আদিনাথ মন্দির | Adinath Temple 02/05/2021


PC:


সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি মহেশখালী, কক্সবাজারের বুকে একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ এটি। শুধু অতুলনীয় স্বাদের মিষ্টি পানই নয়, বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানের জন্যও মহেশখালীর খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তেমনই একটি স্থান হলো আদিনাথ মন্দির। মহেশখালী বেড়াতে গেলে প্রাচীন এই মন্দিরটি আপনাকে ঘুরে আসতেই হবে।

 

আদিনাথ মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ ফুট উপরে ময়নাক পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ১০.৭ মিটার, প্রস্থ ৬.৮২ মিটার এবং উচ্চতা ৫.৯৩ মিটার। মন্দিরটি হিন্দু দেবতা শিবকে উত্সর্গীকৃত, যিনি আদিনাথ নামে পরিচিত। আবার আদিনাথের অন্য নাম মহেশ, যা থেকে মহেশখালী নামের সৃষ্টি। জনশ্রুতি আছে, কোনো এক কৃষক এই দ্বীপের একটি বনের ভিতর মহেশের মূর্তি পান। এরপর এই দেবতার নামে একটি মন্দির তৈরি করে, সেখানে ওই বিগ্রহটি স্থাপন করেন। পরে এই দেবতার নামের সাথে খালী (খাল অর্থে) শব্দ যুক্ত হয়ে— এই স্থানটি মহেশখালী নামে পরিচিত লাভ করে।

 

মন্দিরটি বাংলা ফাল্গুন মাসে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক মেলার জন্য জনপ্রিয়। এটি ১৩ দিনের দীর্ঘ মেলা যেখানে বিভিন্ন জেলা থেকে হিন্দু সম্প্রদায় একটি পবিত্র পশ্চাদপসরণ করতে আসে। ধারাবাহিকভাবে, গাইডলাইন অনুসারে, আদিনাথ, অষ্টভূজা, ভৈরব এবং রাধা গোবিন্দ অভয়ারণ্যগুলিতে এক সাথে পূজা করা হয়। অভয়ারণ্যে একটি অস্বাভাবিক প্রজাতির পারিজাত ফুল ফোটে। ভক্তরা ধারাবাহিকভাবে একটি গাছের সাথে তার শুভেচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য একটি স্ট্রিং সংযুক্ত করার অঙ্গীকার গ্রহণ করেন এবং যখন ইচ্ছাগুলি সত্য হয়, তারা স্ট্রিংটি খুলে পূজা উপস্থাপন করেন।

 

বর্তমানে প্রতিনিয়ত পাহাড় ভাংগনের কারণে মন্দিরের পূর্ব পাশের বিস্তর জমি সমুদ্রের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। আদিনাথ মন্দিরের পাদদেশে রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি পাড়া ও ঠাকুরতলা বৌদ্ধ বিহার নামে একটি বিহার রয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাক হানাদারবাহিনী বৌদ্ধ বিহারটিতে অগ্নিসংযোগ পূর্বক নির্বিচারে গোলাবর্ষণে ৫ জন নিরীহ রাখাইন শহীদ হন। পাকদের নির্মম তান্ডবলীলার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনো উক্ত বৌদ্ধ বিহারে গলাকাটা কয়েকটি শ্বেত পাথরের বুদ্ধমূর্তি কালের নীরব সাক্ষী হিসেবে বর্তমান রয়েছে। আদিনাথ মন্দিরে আগত পর্যটকদের জন্য অস্থায়ীভাবে রাখাইন রমণীরা তাদের নির্মিত কাপড়, চাদর বিক্রয় করার জন্য পসরা সাজিয়ে রাখে। আদিনাথ মন্দিরের পশ্চিম পাশে অবস্থিত মুদিরছড়ার সন্নিকটে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কক্সবাজারে আগত বৃটিশ মালিকানাধীন ‘এম.ভি ম্যালাড’ নামে এক জাহাজ ডুবিতে অনেক লোকের সলিল সমাধি ঘটে। সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও ছিল। হতভাগ্য যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন কক্সবাজার মহকুমায় সদ্য বদলী হয়ে আসা পরিবারবর্গসহ একজন ম্যাজিস্ট্রেট। প্রখ্যাত লেখক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর বড় ভাই সৈয়দ মোস্তফা আলীর মেয়ে ছিলেন হতভাগা ম্যাজিস্ট্রেটের সহধমির্ণী।

 

কিভাবে যাবেন?

কক্সবাজার থেকে যেতে হবে কাস্তুরী ঘাট বা ৬ নং জেটি। কক্সবাজারের যে কোন জায়গা থেকে অটো রিক্সা অথবা সিএনজি নিয়ে চলে যান ঘাটে। কক্সবাজারের কস্তুরী ঘাট বা ৬ নং জেটি ঘাট থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোট করে মহেশখালী যাওয়ার জন্যে স্পীড বোট পাবেন, মহেশখালী পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। এছাড়া ইঞ্জিন নৌকা দিয়েও যাওয়া যায়। চাইলে স্পিডবোট বা ইঞ্জিন নৌকা রিজার্ভ করে নিতে পাড়বেন।

 

কোথায় খাবেন?

মহেশখালিতে খাবার জন্য ইদানিং বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে দাম ভালো করে যাচাই করে নিবেন।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?