মহেশখালী দ্বীপ | Maheshkhali Island 02/05/2021


PC:


কক্সবাজার জেলা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৩৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ যার পশ্চিমে কুতুবদিয়া দ্বীপ ও বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চকোরিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলা, দক্ষিণে কক্সবাজার সদর ও বঙ্গোপসাগর এবং উত্তরে চকোরিয়া উপজেলা।

 

প্রাকৃতিক রূপের প্রাচুর্যে ভরা এ জায়গাটিতে রয়েছে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চমৎকার চমৎকার সব মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চারিদিকে বিস্তীর্ণ সুনীল সমুদ্রের দিগন্তজোড়া জলরাশি দেখা যায় কেবল মহেশখালী থেকেই। পাহাড়, দ্বীপ আর সাগরের মিলনস্থল এই দ্বীপের চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। দৃষ্টি সীমানায় শুধু সবুজের সমাহার। ঐতিহাসিকগণের মতে শিবের অপর নাম ‘মহেশ’ অনুসারে জায়গাটির নামকরণ। পর্তুগিজ পর্যটক সিজার ফ্রেডারিকের মতে ১৫৫৯ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়।

 

মহেশখালী কিছু কিছু জায়গার সমন্বয়ে খুব ছোট্ট পরিসরেই ঘোরা সম্ভব হয়। নিম্নে এর আকর্ষণগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

 

মহেশখালী বাজার:

মহেশখালী চ্যানেল পেরিয়ে জেটি ধরে সোজা সামান্য পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলা শহর। মাত্র তিন বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এ শহরটিতে দেশের অন্য দশটি উপজেলা শহরের মতোই। তেমন কোনো দর্শনীয় স্থান না থাকলেও শহরটি ঘুরে দেখতে পারেন।

 

বৌদ্ধ কেয়াং:

মহেশখালী জেটি থেকে বাজারে প্রবেশের আগেই সড়কের বাঁ পাশে মহেশখালী বড় বৌদ্ধ কেয়াং বা মন্দির। এর ভেতরে আছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির। বেশ কয়েকটি পিতলের বৌদ্ধ মূর্তির দেখা মিলবে এ কেয়াংয়ে। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ মূর্তি, মাথায় হাতে শায়িত বুদ্ধ এবং দণ্ডায়মান বুদ্ধ মূর্তি ইত্যাদি।

 

আদিনাথ মন্দির:

মহেশখালীর গোরখঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পায় ৮৫ মিটার উচ্চতায় মন্দিরটির অবস্থান। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ১০.৫০ মিটার, প্রস্থ ৯.৭৫ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার। মন্দিরটির আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরের অংশ সবচেয়ে পুরনো। আদিনাথ মন্দিরের পাশেই অষ্টভূজা নামে আরেকটি বিগ্রহের মূর্তি আছে। উত্তরের অংশের প্রথম ভাগে বর্গাকারের দুটি পূজাকক্ষে আদিনাথ বাণলিঙ্গ শিবমূর্তি এবং অষ্টভূজা দুর্গামূর্তি রয়েছে। সামনের দিকের প্রবেশপথটি ধনুকাকৃতির।

 

আদিনাথের মেলা:

বহুকাল ধরে আদিনাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে চলে আসছে আদিনাথের মেলা। ধারণা করা হয় মন্দিরটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ মেলার প্রচলন। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে অর্থাত্ শিব চতুর্দশী উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও ভারত, নেপাল, মায়ানমারসহ আরো অনেক দেশ থেকে হিন্দু তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের সমাগম হয় এ মেলা উপলক্ষে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের মেলা হলেও সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী এ আয়োজনে সব ধর্মের লোকজনের সার্বজনীন মেলায় পরিণত হয়।

কক্সবাজারের কস্তুরীঘাট থেকে স্পিড বোটে মহেশখালী যেতে সময় লাগে বিশ মিনিট। জনপ্রতি ভাড়া ৮০-১৫০ টাকা। এ ছাড়া ইঞ্জিন নৌকায় গেলে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। ভাড়া ৩০-৫০ টাকা। যারা সরাসরি আদিনাথ মন্দিরে যেতে চান কস্তুরীঘাটে থেকে তাদের যেতে হবে গোরখঘাটা।

