বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক | Bangabandhu Sheikh Mujib Safari Park 12/01/2022


PC:


PC:Minhaz Mishu

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (Bangabandhu Sheikh Mujib Safari Park) বা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার  মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত।  প্রায় ৩,৬৯০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক ছোট ছোট টিলা ও শালবন সমৃদ্ধ। পার্কটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ড এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারী পার্কের কতিপয় ধারনা সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

 

পার্কে ১২২৫ একর জায়গা নিয়ে কোর সাফারি, ৫৬৬ একর জায়গা নিয়ে সাফারি কিংডম, ৮২০ একর জায়গা নিয়ে বায়োডাইভার্সিটি, ৭৬৯ একর এলাকা নিয়ে এক্সটেন্সিভ এশিয়ান সাফারি এবং ৩৮ একর এলাকা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। সাফারী পার্কের চারদিকে নির্মিত হয়েছে স্থায়ী ঘেরা এবং এর মধ্যে দেশী/বিদেশী বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পর্যটকগণ চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ লাভ করবেন। তবে সাফারী পার্কের ধারনা চিড়িয়াখানা হতে ভিন্নতর।

 

বঙ্গবন্ধু স্কয়ার

সাফারি পার্কের ৩৮ একর জায়গা নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার তৈরি করা হয়েছে। পার্কিং এলাকা, বিনোদন উদ্যান ও প্রশাসনিক কাজে নির্মিত ভবনগুলো বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও রয়েছে দুটি বিশাল আকার পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, একটির নাম টাইগার রেস্তোরাঁ অপরটি সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। এই দুটো রেস্টুরেন্টে বসেই কাচের মধ্যে দিয়ে সিংহ এবং বাঘ দেখতে দেখতে খাওয়া-দাওয়া করা যাবে।বিরল প্রজাতির কিছু বন্য প্রাণি আছে যেগুলো কখনও এশিয়া অঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় না। এগুলোর মধ্যে আল পাকা, ক্ষুদ্রকায় ঘোড়া, ওয়ালাবি, ক্রাউন ক্রেইন, মান্ডারিং ডাক ইত্যাদি।

 

কোর সাফারি

১২১৭ একর অঞ্চল জুড়ে গঠিত কোর সাফারি অংশে গাড়ি ছাড়া পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ন নিষেধ। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে যে কেউ গাড়ি বা জিপে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা বিভিন্ন বন্য প্রাণী দেখতে পারবেন। সুবিন্যষ্ট জায়গাগুলোর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে ২০ একরে বাঘ, ২১ একরে সিংহ, ৮.৫০ একরে কালো ভালুক, ৮ একরে আফ্রিকান চিতা, ৮১.৫০ একর চিত্রা হরিণ, ৮০ একরে সাম্বাব ও গয়াল, ১০৫ একরে হাতী, ৩৫ একরে জলহস্তী, ২২ একরে মায়া ও প্যারা হরিণ, ২৫ একরে নীলগাই এবং বারো সিংগা, ১১৪ একরে।

 

সাফারি কিংডম

সাফারি পার্কের ৫৫৬ একর জায়গা জুড়ে সাফারি কিংডম তৈরি করা হয়েছে। শুরুতেই রয়েছে ম্যাকাও ল্যান্ড, এখানে আফ্রিকা থেকে আনা প্রায় ৩৪ প্রজাতির বিভিন্ন রকম পাখি রয়েছে। ম্যাকাও ল্যান্ডের পাশে রয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ সমৃদ্ধ মেরিন অ্যাকুরিয়াম। যার মধ্যে টাইগার ফিস, ক্রোকোডিল ফিস, অস্কার, ব্ল্যাক গোস এবং ২০ সেকেন্ড অন্তর অন্তর রং পরিবর্তন কারী চিকলেট মাছ উল্লেখযোগ্য।

এর প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট, পেলিকেন আয়ল্যান্ড, বোটিং ও লেকজোন; বৃহৎ আকারের গাছপালা ঘেরা ক্রাউন্ট ফিজেন্ট এভিয়ারী, ধনেশ এভিয়ারী, প্যারট এভিয়ারীসহ দেশি-বিদেশী পাখির পাখীশালা, কুমির পার্ক, অর্কিড হাউজ, প্রজাপতি কর্ণার, শকুন ও পেঁচা কর্ণার, এগ ওয়ার্ল্ড, কচ্ছপ-কাছিম ব্রিডিং সেন্টার, লামচিতা হাউজ, ক্যাঙ্গারু বাগান, হাতী-শো গ্যালারী, ময়ুর/মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, সর্প পার্ক, ফেন্সি কার্প গার্ডেন, ফেন্সি ডার্ক গার্ডেন, লিজার্ড পার্ক, ফুডকোটর্, পর্যবেক্ষন টাওয়ার ও জলাধার ইত্যাদি।

 

এছাড়াও বায়োডাইভারসিটি পার্ক ও এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারী পার্কও রয়েছে। বায়োডাইভারসিটি পার্ক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিরল, বিলুপ্তপ্রায়, দূলর্ভ ও বিপন্ন প্রজাতির গাছের জীন-পুল সংরক্ষণ করা। আর এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারী পার্কে সকল এশীয় তৃনভোজী এবং ছোট মাংসাশী প্রাণি, পাখি, সরিসৃপ ও উভচর প্রাণি নিয়ে এক্সটেনসিভ সাফারী পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

 

সাফারি পার্কের প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা তবে ১৮ বছরের নিচে ছেলেমেয়েরা ২০ টাকায় পার্কে প্রবেশ করতে পারে। আর সাধারণ অথবা শিক্ষা সফরে আসা ছাত্রছাত্রীদের পার্কে প্রবেশ করতে ১০ টাকা দিতে হয়। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে প্রবেশ মূল্য ৫ ডলার। যদি শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ৪০-১০০ জন হয় তাহলে সবার প্রবেশ করতে ৪০০ টাকা লাগবে। যদি শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ এর বেশি হয় তাহলে প্রবেশ করতে ৮০০ টাকা লাগবে।

কোর সাফারি পার্ক যেখানে খোলা পরিবেশে জীব জন্তু ঘুরে বেড়ায় তার মাঝ দিয়ে জীপ ও মিনিবাসে ঘুরে দেখতে জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রদান করতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। মিনিবাসে করে ২০ মিনিট ঘুরিয়ে দেখাবে। পার্কের অন্যান্য জায়গাতে প্রবেশ করতেও টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হবে। সব গুলো স্পট দেখতে মোটামুটি ২০০-৩০০ টাকা লাগবে। একসাথে কয়েকটি স্পট দেখার প্যাকেজ ও পাওয়া যায়। এছাড়া প্যাডেল বোটে ৩০ মিনিট ভ্রমণ করতে জনপ্রতি ২০০ টাকা খরচ হবে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার মহাখালী থেকে শ্রীপুর, ভালুকা কিংবা ময়মনসিংহ গামী বাসে গাজীপুরের চৌরাস্তা অতিক্রম করে কিছুটা গেলে বাঘের বাজারে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। বাঘের বাজার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক যেতে রিকশা বা অটোরিকশা ভাড়া লাগবে ২০-৪০ টাকা।

 

 

 

 

 

 

 

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?