মাথিনের কূপ | Mathiner Kup 02/05/2021


PC:


আলোকচিত্র:Rocky Masum

টেকনাফ হলো বহু পর্যটকদের আগ্রহের জায়গা। শুধু সাগরের অপরূপ সৌন্দর্যই নয়, দেখার মত আরো আছে অনেক কিছু। মাথিনের কূপ তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা জায়গা। জায়গাটির পিছনে একটি অপ্রত্যাশিত প্রেমের গল্প রয়েছে। অগাধ প্রেমের গল্পের কারণে পর্যটকরা মাথিনকে আরও বেশি পছন্দ করেন। এটি কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত টেকনাফ থানার কাছে অবস্থিত।

 

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের ঘটনা, কলকাতার সুদর্শন কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য অতি ভয়ংকর ও দুর্গম এলাকা টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসেন। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা টেকনাফ থানায় তার তেমন কোনো কাজকর্ম ছিল না। অনেকটা এখানে সেখানে ঘুরেফিরে সময় কাটাতেন। থাকতেন থানার আধপাকা ঘরের একটি কক্ষে। একদিন একাধিক নারী কণ্ঠের অস্পষ্ট মৃদু গুঞ্জনে ধীরাজের ঘুম ভেঙে যায়। থানার ছোট বারান্দায় এসে দেখলেন রং-বেরঙের ফতুয়া পরিহিতা ৫০/৬০ জন মগী রাখাইন তরুণী পাত কুয়ার চারদিকে জড়ো হয়ে হাসিগল্পে মশগুল। তাদের সুউচ্চ কলহাস্যে থানার প্রাঙ্গণ মুখরিত। এটাই ছিল সমগ্র টেকনাফে একটি মাত্র কুয়া। প্রতিদিন তরুণীরা পাত কুয়ায় জল নিতে আসতেন। আর ধীরাজ থানার বারান্দায় চেয়ারে বসে তরুণীদের জল তোলার দৃশ্য দেখতেন।

 

একদিন ধীরাজের নজরে পড়ে সম্পূর্ণ নতুন সাজে সজ্জিত আরেক তরুণীকে, সুন্দরী এই তরুণীর নাক-চোখ-মুখ বাঙালির মেয়েদের মতো। নাম তার মাথিন। টেকনাফের জমিদার ওয়ান থিনের একমাত্র মেয়ে। প্রথম দর্শনেই মেয়েটিকে তার ভালো লেগে যায়। প্রতিদিন ভোর হওয়ার আগেই ধীরাজ ভট্টাচার্য থানার বারান্দায় চেয়ারে গিয়ে বসতেন এবং মাথিনের আগমনের প্রতীক্ষা করতেন। মাথিন যখন কলসি কাঁখে তার সুউচ্চ গ্রীবা দুলিয়ে থানা প্রাঙ্গণ দিয়ে হেঁটে আসতেন, ধীরাজ তন্ময় হয়ে সে দৃশ্য উপভোগ করতেন। অন্যান্য তরুণী আসার আগেই মাথিন পাতকুয়ায় আসতেন এবং জল নিয়ে ফিরতেন। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশে তারা একে অপরের সঙ্গে গভীর প্রেম ও মোহবেশে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন।

 

দিন গড়াতে থাকে। একদিন-দুদিন এভাবে। ইতোমধ্যে দুজনের প্রেমের কথা সবাই জেনে যায়। নানা বাধা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। এরই মাঝে কলকাতা থেকে বাবার চিঠি আসে ধীরাজের কাছে। ধীরাজকে কলকাতা যেতে হবে এক মাসের ছুটি নিয়ে। ছুটি না মিললে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে হলেও যেতে হবে। ধীরাজ সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা যাবেন। সিদ্ধান্তের কথা মাথিনকে জানানো হলো। মাথিন রাজি হলেন না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ধীরাজ এক সন্ধ্যায় টেকনাফ ছাড়ে পালিয়ে গেলেন। ধীরাজের এভাবে চলে যাওয়াকে প্রেমিকা মাথিন সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। মাথিনের মনে হলো, বাবার অসুখের কারণ দেখিয়ে ধীরাজ বরং বিয়ে করার ভয়েই পালিয়েছে। ধীরাজকে হারিয়ে মাথিন অন্নজল ত্যাগ করে হন শয্যাশায়ী।

 

জমিদার বাবা ওয়ান থিনসহ পরিবারের সদস্যরা শত চেষ্টা করেও মাথিনকে অন্নজল ছোঁয়াতে পারেননি। তার এককথা, ধীরাজকে চাই। প্রেমের এই বিচ্ছেদ এবং অতিকষ্টে একদিন মাথিন মারা যান। এ কারণে প্রেমের সাক্ষী মাথিনের কূপ দেখে এখনো হাজারো প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের ঐতিহাসিক প্রেমের কথা স্মরণ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে।

 

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায় সড়কপথে। কক্সবাজার থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে টেকনাফ যাওয়া যায়। বাস ভাড়া পড়বে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। আর মাইক্রোবাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়ে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে আর মাইক্রোবাস ছাড়ে শহরের কলাতলী এবং টেকনাফ বাইপাস মোড় থেকে।

টেকনাফ পৌঁছে হেঁটে অথবা রিকশায় টেকনাফ থানা যাবেন আর এই থানার ভেতরেই মাথিনের কূপ। এছাড়া কক্সবাজার থেকে যেতে চাইলে বাসে যেতে পারেন। কক্সবাজার থেকে অনেক গুলো বাস সার্ভিস আছে। তাছাড়া ভাড়ায় পেয়ে যাবেন জিপ গাড়ি।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?