 

সোনাদিয়া:

মহেশখালী উপজেলার অধীন ছোট্ট একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। প্রায় নয় বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি উপজেলার হোয়ানাক ইউনিয়নে অবস্থিত। মহেশখালী থেকে সোনাদিয়ার অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে সমুদ্র গর্ভে সোজা পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে সোনাদিয়া। এ দ্বীপের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহজেই মানুষের মন কাড়ে। একদল জীবন সংগ্রামী জেলেদের বসবাস এ দ্বীপে। আর এ কারণেই পুরো দ্বীপ জুড়ে চোখে পড়ে শুঁটকি উত্পাদনের দৃশ্যাবলী। শ্বাসমূলীয় বা ম্যানগ্রোভ বনেরও দেখা মিলবে সোনাদিয়ায়। এ ছাড়া নির্জন সমুদ্রসৈকত, তীরে তার ঝাউ বন। দূর দিগন্তে মিশে যাওয়া সাগরের নীল জল, কী নেই এখানে?  একটু নির্জন বলেই হয়তো লাজুক লাল টুকটুকে কাঁকড়াদের অভয়াশ্রম সোনাদিয়ার সাগর সৈকত। কোথাও কখনো কখনো লাল কাঁকড়ারা সৈকত রাঙিয়ে বিচরণে নামে। পর্যটকদের পদধ্বনি শুনে হুটোপুটি আবার গর্তে লুকোয়।

 

কিভাবে যাবেন?

কক্সজবাজার শহরের যেকোন জায়গা থেকে মহেশখালী যাবার জেটিতে (৬ নং ঘাট) চলে আসুন। তারপর লোকাল ট্রলার বা স্পীড বোটে ৭০-৮০ টাকা ভাড়ায় মহেশখালি আসবেন। চাইলে স্পিডবোট রিজার্ভ নিতে পারবেন। মহেশখালি এসে সবকিছু ঘুরে দেখতে এক বা দুজন হলে একটা রিক্সা (ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা) অথবা ৫-৭ জন হলে অটো/ইজিবাইক ভাড়া (৩০০-৩৫০ টাকা) করে নিবেন। তবে ভালো করে দরদাম করে নিবেন, না হয় ভোগান্তিতে পরতে পারেন।

আর অন্য পথে যেতে আপনাকে চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে চকরিয়া এসে বদরখালি হয়ে মহেশখালি আসতে হবে। এ পথে মহেশখালি আসতে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। চকরিয়া হয়ে যাবার পথে “মহেশখালী জেটি” চোঁখে পরবে।

 

কোথায় খাবেন?

অল্প দূরত্ব হওয়ায় মহেশখালী থেকে সহজেই ফিরে আসা যায়। আর তাই সাময়িক ক্ষুদা নিবারণের জন্য দ্বীপেই হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। কিংবা ফিরে এসে খেতে পারেন কক্সবাজারে। কক্সবাজারে সব ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছুর মত এখানে খাবারের দামও কম/বেশী হতে পারে। ভাত: ২০-৪০ টাকা, মিক্সড ভর্তা: ৭৫/১৫০/৩০০টাকা (৮-১০ আইটেম), লইট্যা ফ্রাই: ১০০-১২০টাকা (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা), কোরাল/ভেটকি: ১৫০ টাকা (প্রতি পিচ), গরু: ১৫০-২০০ টাকা (২ জন শেয়ার করতে পারবেন), রপচাঁদা ফ্রাই/রান্না: ৩০০-৪০০ টাকা (বড়, ২জন খাওয়ার মত), ডাল: ৩০-৬০ টাকা। এছাড়াও লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন হান্ডি রেস্তারা থেকে ২০০-২৫০ টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরাণী চেখে দেখতে পারেন। আর কেওএফসি তো আছেই।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?