কুতুবদিয়া দ্বীপ | Kutubdia Island 02/05/2021


PC:


আলোকচিত্র:Md. Alamgir Hossain

কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। ভ্রমণ তালিকার সবটুকুই ঘোরা শেষ হলে ঢু দিতে পারেন কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কুতুবদিয়ায় আছে দেখার মতো অনেক কিছু। নিভৃতে নিজের মত করে সময় কাটানোর জন্য কুতুবদিয়া আপনার জন্য একটি চমৎকার ভ্রমণ গন্তব্য।

 

দ্বীপের রাণী খ্যাত বৈচিত্র্যময় কুতুবদিয়ার আয়তন ২১৬ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের মূলভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে কুতুবদিয়ার অবস্থান। বেশ নির্জন এবং পর্যটকের আনাগোনা নেই বললেই চলে। মাঝেমধ্যে জেলেদের কর্মব্যস্ততা দেখা যায়। কোথাও কোথাও সৈকতের পাশে আছে ঝাউগাছের সারি। কুতুবদিয়া সৈকতের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট হল প্রচুর গাংচিল ঘুরে বেড়ায় সেখানে। নির্জনতার সুযোগে সৈকতের কোথাও কোথাও লাল কাঁকড়াদের দল ঘুরে বেড়ায় নির্ভয়ে। সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য কুতুবদিয়ার সৈকত আদর্শ জায়গা।

 

ধারণা করা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে সাগরের বুকে কুতুবদিয়া দ্বীপ জেগে উঠে। আর এই দ্বীপে মানুষের পদচারণা শুরু হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ‘কুতুবুদ্দীন’ নামে এক পরহেজগার ব্যক্তি এ দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে আরাকান থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা যখন এই দ্বীপে আসতে শুরু করে তখন কুতুবুদ্দীন এদের আশ্রয় প্রদান করেন। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে কুতুবুদ্দীনের নামানুসারে এ দ্বীপের না রাখা হয় ‘কুতুবুদ্দীনের দিয়া’ যা পরবর্তীতে ‘কুতুবদিয়া’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

 

বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কুতুবদিয়ায় অবস্থিত। প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সৈকতের দক্ষিণ প্রান্তে, আলী আকবরের ডেল এলাকায়।

 

বাতিঘর

বিট্রিশ আমলে সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন হেয়ারের তত্ত্বাবধানে ও ইঞ্জিনিয়ার জে এইচ টুগুডের নির্দেশনায় কুতুবদিয়ার বাতিঘরটি নির্মিত হয়। দক্ষিণ ধুরং ইউনিয়নের আলী ফকির ভেইলে পশ্চিম সমুদ্র উপকূলে নির্মিত এ বাতিঘর ১৮৯৭ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরানো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হওয়ায় এখনও ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ জেগে উঠতে দেখা যায়। পুরানো বাতিঘরের এলাকায় পরে যে বাতিঘর তৈরি করা হয়েছিল সেটিই এখন নাবিকদের পথ দেখায়। বড়ঘোপ বাজার থেকে সমুদ্র সৈকত ধরে উত্তর দিকে কিছু দূর গেলে বর্তমান বাতিঘরের অবস্থান। প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী এই বাতিঘর অনন্য এক নিদর্শন।

 

কুতুব আউলিয়ার দরবার

দ্বীপের ধুরং এলাকায় রয়েছে কুতুব আউলিয়ার দরবার শরীফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী। তিনি এখানেই জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে (৭ ফাল্গুন) হাজারও ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। বর্তমানে কুতুব শরীফ দরবারের দায়িত্বে আছেন তাঁরই পুত্র শাহজাদা শেখ ফরিদ।

 

লবণ চাষ

শীতে কুতুবদিয়ার জমিতে চাষ হয় লবণ। এ সময়ে সেখানে গেলে দেখা যাবে মাঠে মাঠে কৃষকদের লবণ চাষের ব্যস্ততা। দ্বীপের সর্বত্রই কম-বেশি লবণের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি লবণের মাঠ তাবলের চর, কৈয়ার বিল, আলী আকবরের ডেল-এ রয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে।

 

কিভাবে যাবেন?

চট্রগ্রাম থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপঃ  চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ড কিংবা নতুন ব্রিজের বাস স্ট্যান্ড থেকে চকরিয়ায়/কক্সবাজার গামী যে কোন বাসে করেই চকরিয়া যাওয়া যায়। তবে জে.বি. এক্সপ্রেস, এস আলম কিংবা সৌদিয়া ডাইরেক্ট বাসে যাওয়া ভালো। ১৫০-১৮০ টাকা বাস ভাড়ায় চকরিয়া যেতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই থেকে প্রায় তিন ঘন্টার মত। চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল সিএনজি করে জনপ্রতি ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় (রিজার্ভ ২৮০-৩২০ টাকা) মগনামা ঘাটে যেতে হবে। সময় লাগবে আনুমানিক ৪০-৫০ মিনিট। এছাড়া চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ থেকে সিএনজি দিয়ে জনপ্রতি ১৮০ টাকা ভাড়ায় ২-৩ ঘন্টা সময়ে যেতে পারবেন মগনামা ঘাট। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গা বাজার থেকে সকাল ৭ টায় জনপ্রতি ১০০ টাকায় ইঞ্জিন কাঠ বোটে সরাসরি কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ ঘাঠে যাওয়া যায়।

 

কক্সবাজার থেকে কুতুবদিয়াঃ কক্সবাজার থেকে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড হয়ে মগনামা ঘাটে যাওয়া যায় কিংবা কক্সবাজার থেকে মহেশখালি নৌপথে গিয়ে মহেশখালি থেকে সড়কপথে মগনামা ঘাট যাওয়া যায়।

 

চকরিয়া থেকে কুতুবদিয়াঃ চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল সিএনজি করে জনপ্রতি ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় (রিজার্ভ ২৮০-৩২০ টাকা) মগনামা ঘাটে যেতে হবে। সময় লাগবে আনুমানিক ৪০-৫০ মিনিট। মাগনামা ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে ১৫-২০ টাকা ভাড়ায় ২০ মিনিটে অথবা স্পিড বোটে ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় ৭-৮ মিনিটেই কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হয়ে পৌঁছে যাবেন কুতুবদিয়া দ্বীপে। মগনামা ঘাট থেকে স্পিড বোটে বড়ঘোপ ঘাট কিংবা দরবার ঘাটের যেকোনো এক ঘটে যাওয়া যায়। কুতুবদিয়া দ্বীপের ঘাট থেকে বড়ঘোপ বাজার যেতে ২০ থেকে ৩০ টাকা রিক্সা ভাড়া লাগবে।

 

কোথায় খাবেন?

খুব ভালো কোন রেস্টুরেন্ট না থাকলেও কুতুবদিয়া দ্বীপের বাজারের স্থানীয় হোটেল গুলোতে শুঁটকি, ভর্তা, নানা ধরণের মাছ ও মাংস দিয়ে উদর পুর্তি করতে পারবেন। বড়ঘোপ বাজারের “নিউ মদিনা” কিংবা “ক্যাফে আলম” তুলনামূলক ভালো খাবার পাওয়া যায়।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?