গড় জরিপা দূর্গ | Gor Joripa Durgo 19/01/2022


PC:


আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে ভারতের কামরূপ কামাখ্যার কোচ রাজা দলিপ সামন্তের এ মাটিদুর্গ ধ্বংস হয়ে গেছে। আধিপত্য পোক্ত করার জন্য দলিপ সামন্ত গড় দলিপা দুর্গ (Gor Dolipa Durgo) নির্মাণ করেন। তবে মাটির দুর্গে চারটি পরিখার মধ্যে একটির অস্তিত্ব এখনও টিকে রয়েছে। ইতিহাসের বহু ঘটনার স্বাক্ষী ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার গড় জরিপার বা গড় দলিপা তারই একটি অংশ মাত্র।

 

এ দূর্গের ইতিহাস পড়ে কেউ যদি এর সর্বশেষ ধ্বংসাবশেষের কাছে যায়, তবে হয়তো তিনি এ ইতিহাসকে কাল্পনিক বলে আখ্যায়িত করবে। কারণ, ধ্বংসাবশেষের শেষ চিহৃত অবশিষ্ট ওই দূর্গের প্রায় ৪০ ফুট উচু পরিখাটি এখন ১০ ফুটের বেশী উচ্চতা নেই। ইতিহাস সূত্রে জানাগেছে, ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর অঞ্চলে দলিপা নামক একজন কোচ রাজা রাজত্ব করতেন। উত্তরের গারো পাহাড়ের কড়ই বাড়ি, খুটিমারী, বার হাজারী হইতে দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং পূর্বে নেতাই নদী হইতে পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। কথিত আছে তিনি এই দুর্গ নির্মাণ করেন। সম্রাট আকবরের সময় এ অঞ্চলের নাম ‘দশ কাহনীয়া বাজু বলে’ ইতিহাসে পাওয়া যায়।

 

১৪৯১ সালে ফিরোজ শাহ বাংলার নবাব হলে সেনাপতি মজলিশ শাহ হুমায়ন দুর্গটি দখল করেন। ১৫১৯ সালের মধ্যে শেরপুর অঞ্চলটি পাঠান সুলতানদের অধিকারে আসে। মজলিস খান হুমায়ন শাহ চতুর্দশ শতাব্দীতে গড়জরিপাকে পথচারীদের জানমাল পাহাড়িয়া দস্যু ও ঠগদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দুর্গটি ব্যবহারের অনুমতি দেন। জনশ্রুতি রয়েছে, দলিপ সামন্ত আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য দুর্গ ও পরিখা নির্মাণ করেন। ফিরোজ শাহের রাজত্বকালে (১৫৫১-৮৭) মজলিশ শাহ নামে একজন সেনাপতি দুর্গ আক্রমণ করেন। তিনি দলিপ সামন্তকে হত্যা করে দুর্গের দখল নেন। দুর্গে মজলিস শাহ হুমায়নের সমাধি ও শিলালিপি ছিল। পরে আরবি ও ফার্সি শিলালিপি থেকে এর পাঠোদ্ধার করা হয়। গড় জরিপা শিলালিপিতে বাংলায় এটির নির্মাণকাল লেখা ‘শেরপুর ঈসায়ী ১৪৮৮’। ১৫৭৬ সালে কুচবিহারের রাজা লক্ষ্মী নারায়ণের সঙ্গে পটকানোয়ারের বিবাদ তুঙ্গে উঠলে এ-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বাংলার শাসনকর্তা মানসিংহ কিছুদিন এ দুর্গে বাস করেন।

 

এই দূর্গে নকশার বিশেষ কাজ না থাকলেও ঐতিহাসিক বিবেচনায় এবং আকারের কারণে এর বিশেষ স্থান রয়েছে। তিনটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বাইরের প্রাচীর ও মাঝখানের প্রাচীরের মধ্যে ছিলো পরিখা। চারদিকে চারটি প্রবেশ পথ। এগুলোরো আবার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। পূর্বদরজা কাম দুয়ারী, পশ্চিমদরজা পানি দুয়ারী, দক্ষিণদরজা শ্যামশেখর দুয়ারী, উত্তরদরজা খিরদুয়ারী।

 

১৮৫৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের কবলে পড়ে দুর্গের অনেক কিছু ভেঙে চূর্ণ হয়ে যায়। পরিখাগুলো সব সময় পানিতে পূর্ণ হয়ে খাল বা লেকের মতো দেখাত। এর মধ্যে আবার নৌকা আকৃতির একটা দ্বীপ ছিল। ভূমিকম্পের পর আর দ্বীপটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দুর্গের ভেতরে দিঘি ছিল। ধারণা করা হয়, সৈন্য, হাতি, ঘোড়ার গোসলসহ প্রয়োজনীয় সুপেয় পানির সংকুলানের জন্য দিঘি খনন করা হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় দিঘিগুলোও ভরাট হয়ে চলেছে। এর মধ্যে মতি মিয়ার তালা নামে একটি জলাধার ছিল। পরবর্তীকালে দুর্গ ও এর আশপাশ এলাকা কৃষিক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভেতরের প্রাচীরের মধ্যে ১.১৭০ বিঘা জমি ছিল। প্রাচীরের উচ্চতা ছিল ২৫ ফুট থেকে ৪৩ ফুট পর্যন্ত। প্রাচীরের পরিধি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। পরিখাগুলো ৪৫০ ফুট থেকে ৯০০ ফুট পর্যন্ত চওড়া ছিল।

 

কিভাবে যাবেন?

শেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ভগ্ন গড়জরিপার দূর্গতে স্থানীয় যানবাহন যোগে পৌঁছানো যায়।

 

কোথায় থাকবেন?

শেরপুরে সাধারণ এবং মধ্যম মানের কিছু গেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে সম্পদ, কাকলী, বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, ভবানী প্লাজা অন্যতম। এছাড়া শেরপুরে সড়ক ও জনপথ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডি, এটিআই এবং পল্লী বিদ্যুৎতের পৃথক পৃথক রেষ্ট হাউজ রয়েছে।

 

কোথায় খাবেন?

শেরপুর শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেল শাহজাহান, হোটেল আহার এবং হোটেল প্রিন্সে খাবার খেতে পারেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?