবাড়ির সামনে আছে রবীন্দ্র সরোবর, দীঘি ও কালিগ্রাম রবীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউট।

 

এই পতিসরে বসে কবি রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা, বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাসের অনেকাংশ। ছোট গল্পের মধ্যে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, ইংরাজ ও ভারত বাসী প্রবন্ধ। গানের মধ্যে যেমন “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা/ তুমি আমার নিভৃত সাধনা,” বধূ মিছে রাগ করোনা, তুমি নব রুপে এসো প্রানেসহ অনেক গান। দুই বিঘা জমি, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে কবিতাসহ বিভিন্ন কবিতা। কবির স্মৃতি বিজড়িত মনিতলার পূজামন্ডপের সেই তাল গাছটি আজ আর নেই। ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে অনেক আগে। তবে রবীন্দ্র গবেষকগনের ধারনা মতে পতিসর কুঠিবাড়ির সামনে যে দুই বিঘার মাঠটি আছে সেটিই কবির রচিত কবিতা দুই বিঘা জমি’র সেই মাঠটি হবে।

 

সাহিত্য রচনা ও জমিদারী দেখাশোনা করার পাশাপাশি অবহেলিত পতিসর এলাকার মানুষের জন্য কবিগুরু দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ অনেক জনহিতৈষীমূলক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। যার যারশ্রুতিতে কালীগ্রাম রবীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউট, দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা সহ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কারের ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দিয়ে অত্র এলাকায় একটি কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। তবে পতিসরের অধিকাংশ স্থাপনার সাথে শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের স্থাপনাগুলোর মিল রয়েছে। ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষবারের মতো পতিসরে আসেন। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই কুঠিবাড়ী প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ কবির জন্মদিনে পতিসরে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলায় দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

 

কিভাবে যাবেন?

আত্রাই উপজেলা হতে নসিমন বা ভুটভুটির মতে স্থানীয় যানবাহনে ১৪ কিলোমিটার দূরে পতিসর গ্রামে অবস্থিত রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ী যেতে পারবেন।    

 

কোথায় থাকবেন?

কুঠিবাড়ীর কাছে অবস্থিত জেলা পরিষদের দোতালা ভবনে অনুমতি সাপেক্ষে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া নওগাঁতে অবস্থিত আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল প্লাবন, হোটেল যমুনা, হোটেল অবকাশ, মল্লিকা ইন, হোটেল ফারিয়াল ও হোটেল রাজ অন্যতম।

 

কোথায় খাবেন?

আত্রাই উপজেলায় সাধারণ মানের খাবারের হোটেল আছে। নওগাঁর গোস্তহাটির মোড়েও ভালমানের কিছু রেস্তোরাঁ পাবেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?