বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড | Bangabandhu Island 17/01/2022


PC:


খুলনা জেলার দুবলার চর থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গপোসাগরের মধ্যে জেগে ওঠা একটি চর, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড (Bangabandhu Island)। এটি মংলা বন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। লম্বায় প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ২ কিলোমিটার আর আয়তন প্রায় ৭.৮৪ বর্গ কিলোমিটার দ্বীপটি ত্রিকোণাকৃতির আর এর চারিদিকেই সমুদ্র সৈকত রয়েছে। তবে দ্বীপের আয়তন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দ্বীপের সমুদ্র সৈকত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রস্থ।

 

নব্বই দশকের শুরুর দিকে (১৯৯২ সালে) রামপালের জেলে মালেক ফরাজি আরও দুই সঙ্গীসহ হিরণপয়েন্টের দক্ষিণে বঙ্গপোসাগরে নতুন জেগে উঠা একটি দ্বীপ আবিষ্কার করেন। দ্বীপটির প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পুটনির দ্বীপ। দ্বীপটি প্রথম অবস্থায় জেলেদের নিকট পুটনির চর নামে পরিচিতি লাভ করে। জেলে মালেক ফরাজি ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। ২০০৪ সালে তিনি দ্বীপটিতে ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বীপটির চারপাশে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল, নানা প্রজাতির পাখি, সবুজ-শ্যামল বনাঞ্চল, সাঁতারের উপযোগী স্থান, সী বিচ ও জীববৈচিত্র্য রয়েছে, যা প্রর্যটনশিল্পের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘ এ সৈকতজুড়ে কচ্ছপ, চার প্রজাতির কাঁকড়া, ষোলো প্রজাতির মোলাঙ্কা (শামুক-ঝিনুক), আট প্রজাতির প্লাঙ্কটন, ছয় প্রজাতির বেন্থিক এনেলিডা, দুই প্রজাতির বার্নাকেল ও এক প্রজাতির এসিডিয়ানর, বিভিন্ন প্রজাতির ফড়িং, প্রজাপতি, মৌমাছির দেখা মিলেছে। আবার এখানে মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি চামুচঠুঁটো বাটান ও ইউরেশীয় ঝিনুকখোরের দেখা মিলে। ভাগ্য ভাল হলে চরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে দেখা মিলবে ইরাবতী ডলফিনের। গত ২৫ বছরে দ্বীপের পরিধি অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এ সৈকতের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, এখানে সহজেই ভয়হীনভাবে সাঁতার কাটা যায়।

 

এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ লাল কাঁকড়া। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন লাল রঙের সৈকত। এ সৈকতে আমরা বিশাল জঙ্গলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কোন সরীসৃপ পাওয়া যায়নি। সরীসৃপ বাদে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে পুরো জঙ্গলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এখনও গবেষণা করা যায়নি। যতটুকু অনুসন্ধান হয়েছে তাতে বাঘের কোন চিহ্ন না পেলেও হরিণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অন্যান্য সাগর সৈকতের তুলনায় এ সৈকতের সৌন্দর্য কোন অংশে কম নয়। এছাড়াও এ দ্বীপের আশপাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোন মানব বসতি নেই, যার কারণে দ্বীপটি অনেকটাই সুনসান। এমনকি অনেকেই জানে না যে, এ দেশে এত সুন্দর একটি দ্বীপ রয়েছে।

 

কিভাবে যাবেন?

সুন্দরবন কেন্দ্রিক স্পটগুলো অনেক রেঞ্জ দিয়ে যাওয়া যায়। আপনি চাইলে সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে যেতে পারেন কিংবা মংলা হয়ে যেতে পারেন।

 

মংলা থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড

ঢাকার সায়দাবাদ থেকে মংলাগামী সরাসরি বেস কিছু বাস সার্ভিস চালু আছে। এক্ষেত্রে সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাসে মংলা পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া পড়বে। চাইলে কেউ বাগেরহাট যেয়ে বাগেরহাট থেকে মংলা যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ঢাকার গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মেঘনা পরিবহন, পর্যটক পরিবহন, সাকুরা পরিবহন, সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি বাসে সহজেই বাগেরহাট যেতে পারবেন। এরপর মংলা বন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড যাওয়ার জন্যে ট্রলার ভাড়া করতে পারবেন। অথবা মংলা থেকে হিরণ পয়েন্ট যেয়ে ওখান থেকে ট্রলার নিতে পারেন।

 

সাতক্ষীরা থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড

ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরগামী যেকোন বাসে শ্যামনগর নামবেন। এরপর শ্যামনগর থেকে মুন্সী গঞ্জগামী বাসে উঠলে পথে পরবে বংশীপুর বাজার। বাজারের বামদিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মুন্সীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড। স্ট্যান্ডে নেমে অটোতে বামদিকের রাস্তা ধরে গেলে সামনে কলবাড়ি বাজার। বাজারের বামের রাস্তায় আরো তিন কি.মি. গেলে নীল ডুমুর বাজার। বাজারের ডানে বোট ঘাট। ঘাট হতে রিজার্ভ বোটে ৮/১০ ঘন্টায় হিরণ পয়েন্ট। হিরণ পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে ২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।

 

কোথায় থাকবেন?

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড থেকে দিনে ফিরে মংলায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর এ ৬০০ থেকে ২০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। এছাড়াও মংলা শহরে সাধারণ মানের হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৮০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

 

যদি সুন্দরবনে রাত কাটাতে চান তবে ট্যুরিস্ট ভেসেলে রাত কাটাতে পারবেন। এছাড়া হিরণপয়েন্টের নীলকমল, টাইগার পয়েন্টের কচিখালী এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। নীলকমল ও কচিখালীতে কক্ষ প্রতি ৩০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তবে কচিখালীতে ৪ কক্ষ ভাড়া নিলে ১০,০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। কটকা রেস্ট হাউজে রুম নিতে লাগে ২০০০ টাকা। বিদেশি ভ্রমণকারীদের এই সব রেস্ট হাউজে রাত কাটাতে রুম প্রতি গুনতে হবে ৫০০০ টাকা।

You might like

Get the mobile app!

Our app has all your booking needs covered: Secure payment channels, easy 4-step booking process, and sleek user designs. What more could you ask for?