ইনানী বিচ | Inani Beach
02/05/2021
সাজেক ভ্যালি | Sajek…
16/04/2021
চা বাগান | Cha Bagan
03/05/2021
রামু বৌদ্ধ বিহার | Ramu…
02/05/2021
02/05/2021
16/04/2021
03/05/2021
02/05/2021
শেরপুর জেলা শহরে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম ঐতিহ্যবাহী মাইসাহেবা জামে মসজিদ (Mai Saheba Jame Mosque) নজরে আসে। আনুমানিক ২৫০ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদেটি বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হলেও তাতে ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শেরপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত মাইসাহেবা মসজিদের দুইটি সুউচ্চ মিনার শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দৃষ্টিগোচর হয়।
জানা গেছে, তৎকালীন মুক্তাগাছার সুসঙ্গ মহারাজাকে শেরপুর পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান শেরপুরের নয়আনী জমিদার হরচন্দ্র চৌধুরী, তিনআনী জমিদার রাধাবল্লভ চৌধুরীসহ অন্যান্য জমিদারগণ। মহারাজা তাঁদের জানিয়ে দেন অন্যের জমিতে তিনি আহার ও রাত্রি যাপন করেন না। এসময় শেরপুরের জমিদারগণ তিনআনী বাড়ির পশ্চিমাংশের ২৭ একর লাখোরাজ সম্পত্তি মহারাজার নামে লিখে দিলে তিনি শেরপুরে আসেন। শেরপুর ছাড়ার সময় তাঁকে দেওয়া ওই জমি তিনি নিঃস্বার্থপর কেউ একজনকে দান করে যেতে চান। এ সময় অনেক সাধু সন্ন্যাসী এ জমির জন্য প্রার্থী হন। জমিদার জানতে পারেন, উল্লেখিত স্থানের তমাল বৃক্ষের নীচে বসে এক মুসলিম সাধক সবসময় ধ্যান ও উপাসনায় মগ্ন থাকেন কিন্তু তিনি জমির প্রার্থী হননি। সুসঙ্গ মহারাজা তাঁকে কিছু জমি দেওয়া হবে বলে ডেকে পাঠান কিন্তু ওই মুসলিম সাধক মহারাজার সাথে দেখা না করে জানিয়ে দেন, তিনি যতটুকু জমিতে বসে উপাসনা করছেন তার চাইতে বেশি জমির প্রয়োজন নেই তাঁর (মুসলিম সাধক)। এ কথা শুনে মহারাজা খুবই মুগ্ধ হন এবং দলিল লিখে ওই সাধককে ২৭ একর জমি দান করেন এবং মহারাজা নিজে ওই স্থানে এসে মুসলিম সাধকের হাতে দলিলটি হস্তান্তর করেন। ওই মুসলিম সাধকই হচ্ছেন পূণ্যময়ী সালেমুন নেছা বিবির স্বামী মীর আব্দুল বাকী।
মীর আব্দুল বাকীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী সালেমুন নেছা বিবি, ভাগনে সৈয়দ আব্দুল আলী এবং স্থানীয় মুসলমানদের সহায়তায় মীর আব্দুল বাকীর কবরের পাশেই ১৮৬১ সালে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট দুই কাতারের মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায়, সালেমুন নেছা বিবি ছিলেন ইমাম হাসান (রা:) এর বংশধর। এই বংশের নারীদের মাইসাহেবা এবং পুরুষদের মিয়া সাহেব বলে ডাকা হতো। সেই সময় স্থানীয় জনসাধারণ সালেমুন নেছা বিবিকে উপাধি অনুযায়ী মাইসাহেবা বলে সম্বোধন করতেন এবং মসজিদটি তাঁর নামেই পরিচিতি পেয়ে আসছে।
আবার এই মাইসাহেবা জামে মসজিদের নামকরণ নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। তৎকালীন সময় শেরপুরের তিনআনি জমিদার মুক্তাগাছার জমিদার কে নিমন্ত্রণ জানান। মুক্তাগাছার জমিদার তার বদৌলতে শেরপুরের কিছু জায়গা চান। শেরপুরের জমিদার মসজিদের এই জায়গাটি মুক্তাগাছার জমিদার কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং হাতি দিয়ে সেখানে বিদ্যমান খাজনা তোলায় ব্যবহৃত ঘর ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাতিকে নিয়ে বার বার ঘরের কাছে যাওয়া মাত্রই হাতি সালাম দিয়ে বসে পড়ে। এই কথা শুনে তিনআনি জমিদার নিজে এসে দেখতে পান এই ঘরের ভিতর একজন নারী ইবাদতে মগ্ন আছেন। জমিদার তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে ফেরত যান। সেই নারীর নাম ছিল মাই সাহেবা। মাই সাহেবার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে মাইসাহেবা জামে মসজিদ নামকরণ করেন।
৩ তলা বিশিষ্ট মাইসাহেবা জামে মসজিদ সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। মসজিদে একত্রে প্রায় ৯০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রতি শুক্রবার শেরপুর শহর ছাড়াও আশেপাশের অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মুসল্লী এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। মাইসাহেবা জামে মসজিদ ময়মনসিংহ বিভাগের সবচেয়ে বেশি দান গ্রহণকারী মসজিদ হিসাবেও সুপরিচিত। মুসলমান ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীরাও এখানে নিয়মিতভাবে দান করে থাকেন।
কিভাবে যাবেন?
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ড্রিমল্যান্ড, আনন্দ, তুরাগ ইত্যাদি বিভিন্ন বাস সার্ভিসের মাধ্যমে শেরপুর আসতে পারবেন। শেরপুর পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র তিনআনী বাজার এলাকায় ৬৫ শতাংশ জমির পশ্চিম পাশে মসজিদটির অবস্থান।
কোথায় থাকবেন?
শেরপুরে সাধারণ এবং মধ্যম মানের কিছু গেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে সম্পদ, কাকলী, বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, ভবানী প্লাজা অন্যতম। এছাড়া শেরপুরে সড়ক ও জনপথ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডি, এটিআই এবং পল্লী বিদ্যুৎতের পৃথক পৃথক রেষ্ট হাউজ রয়েছে।
কোথায় খাবেন?
শেরপুর শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেল শাহজাহান, হোটেল আহার এবং হোটেল প্রিন্সে খাবার খেতে পারেন।